শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রবিবার (২৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় শিক্ষার্থীদের অনশনের ১০০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটেনি। এমনকি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল আলোচনায়ও চলমান সঙ্কটের কোনো সুরাহা হয়নি।
রবিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে তার বাসভবনের গেটে ব্যারিকেড দেন আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা।
এর আগে শাবির ২৪ শিক্ষার্থী বুধবার বিকেল ৩টা থেকে অনশন শুরু করেন। রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় তাদের অনশনের ১০০ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়। এ সময়ের মধ্যে ভিসি পদত্যাগ না করায় রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ বের করেন শাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগ দাবিতে নানামুখী শ্লোগান দেন। মিছিলটি অনশনস্থল থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন ভিসির বাসভবনের সামনে। রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে তারা ভিসির বাসভবনের ভেতরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না।
তবে, প্রয়োজনীয় কাজে ভেতরে যেতে পারছেন সাংবাদিকরা। শর্ত হলো, ভেতরে কী হচ্ছে সে বিষয়ে আন্দোলনকারীদের জানাতে হবে সাংবাদিকদের। রবিবার বিকেলে আন্দোলনকারীদের একজন মুখপাত্র এ তথ্য জানান। তিনি জানান, শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে ভিসির পদত্যাগের কোনো ঘোষণা না আসায় নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২৩ জন শিক্ষার্থীর অনশনের এরই মধ্যে ৯৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। আরও চারজন শনিবার রাত থেকে অনশনে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অনশনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থা বর্তমানে খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এদিকে, রবিবার বেলা আড়াইটায় শুরু হয় শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির বৈঠক। বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল। বৈঠকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাস ও সেক্রেটারি মুহিবুল আলমসহ সাধারণ শিক্ষকরা অংশ নিয়েছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এক ঘণ্টা কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। শনিবার দিবাগত রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত শাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন মন্ত্রী।
এ সময় আন্দোলনকারীরা মন্ত্রীর কাছে সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পর্যায়ক্রমে বিদ্যমান সকল সমস্যার সমাধান করা হবে।” মন্ত্রী তাদেরকে অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। অবশ্য, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রবিবার ফের মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে অনশন প্রত্যাহারের বিষয়ে জানাবে বলে জানিয়েছেন।
এর আগে, শনিবার রাত ২টা ৩০ মিনিটে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী তাদেরকে অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি (মন্ত্রী) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এও বলেছেন, তাদের জীবন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য তাদের অনশন ভাঙার অনুরোধ করেন তিনি।”
নাদেল আরও বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, এ আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের আইনগত কিংবা অ্যাকাডেমিক কোনো সমস্যা হবে না। মন্ত্রী অনশন প্রত্যাহার করে তাদেরকে তাদের প্রস্তাবনা লিখিত আকারে দেওয়া পরামর্শ দেন। জবাবে শিক্ষার্থীরা অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রীকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।”
“শিক্ষার্থীরা মন্ত্রীকে জানায়, তারা আলোচনা করতে আগ্রহী। তবে, অনশন ভাঙবে না।”
এর আগে শনিবার রাতে ফের আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তার সঙ্গে সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভ উপস্থিত ছিলেন।
অনশনকারী শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব ও কাজল দাশ ছাড়াও আন্দোলনকারী ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শাবির আইআইসিটি ভবনের ১২৯ নম্বর কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, বৈঠক চলাকালে এবং বৈঠক শেষ হবার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে। রাত আড়াইটায় ভিসির পদত্যাগ দাবিতে তারা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন।
এর আগে শুক্রবার বেলা ৩টায় শাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের ফোনে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। যদিও মন্ত্রীর সঙ্গে পরবর্তীতে তাদের এ আলোচনা ভেস্তে যায়। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার দ্বার এখনো খোলা। এরপর রাতে মন্ত্রীর সঙ্গে তাদের ভার্চুয়াল আলোচনা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা নাদেলের মাধ্যমে রবিবার ফের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভিডিও কনফারেন্স হওয়ার কথা ছিল বলে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়। কিন্তু, শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থানের কারণে সেটা হয়নি।