শেরপুরের শ্রীবরদীতে হাতি হত্যা মামলার দুই আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষে বন মামলার পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক। ওই দুই আসামি হলেন- উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের মালাকোচা গ্রামের মো. সমেজ উদ্দিন (৪৫) ও শাহজালাল (৪৪)।
রবিবার (২ জানুয়ারি) শেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও বন আদালতের বিচারক মো. শরীফুল ইসলাম খান তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে হাতি হত্যা মামলার এই দুই আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে বন মামলার পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, “গত বছরের ৯ নভেম্বর শ্রীবরদী উপজেলার মালাকোচা গ্রামের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে জিআই তারে বিদ্যুৎ সংযোগে জড়িয়ে একটি হাতির মৃত্যু হয়। বন বিভাগের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মালাকোচা গ্রামের মো. আমির উদ্দিন, সমেজ উদ্দিন, মো. আশরাফুল ও শাহজালালের সবজি বাগানের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া বৈদ্যুতিক জিআই তারের সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতিটি মারা যায়। পরে ১১ নভেম্বর ওই চারজনের নামে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ আইনে হাতি হত্যার মামলা দায়ের শ্রীবরদী রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম। ওই মামলার আসামি এই দুই আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও অপর দুই আসামি পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।”
শ্রীবরদী রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, “অবৈধভাবে বন দখল করে ফসলি জমি তৈরি করছে পাহাড়িরা। এছাড়াও বনের গাছ কেটে বিক্রি করে বন ধ্বংসও করছে তারা। খাবারের সন্ধানে হাতি লোকালয়ে চলে আসছে। হাতি ঠেকাতে পাহাড়িরা বসতভিটা ও সবজি খেতের চারপাশে জিআই তার দিয়ে ঘিরে তাতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়। সেই তারে জড়িয়ে মারা যায় বন্যহাতি। এ ঘটনায় এবারই প্রথম শ্রীবরদী থানায় মামলা করা হয়েছে।”
বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, ২০১৬ সালে বন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) জরিপে সারাদেশে ২৬৮টি বন্যহাতি পাওয়া গিয়েছে। আইইউসিএন এর রেড লিস্ট-২০১৫ গ্রন্থে প্রাণীটিকে মহাবিপন্ন (Critically Endangered) বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
তিনি বলেন, “আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি হাতি হত্যা করলে এটা জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ বছর ও সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।”