করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে যেসব ছাত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত রয়েছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-প্রতিনিধিরা। খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পেরেছেন, শিক্ষার্থীদের অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে। এ সংখ্যায় মেয়ে শিক্ষার্থীরাই বেশি। এর মূল কারণ হিসেবে দারিদ্র্যকে চিহ্নিত করেছেন তারা।
তবে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা না থাকা, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মনিটরিংয়ের অভাব এবং প্রশাসনের নজরদারির কারণে বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে স্বামীর ঘরে চলে গেছেন এসব শিক্ষার্থীরা
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, করোনাভাইরাসের শুরুর পর থেকে এই জেলায় বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ৯৩১ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সদর উপজেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ের ৪০৬ জনের বাল্যবিবাহ হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিকে ২৪৩ জন, মাদ্রাসার ১৬১ জন ও কলেজের ২ জন রয়েছে।
পাংশা উপজেলায় ১৩২ জনের মধ্যে মাধ্যমিকে ৩২ জন, মাদ্রাসার ৭০ জন ও কলেজের ৩০ জন। বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১৫৭ জনের মধ্যে মাধ্যমিকে ১১১ জন ও মাদ্রাসার ৪৬ জন। কালুখালী উপজেলায় ৭২ জননের মধ্যে মাধ্যমিকে ৬২ জন ও মাদ্রাসার ১০ জন। গোয়ালন্দ উপজেলায় ১৬৪ জনের মাধ্যমিকে ৮০ জন, মাদ্রাসার ৮০ জন ও কলেজের চারজন।
সব মিলিয়ে জেলার ১৫০টি মাধ্যমিকে ৫২৮ জন, ৭৩টি মাদ্রাসার ৩৬৭ জন ও ২৯টি কলেজের ৩৬ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে।
সংস্কৃতিকর্মী সঞ্জয় ভৌমিক বলেন, “বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ও পরিবারের দারিদ্র্য। কারণ দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করা অনেক কষ্টসাধ্য। সেই সঙ্গে সমাজে হেয় হওয়ার ভয়েও অল্প বয়সে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়।”
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “১২ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকে অনেক ছাত্রী শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত। তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় তাদের বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে।”
তিনি জানান, কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তারা জানতে পেরেছেন দারিদ্র্য, অভিভাবকদের অসচেতনতা, নিরাপত্তাহীনতার কারণে এই বিয়েগুলো হয়েছে। এর প্রতিকারের জন্য তারা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভা সেমিনার করেছেন। (সূ্ত্র ঢাকা ট্রিবিউন)