উপচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। কারো অনুরোধেই তারা সরে দাঁড়াননি অনশন থেকে। শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধ রাখলেন আন্দোলনরতরা। টানা সাতদিনের অনশন ভাঙলেন শিক্ষকের কথায়।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে সস্ত্রীক ঢাকা থেকে সিলেটের পথে বেরিয়ে পড়েন তিনি। শেষরাতে সোজা গিয়ে উপস্থিত হন শিক্ষার্থীদের পাশে। শীতে জবুথবু শিক্ষার্থীরা তাকে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন। কান্নায় ভেঙেন পড়েন তিনিও। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। শেষে আন্দোলন অব্যাহত রাখার শর্তে অনশন থেকে সরে আসে দাবি আদায়ে অনঢ় শিক্ষার্থীরা।
ড. ইকবালের অনুরোধে বুধবার সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে পানি পান করে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা। এসময় জাফর ইকবালের সঙ্গে তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক উপস্থিতি ছিলেন।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে গত ১৯ জানুয়ারি দুপুর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।
আজ ভোর চারটায় অনশনস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে অনশন ভাঙার অনুরোধ জানান জাফর ইকবাল। তিনি অনশনস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের কথা শোনেন। তার কথায় শিক্ষার্থীরা সকালে অনশন ভাঙবেন বলে আশ্বাস দেন। এসময় জাফর ইকবালের স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকও তার সঙ্গে ছিলেন ।
ভোরে ড. জাফর ইকবাল দুই ঘণ্টার বেশি সময় অশনরত শিক্ষার্থীদের কথা শোনেন। এসময় পুলিশের হামলার বর্ণনা দেন শিক্ষার্থীরা। এ ধরনের হামলার ঘটনাকে খুবই নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করেন জাফর ইকবাল। তিনি শিক্ষার্থীদের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেন। অনশন ভাঙতে অনুরোধ করেন। বলেন, শিক্ষার্থীদের জীবন একজন ব্যক্তির চেয়ে বেশি মূল্যবান। একজন মানুষের জন্য তোমরা জীবন দিয়ে দিবা এটা মানা যায় না। সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর বিষয়ে কথা হয়েছে। যেহেতু মামলা হয়ে গেছে, আদালতে তোলা হবে। তারা কথা দিয়েছেন ছাত্রদের জামিন দেয়া হবে।
আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় সাবেক শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, ‘যারা আন্দোলনকারীদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা খুবই নিন্দনীয়। ছাত্রদের সাহায্য করে যদি অ্যারেস্ট হতে হয়, তাহলে আমি হব। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর একটা স্মারকগ্রন্থে লেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে ১০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়েছে। আমি এই সম্মানীর টাকাটা আন্দোলনের ফান্ডে দিচ্ছি। এ টাকা দিয়ে তোমাদের তেমন কিছু হবে না জানি। কিন্তু আমি দেখতে চাই সিআইডি আমাকে অ্যারেস্ট করে কি না।’
শিক্ষার্থীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে জাফর ইকবাল বলেন, এখানে শিক্ষার্থীরা সবাই শীতে কষ্ট করছে। তাদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু তাদের জন্য কোনো মেডিকেল টিম নেই। যারা তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করতো তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।