বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে দূষণমুক্ত রাখতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন একদল স্বেচ্ছাসেবী। সমুদ্র সৈকতে থাকা বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক বোতল ও চিপস-বিস্কুটের প্যাকেট থেকে মাছ এবং কচ্ছপ তৈরি করেছেন তারা। সেই সঙ্গে দ্বীপের পশ্চিম সৈকতের বালুচরে তৈরি এ দুটি প্রাণির অবয়বের পাশে রাখা নির্দেশিকায় সচেতনতার জন্য প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে হওয়া দূষণের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ফিশারিজ, অ্যাকুয়াকালচার,মেরিন সায়েন্স অনুষদ ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোর মিলে কাজটি করেছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী এতে সহযোগিতা করেছেন।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সেন্টমার্টিনে আসা পর্যটকেরা এ মাছ ও কচ্ছপ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন।
২০১১ সাল থেকে সেন্টমার্টিনের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এবং তার সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা করছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব। তিনি বলেন, “প্রথমে জনসচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ করতে চেয়েছিলাম। পরে চিন্তা করলাম পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা লিফলেটের লেখা পড়ে কাগজগুলো আবার সৈকতে ফেলে দেবে, পরে তা আবার সাগরে গিয়ে মিশবে। তাই পরিবেশ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পরিত্যক্ত আবর্জনা দিয়েই কোরাল মাছ ও একটি কচ্ছপের ভাস্কর্য তৈরি করি।”
এ মেরিন বায়োলজিস্ট বলেন, “গবেষণার কাজ করতে গিয়ে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করার কিছু কারণ লক্ষ্য করেছি। সমুদ্র সৈকতের যেখানে সেখানে ফেলা প্লাস্টিকের পণ্য ও অন্যান্য আবর্জনা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য নষ্ট করার জন্য দায়ী।”
ড. কাজী আহসান হাবীব আরও বলেন, “সমুদ্রে স্কুবা করার সময় আমার পানির নিচে অনেক প্লাস্টিক, প্লাস্টিকের বোতল, টিন এবং টিনের পাত্র পড়ে থাকতে দেখি। তাছাড়া ফেলে দেওয়া জাল সৈকতের কোরালের গায়ে জমা হয়। ফলে ব্লিচিংয়ের কারণে কোরালের মৃত্যু হয়।”
তিনি জানান, সেন্টমার্টিনকে পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচাতে শেকৃবি একটি গবেষণা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। গবেষণায় সৈকত ও সাগরের তলদেশে প্লাস্টিকের ধরন ও পরিমাণ নিরূপণ করা হবে। পরে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের সম্ভাব্য উপায় সম্বলিত একটি রূপরেখা ও সুপারিশমালা তৈরি করে সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
গবেষণা প্রসঙ্গে কেজিএফের নির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “নিজের গড় আয়ুষ্কালে একজন মানুষ নানা উপায়ে কমপক্ষে ১৮ কেজি প্লাস্টিক গ্রহণ করেন। তাই গবেষণার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতেই এ প্রচেষ্টা।”
উল্লেখ্য, সমুদ্র সম্পদের টেকসই আহরণের লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগরের বুকে থাকা বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে এ মাসের শুরুতে “সামুদ্রিক সুরক্ষিত অঞ্চল” বা “মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া” হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বলেছে, বৈশ্বিকভাবে হুমকির মুখে থাকা প্রবাল, গোলাপী ডলফিন, হাঙ্গর, রে মাছ, সামুদ্রিক কাছিম, সামুদ্রিক পাখি, সামুদ্রিক ঘাস, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এবং এদের আবাসস্থল সংরক্ষণ; সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই আহরণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকার মানোন্নয়ন; ব্লু-ইকোনমি সমৃদ্ধকরণ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-১৪) অর্জনের লক্ষ্যে এই সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।