বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে তিন দিনের ছুটির ফলে বাংলাদেশের পর্যটনে যেন প্রাণ ফিরেছে। ঘুরে বেড়াতে যান্ত্রিক শহর ছেড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এছাড়া এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ভ্রমণপ্রেমীদের ঘোরাঘুরি বেড়েছে। কক্সবাজার, সিলেট, কুয়াকাটা, রাঙামাটি, বান্দরবানসহ দেশের জনপ্রিয় সব পর্যটন গন্তব্যে এখন উপচেপড়া ভিড়। অতিথিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট। বহুদিন পর পর্যটক সমাগম হওয়ায় আনন্দিত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশে পর্যটকদের প্রথম পছন্দ বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। ছুটিতে এখানেই সবচেয়ে বেশি মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। কক্সবাজারে বেশিরভাগ হোটেল-মোটেলের কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। তাই থাকার জায়গা খুঁজতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে অনেককে। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতিতে নিরাপত্তায় নজরদারি বাড়িয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
দেশ-বিদেশের হাজারও পর্যটকের পদচারণায় মুখর পটুয়াখালীর ‘সাগরকন্যা’ কুয়াকাটা। লেম্বুর চর, ঝাউবাগান, গঙ্গামতির লেক, কাউয়ার চর, মিশ্রিপাড়া, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, রাখাইন তাঁতপল্লী এবং শুঁটকী পল্লীতে তাদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। কুয়াকাটার দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকত জুড়ে এখন হৈ-হুল্লোড়। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক ব্যবহারে উদাসীন বেশিরভাগ পর্যটক।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, কুয়াকাটার ৯৫ শতাংশ হোটেল-মোটেলে এখন অতিথিদের কলরব। রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক সমাগমের ফলে আনন্দিত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা থেকে বেড়াতে যাওয়া পর্যটক সবুজ মিয়া বলেন, ‘তিন দিনের সরকারি ছুটি পেয়েছি। তাই পরিবার নিয়ে কুয়াকাটায় বেড়াতে এসেছি। বাচ্চাদের নিয়ে সৈকতে গাঁ ভাসিয়ে সাঁতার কেটেছি। নির্মল পরিবেশ পেয়ে ওরা বেশ আনন্দ করছে।’
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনুর দাবি, আজ (১৫ ডিসেম্বর) বছরের সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তার মন্তব্য, ‘করোনার বিস্তার রোধে কুয়াকাটায় অনেকদিন পর্যটকরা আসেনি। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। তবে এমন জমজমাট অবস্থা অব্যাহত থাকলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।’
সিলেটের অধিকাংশ হোটেলে কোনও কক্ষ খালি নেই। সর্বত্র পর্যটকদের বিচরণ। তাদের আনাগোনায় যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক পুলিশকে বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে।
প্রাকৃতিক নিসর্গে ঘেরা রাঙামাটিতেও জমজমাট চিত্র। সব হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস পরিপূর্ণ। জেলার আকর্ষণীয় স্পট ঝুলন্ত সেতু, সুবলং ঝরনা, সাজেক ভ্যালি, পলওয়েল পার্ক ও হ্রদে পর্যটকদের ভিড় লক্ষণীয়।
পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, তিন দিনের ছুটি পাওয়ায় মানুষ বেড়াতে বিভিন্ন জেলায় গেছে। করোনা-ওমিক্রনের কারণে অন্য দেশে যাওয়া ঝক্কির বলে দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণের হার বেড়েছে। বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকাল থেকে বাস-ট্রেনে হাজারও মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। তাদের পদচারণায় গতি ফিরছে দেশের পর্যটনে। করোনা মহামারিতে পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় দেশি ট্যুর অপারেটরদের হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। অভ্যন্তরীণ পর্যটনের মাধ্যমে কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ পর্যটনই এখন ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার অন্যতম মাধ্যম। ভ্রমণপ্রেমীরা দেশেই ঘুরে বেড়িয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন, ফলে পর্যটন খাত গতিশীল হচ্ছে। মহামারিতে অনেকে বেকার হয়ে পড়েছিল, তারা আবারও কাজে ফিরতে পারছে।’