তাঁর অজস্র বাড়ি থাকলেও, নিজের স্ত্রী এবং তিন সন্তানের থাকার জন্য তিনি বানিয়েছেন ‘আন্তিলিয়া’ নামের একটি প্রকাণ্ড বাড়ি।
পৃথিবীর অন্যতম বিলাসবহুল এলাকা দক্ষিণ মুম্বইয়ের অল্টামাউন্ট রোডে চার লাখ স্কোয়ার ফিটের উপরে এই বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। যেখানে কম করেও প্রতি স্কোয়ার ফিটের দাম ১ লাখ টাকা।
বাড়িটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড! মানে ভারতীয় মুদ্রায় ৯৭,৯৭,৫৮,৩১,৪৭০,০০ টাকা।
২৭ তলা এই বাড়ির প্রতিটি ফ্লোর গড়ে প্রায় দু’তলা বাড়ির সমান। প্রত্যেকটি ফ্লোরের গঠনশৈলী প্রত্যেকটির থেকে আলাদা। কোনওটির সঙ্গে কোনওটির বিন্দুমাত্র মিল নেই।
এই বাড়ি ভূমিকম্প রোধক। ৮ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পও অনায়াসে সহ্য করতে পারবে। এই বাড়িতে কোনও এসি লাগানো নেই। মানে শীততাপ নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা করা নেই। কারণ এই বাড়িটি এমন কৌশলে বানানো হয়েছে যে, এই বাড়ির ভেতরের তাপমাত্রা সব সময় ঠান্ডাই থাকে।
আর যিনি এই বাড়িটি বানিয়েছেন, তিনি হলেন এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, ভারতের মুকেশ আম্বানি। মাত্র একটি পরিবারের জন্য এত বড় বাড়ি গোটা পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। আর মাত্র ৫ জনকে দেখাশোনার জন্য এতগুলো কাজের লোক! সে তো কল্পনারও অতীত।
আম্বানির এই বাড়িতে বিলাসিতার জন্য আছে বহুতল বিশিষ্ট বাগান এবং বিস্ময়কর জলের কারিকুরি। ২৭ তলার এই বাড়িটির আর একটি বৈশিষ্ট হল প্রতিটি তলার সিলিং এক একটি এক এক দিকে বের করা। লবি থেকে আছে ৯টি এলিভেটার বা লিফ্ট এবং সব ক’টিই সুপার ফাস্ট। অতিথিদের বিনোদনের জন্য আছে একটি গ্রান্ড বলরুমও। এ ছাড়া অ্যাপার্টমেন্টের একপ্রান্তে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে একটি সুইমিং পুল।
শুধুমাত্র গাড়ি রাখার জন্য এই বাড়ির ছ’টি তলা সংরক্ষিত করা আছে। এখানে মোট একশো আটষট্টিটি গাড়ি রাখা যায়। আর সাত তলায় রয়েছে গাড়ির সার্ভিস সেন্টার।
বাড়ির দু’টি তলা জুড়ে রয়েছে রিক্রিয়েশন সেন্টার, যা অনায়াসে পৃথিবীর যে কোনও পাঁচতারা হোটেলকে লজ্জা দেবে। কী নেই সেখানে! জিম থেকে শুরু করে স্পা, জাকুজি এবং ডান্স স্টুডিও।
আছে একটি বিশাল মন্দির, অতিথিদের জন্য এক্সক্লুসিভ সুইট, আইসক্রিম পার্লার এবং আট তলায় রয়েছে একটি সুসজ্জিত সিনেমা হল, যেখানে একসঙ্গে ৫০ জন বসে ছবি দেখতে পারেন। আছে একটি ‘স্নো রুম’-ও। যেখানে ইচ্ছে হলে গরম কালে বসে কৃত্রিম উপায়ে তুষারপাত উপভোগ করা যাবে।
আছে একটি বলরুম। বলরুমের ছাদ থেকে ঝোলানো স্ফটিকের তৈরি চোখ ধাঁধানো অসামান্য একটি ঝাড়বাতি।
এই বাড়িটির দেখাশোনা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য রয়েছেন ছ’শোরও বেশি কর্মচারী। তাঁরা ২৪ ঘণ্টা পর্যায়ক্রমে কাজ করেন। যাঁদের এক একজনের মাসিক মাইনে অন্তত দু’লক্ষ টাকা। এই সব কর্মচারীদের সঙ্গে তিনি অত্যন্ত নিকটাত্মীয়ের মতোই ব্যবহার করেন।
যাঁরা এখানে চাকরি করেন, তাঁদের দুটি বাচ্চাকে আমেরিকায় রেখে লেখাপড়া শেখানোর সমস্ত খরচ বহন করেন এই বাড়ির সর্বময় কর্তা মুকেশ আম্বানি।
এই বাড়িটির নিরাপত্তার জন্য সরকারের তরফ থেকে জেড প্লাস নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বাড়িটিকে একমাত্র টেক্কা দিতে পারে এই পৃথিবীর আর একটি মাত্র বাড়ি। আর সেটা হল— বাকিংহাম প্যালেস। কিন্তু সেটা হল ব্রিটেনের রাজপরিবারের বাড়ি। কিন্তু এই বাড়ির মালিক একমাত্র মুকেশ আম্বানিই।
মুকেশ আম্বানি যাতায়াত করেন একটি বুলেট প্রুফ বিএমডব্লিউ গাড়িতে। যার দাম সাড়ে ছ’কোটি টাকা। একটু দূরে কোথাও যেতে হলে ব্যবহার করেন নিজস্ব এয়ারবাস জেট। এ জন্য তাঁর বাড়ির ছাদে রয়েছে তিন-তিনটি হেলিপ্যাড।
বউ নীতা আম্বানির জন্মদিনে তিনি একবার ৩০০ কোটি টাকা দিয়ে কিনে দিয়েছিলেন একটি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল বিমান।
এ ছাড়া বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকও তিনি। আর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) একটি টিমের মালিকও। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি ভারতের শীর্ষ ধনীর খেতাব পান। গত জুলাই মাসে তাঁর সমস্ত সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫০০ কোটি ডলার বা ৩৪০০ কোটি পাউন্ড।