নারীদের নিয়ে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ডা. মুরাদ হাসান। অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকেও। সংসদ সংদস্য পদ থাকবে কি না তা নিয়ে হয়েছে রিট। সব হারিয়ে দিশেহারা সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এবার দেশ ছাড়ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতেই কানাডায় উদ্দেশে আলোচিত এই সংসদ সদস্য উড়াল দিচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে।
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহীকে নিয়ে ফোনালাপ ফাঁসের পর গত সোমবার ধানমন্ডির বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন ডা. মুরাদ। এরপর থেকে তিনি আর বাসায় ফেরেননি। মুরাদ হাসান ঢাকা থেকে সেদিন চট্টগ্রামে চলে গিয়েছিলেন। পরে আবার ঢাকায় ফেরেন। এখন দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জামালপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত আলোচিত এই সংসদ সদস্য।
সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, কানাডায় যাওয়ার জন্য গতকাল বুধবার তিনি একটি টিকিট কেটেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে তার কানাডায় উদ্দেশে পাড়ি জমানোর কথা রয়েছে।
বেশ কিছুদিন ধরে জিয়া পরিবারের নারী সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে নানা ধরনের কটূক্তিমূলক বক্তব্য দেন মুরাদ হাসান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব বক্তব্যের প্রতিবাদে নারী নেত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবৃতি দিয়ে তাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। বিএনপির পক্ষ থেকেও তাকে পদত্যাগের দাবি করা হয়।
এরমধ্যেই সোমবার দুই বছর আগে নায়িকা মাহিয়া মাহীর সঙ্গে মুরাদ হাসানের অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হয়। পরে ওইদিনই তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন মঙ্গলবার তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ওইদিনই তার পদত্যাগ গৃহীত হয়।
এরপর সাংসদ মুরাদ হাসানকে নিজ জেলা জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। মুরাদ হাসানকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার বিকালে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে দলের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুরাদ হাসানের অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের ৩৮৭টি লিংক চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
অশালীন, শিষ্টাচারবহির্ভূত ও নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর বক্তব্য দিয়ে মন্ত্রিত্ব হারানো মুরাদ হাসানের নাম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নামফলক থেকেও মুছে ফেলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে থাকা প্রতিমন্ত্রীর তালিকা থেকেও তার নামটি বাদ দেওয়া হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও তার নাম নেই।
সাবেক প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মুরাদ হাসানের যে লাল পাসপোর্ট (বিশেষ পাসপোর্ট) ছিল, সেটি পদত্যাগের দিন গত মঙ্গলবার তার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।