কোথাও কেউ নেই
বিছানাটা কিছুতেই আর পরিপাটি থাকছে না!
চাদরের এ মাথা টেনে সোজা করতেই ও মাথা
ঝুলে যাচ্ছে!
জলের বোতলটা বালিশের পাশে দিব্বি নিজের
জায়গা করে নিয়েছে
একগাদা তেতো ওষুধের পাতা এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
এরই মাঝে নাদুসনুদুস চেহারার বিশ্রী অসুখটা জামাই আদরে জেঁকে বসেছে
তুমিও কারণে অকারণে ঘোরের মাঝে এসে
বড্ড জ্বালাতন করো!
একের পর এক এম্বুলেন্স
নিউরনে একরাশ আতংক ছড়িয়ে
তীব্র গতিতে ছুটে যায়।
আমার মাথা ঝিমঝিম করে
খুব নীরবে কোথাও একটা কাঠগোলাপ ঝরে গেলো,
অথচ এই যাপন বা প্রস্থানে কোথাও আমি নেই।
ছিন্নভিন্ন কিছু পংক্তি
আকাশ ছুঁতে চাইবে ভেবে
সেই কবেই তোমাদের ধর্মান্ধ সমাজ
পাখিটির ডানা ছেঁটে খাঁচায় পুরেছে!
প্রদীপের শিখা বাড়তে দিতে নেই
স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে যাবে চারিদিকে
সেই ভয়ে সলতেটাই মুড়িয়ে-গুটিয়ে দাও!
হোমার জন্মান্ধ বটে
তবুও তাঁর চোখে ছিল অযুত আলোক,
কত বুদ্ধিদীপ্ত চোখ খেঁজুর কাঁটায় তোমরা
খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে অন্ধ করে দাও প্রতিদিন!
ভ্রম
আগে কত কী ভাবতাম, বিশ্বাসও করতাম
তুমি আমারই মতো
অগোছালো – এলোমেলো
তোমার শব্দভাণ্ডার ভালোবাসা আর
ক্ষমায় পরিপূর্ণ — দারুণ ঐশ্বর্য্যময়
ঘৃণা আর সন্দেহের পাপশব্দ
তোমার ঝুলিতে নেই
সে তুমিই কী বিস্ময়কর ক্রোধে এক নিমিষেই
পুড়িয়ে ফেলতে পারো প্রেমের কবিতা সব
মুছে ফেল মুগ্ধতার কাজল চোখ থেকে
বুক থেকে কী নির্মম উপড়ে ফেল
ভালোবাসারূপ চারাগাছ,
মহিরুহ হবার সমূহ সম্ভার।
অরুণাচল
সে এক নিভৃতচারী গুহাবাসীর গল্প,
পাথরে পাথর ঘষে জ্বেলে নেয়
যেটুকু আলো প্রয়োজন তার
বাকিটা সময় পুষে রাখে দুর্বোধ্য অন্ধকার
আরণ্যক জীবনে ফেরা হয় না আর
যেখানে থরেথরে সাজানো বিপুলা
প্রকৃতির অপার সম্ভার!
পাতায় পাতায় লেখা হয় জীবনের গল্প;
একমুঠো রোদ আনে স্বপ্ন অনিবার
সবুজের ফাঁকেফাঁকে আলোর ঝিলিক,
দেখা হয় না দ্বিপ্রহরে প্রলম্বিত ছায়া তার
জানা হয় না কখনো।
কৃষ্ণবিবরের জাতিস্মর
অনাহূত স্বপ্নেরা কেন ফিরে আসে
বারবার
আমি তো জন্মান্ধ হতেই চেয়েছি
বহুবার
ভ্রূণেদের কেন অধিকার নেই নিজস্ব
মতামত জানাবার!
কৃষ্ণবিবরে তুমিও কি ডুবেছো
জাতিস্মর?
কেন নিত্য গরল গেলো – বিনা প্রতিবাদে
আজও এক টুকরো সংশয় গেঁথে আছে
বিপ্রতীপ মনের কোণে
শুধু ঐ দেয়ালের আরশিটা জানে,
প্রচন্ড অভিমানে কতশত টুকরোয়
নিজেকে ভেঙেছি কতবার
ভুল সমীকরণের আত্ম দহনে!
নষ্টালজিক
অবিরাম ঝরে চলেছে বৃষ্টি
তেঁতুল পাতার মতো নিবিড় ঝিরিঝিরি
কখনও সঘন তুমুল মাতাল বর্ষণ
এলোমেলো বিক্ষিপ্ত অন্তর্জাল আলাপন
জানালায় শুষ্ক দুহাত বাড়িয়ে দিতেই
হেসে গড়িয়ে পড়ে দুরন্ত হিম বালিকারা
টুপটাপ জলকণার চুম্বনে ভরে করপুট
ভিজে যায় অলিন্দ – আর্দ্র চিবুক
তখন দৃষ্টি হারায় বিরান দেবদারু বনে
অথবা অন্য কোথাও!
নদী কথা
ঠোঁটের কিনারে রাখা ছিল এক
নদী
ঢেউ ভেঙে ভেঙে আরও কাছে এলে
যদি
বিস্তৃত পাড় লিখেছিল সেই কথা
অনুভবে মেশে রাত্রির নীরবতা
জলের অতলে জল খোঁজে বুঝি
কেউ!
নদীর বেদনা বুকে ধরে রাখে ঢেউ
নাবিক জেনেছে স্রোতের দীর্ঘশ্বাস
মহাকাল বলে সব নদী ইতিহাস!
অভিলাষ
হিম অন্ধকারে মৃত্যু-উপত্যকায় দাঁড়িয়ে
গুটিকয়েক সাহসী নাবিক
বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলে
এক টুকরো আলো পুঁতে দিতে চেয়েছে
হার-না-মানা প্রত্যয়ে
তাদের কাছেই জেনেছি,
ধানফুল শিশুদের এভাবেই আলোর পাঠ
শেখাতে হয়
কাঁধে তুলে নিতে হয় বিষব্যাধির জোয়াল
যারা চলে গেলো তড়িঘড়ি অন্যলোকে —
অন্য আলোর খোঁজে দূর-দ্বীপান্তরে,
আমাদের শূন্যতাগুলো
রুপোর কৌটোয় ভরে
চলো রেখে আসি চুপকথাদের।