শিক্ষক অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ নয় শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অসদাচরণের কারণে তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
গতকাল শুক্রবার সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়টি শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও তথ্য শাখা থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সাময়িক বহিষ্কৃত নয় শিক্ষার্থী হলেন সাদমান নাহিয়ান সেজান, মো. তাহামিদুল হক ইশরাক, মো. সাদমান সাকিব, আ. স. ম. রাগিব আহসান মুন্না, মাহমুদুল হাসান, মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান, মো. রিয়াজ খান নিলয়, ফয়সাল আহমেদ রিফাত ও মো. নাইমুর রহমান অন্তু।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২ ও ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬তম জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত অপরাধীদের শনাক্তকরণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি পর্যালোচনা করতে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর গঠিত প্রথম তদন্ত কমিটি বাতিল করা হয়েছে।
নতুন তদন্ত কমিটিতে ইইই বিভাগের অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমাদকে সভাপতি ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. আলহাজ উদ্দীনকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিই) বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার মাহবুব হাসান, খুলনা জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি (ন্যূনতম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার) ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনারের একজন প্রতিনিধিকে (ন্যূনতম সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার) সদস্য করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের বিকালের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
গত মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সেলিম হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অভিযোগ উঠেছে, সেদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঞ্ছনা ও অপদস্থের শিকার হওয়ার পর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তায় ড. সেলিম হোসেনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন এবং তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছে। পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই শিক্ষককে অনুসরণ করে তড়িৎ প্রকৌশল ভবনে শিক্ষকের ব্যক্তিগত কক্ষে প্রবেশ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা কক্ষের ভেতর অবস্থান করে বেরিয়ে যান ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরে অধ্যাপক সেলিম বের হয়ে বাসায় যান।
শিক্ষকের স্বজনদের ভাষ্য, বাসায় ফেরার পর ড. সেলিম বাথরুমে যান। বেলা আড়াইটার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন, দীর্ঘ সময় হলেও সেলিম হোসেন বের হচ্ছেন না। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে কয়েক দিন ধরে ছাত্রলীগ নেতারা প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে চাপ সৃষ্টি করছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রলীগ নেতারা ওই শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং হুমকি দেন। ড. সেলিম এতে প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পান। ধারণা করা হচ্ছে, এর জেরেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।