নাটোরের বাজার ছয়লাব ভারতীয় বিভিন্ন অনুমোদনহীন অবৈধ কসমেটিকসে। নামিদামি ব্র্যান্ডের লোগো নকল করে প্রসাধনী তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে বহু বছর ধরেই। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই অবৈধ ব্যবসাকে যেন ‘ঐতিহ্য’ হিসেবেই নিয়েছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।
উচ্চ দামে এসব অনুমোদনহীন অবৈধ কসমেটিকস কিনছেন ক্রেতারা। অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় প্রসাধণী পণ্য, যেগুলো অনুমোদিত আমদানিকৃত সেগুলো পণ্য বাদ দিয়ে অনুমোদনহীন চোরাচালানীদের হাত ধরে চোরাই পথে আসা অবৈধ কসমেটিকস কেনাতে উৎসাহিত করছেন দোকানীরা।
তাছাড়া স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রশাসন এসব বিষয়ে কোন নজর দেয়না বলে ভারতীয় পণ্যের আড়ালে চলছে নকল কসমেটিকস এরও রমরমা ব্যাবসা। আর তাই ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনাসহ দ্রুত ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।
সরোজামিনে নাটোরের উত্তরা প্লাজা বা উত্তরা সুপার মার্কেটের ভাইবোন স্টোর এ গিয়ে দেখা মেলে এর সত্যতা। ভারতীয় প্রতিটি আমদানিতৃত পণ্যের পাশাপশি চোরাই পথে চোরাচালাণীদের সহায়তায় সরাসরি ভারত থেকে অবৈধ পথে নিয়ে আসা শুলকবিহীন অবৈধ কসমেটিকস বিক্রি করছেন তারা।
দাম হাঁকছেন প্রতিটি পণ্যে আমদানীকৃত পণ্যের চেয়ে সর্বনিন্ম ৪০ টাকা থেকে সর্বচ্চো ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশী। যদিও পণ্যের গুনগত মান ও নকল কিনা তা যাচাই করে দেখার সুযোগ নেই। নবনিতা নামে এক ক্রেতা জানালেন, ভারতীয় ফেয়র এন্ড লাভলীর ফেস ওয়াস কিনেছেন তিনি উত্তরা প্লাজার মেসার্স ভাইবোন স্টোরে থেকে।
যেখানে বাংলাদেশী ফেয়র এন্ড লাভলীর ফেস ওয়াস এর দাম ১৪০ টাকা সেখানে ভারতীয় ফেয়র এন্ড লাভলীর ফেস ওয়াসটি কিনেছেন ১৯০ টাকা দিয়ে। তবে এই পণ্যটি অনুমোদনহীন অবৈধ কসমেটিকস তাছাড়া এটি নকল হতে পারে তাহলে এমন পল্য কিনছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জানান- দোকনীকে বিশ্বাস করে কিনেছেন তিনি।
সরোজমিনে একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায় আছির ব্রাদার্সসহ অন্যান্য দোকানে। দেদারছে বিক্রি হচ্ছে চোরাচালাণীদের সহায়তায় ভারতীয় অনুমোদনহীন অবৈধ চোরাই পথে আসা কসমেটিকস। পাশাপশি নকল সব নিন্ম মানের প্রসাধণ সামগ্রী।
নাটোরের উত্তরা সুপার মার্কেটে, এই সমস্ত নিম্নমানের কসমেটিকস খুচরো বিক্রি করা হলেও, অভিযোগ রয়েছে কমলা সুপার মার্কেটে এই সমস্ত নকল প্রসাধনী পাইকারি বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে অনেক ব্যবসায়ী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা জানান, এরকম ভারতীয় পণ্য ব্যাবহার করে তার মুখে মেছতা পরার মতো দাগ হয়েছে। বিভিন্ন চিকিৎসা করেও তার কোন ফল পাচ্ছেন না। একটি পণ্যে কাজ না হলে চলে আবার অন্য অপর আর একটি কসমেটিকসএর ব্যবহার।
সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে দাম। তাছাড়া বিদেশী পণ্য এর নাম করে ক্রেতাদের গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে উচ্চ মূল্যে নকল প্রসাধনী। তাই এসব অনিয়ম রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানান তিনি।
এদিকে নিউজ প্রচার করার বিষয় ও সাংবাদিক দেখে এক দোকনী বলেন আপনেরা রিপোর্ট করবেন তাহলে আমাদের সুবিধাই হবে আমরা দাম বারতি করে দিবো। আর খরিদ্দারেরা তো বিদেশী কসমেটিক বলতে পাগোল তা যত নকল আর খারাপই হোক।
এ বিষয়ে চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডা:আব্দুস সামাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘অনুমোদনহীন, নকল লেভেলযুক্ত ও খোলাবাজার থেকে নেয়া অনিরাপদ কাঁচামালের সঙ্গে অ্যাসিড ও অন্যান্য কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি করা হয় ত্বক ফর্সা করার নকল ক্রিম।
অনিরাপদ পরিবেশে অনুমোদহীন স্কিন ক্রিম ও নকল প্রসাধনীগুলোয় ইচ্ছামতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়্। এসব রাসায়নিক বেশিমাত্রায় প্রয়োগের ফলে মানবদেহে ক্যানসার, অ্যালার্জি, ত্বকের প্রদাহ, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। আর শিশুদের জন্য এসব প্রসাধনীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আরও বেশি মারাত্মক।’
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর এর এডি মেহেদী হাসান জানান, ‘আজও বড়াইগ্রামে একটি অভিযান চালিয়ে জরিমনা করা হয়েছে। আপনারা জানেন একটি অভিযান চালাতে গেলে পুলিশ সহ অনান্য বিয়য়ের প্রয়োজন তবে দ্রুততম সময়ে এসব স্থানেও অভিযান চালানো হবে’ বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘বাজার নিয়ন্ত্রন ও মনিটরিং নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই অভিযান চালানো হবে।’