বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে প্রায় দুই বছর ধরে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। প্রাণঘাতী ভাইরাসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার থাবা অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যেই ভাইরাসটির নতুন একটি ধরন ‘ওমিক্রন’ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় চিহ্নিত হওয়া ধরনটি ইতিমধ্যে বিশ্বের ১৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে গোটা বিশ্বে।
যে ১৩টি দেশে ওমিক্রন ছড়িয়েছে সেগুলো হলো, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, ইসরায়েল, ইতালি, চেক প্রজাতন্ত্র, হংকং, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকা ঘোষণা করার পর সর্বপ্রথম ভ্যারিয়েন্টটি বেলজিয়ামের এক পর্যটকের শরীরে মেলে। এরপর একে একে ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশে ছড়ায়। ব্রিটেনে তিনজন সংক্রমিত। জার্মানিতে দুজন। নেদারল্যান্ডসে ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তারা সবাই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরেছিলেন। ইতালিতে একজনের শরীরেই স্ট্রেনটি মিলেছে। কিন্তু আশঙ্কার কথা হলো, এই ব্যক্তি উপসর্গহীন। চিহ্নিত হওয়ার আগে সংক্রমিত অবস্থায় তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে দুজনের ওমিক্রন ধরা পড়েছে। তারাও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরেছিলেন। কানাডায় অবশ্য যে দুজনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তারা নাইজেরিয়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ইসরায়েলে যে ব্যক্তির শরীরে ওমিক্রন মিলেছে, তিনি মালাওয়ি থেকে ফিরে তেলআবিবে বাসে উঠেছিলেন। ফলে তার থেকে আরও অনেকে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
করোনার ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের আণুবীক্ষণিক প্রতিকৃতি প্রকাশ করলেন ইতালির গবেষকেরা। গবেষণাপত্রটির নাম ‘ফার্স্ট ফোটো অব ওমিক্রন ফ্রম বাম্বিনো গেসু রিসার্চ গ্রুপ’। মানব কোষের সঙ্গে ভাইরাসের যে অংশের সংযোগ ঘটে, সেই অংশেই সবচেয়ে বেশি মিউটেশন চোখে পড়েছে। কিন্তু এই মিউটেশন কতটা ক্ষতিকারক, তা এখনো জানা নেই। ছবিতে মিউটেটেড সার্স-কোভ-২-র স্পাইক প্রোটিনের অংশটি কমলা রঙে দেখানো হয়েছে। এখানে সবচেয়ে বেশি মিউটেশন।
করোনার ওমিক্রন স্ট্রেনটি সম্পর্কে এখনো সামান্য জানা গেছে। এটিতে ৫০টিরও বেশি মিউটেশন ঘটেছে। যার মধ্যে কমপক্ষে ৩০টি পরিবর্তন ঘটেছে স্পাইক প্রোটিনে। ফলে এটির অতি-সংক্রমণ ক্ষমতা রয়েছে বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের। কারণ স্পাইক প্রোটিনের সাহায্যেই মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায় ভাইরাস।
ওমিক্রনকে ঠেকাতে ইসরায়েলসহ বহু দেশ এক এক করে সীমান্ত বন্ধ করছে। সোমবার জাপান জানিয়েছে, আপাতত বিদেশিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এ দেশে এখনো পর্যন্ত ওমিক্রন ধরা পড়েনি, তবে আগাম সাবধানতা অবলম্বন করছে দেশটি। অস্ট্রেলিয়া সীমান্ত খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। তা-ও পিছিয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।