দক্ষিণ আফ্রিকায় কোভিড-১৯ এর নতুন একটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টকে ‘উদ্বেগ সৃষ্টিকারী ধরণ’ বা ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করার পাশাপাশি এর নতুন নামও নির্ধারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। শুরুতে এই ধরনটির নাম ‘বি.১.১.৫২৯’ দেয়া হলেও গতকাল শুক্রবার বিশ্ব স্বা স্থ্য সংস্থা নতুন ধরণের এই করোনাভাইরাস ভ্যারিয়েন্টের নাম দিয়েছে ‘ওমিক্রন।
নতুন এ ধরন বারবার জিনগত রূপ বদলাতে সক্ষম। ধরনটির কারণে বিশ্বে নতুন করে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। জারি হচ্ছে বিধিনিষেধ ও ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা।
গত ২৪শে নভেম্বর প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। ধরনটির কারণে গত দুই সপ্তাহে দেশটির গৌতেং প্রদেশে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বতসোয়ানা, ইসরায়েল, বেলজিয়াম সহ বেশ কয়েকটি দেশে উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ ধরন অসংখ্যকবার জিনগত রূপ বদল এবং মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিভাগের প্রধান চিকিৎসা পরামর্শক নতুন এ ধরনকে ‘ভয়াবহ’ ও ‘এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে খারাপ ধরন’ বলে বর্ণনা করেছেন।
গত ১১ নভেম্বর বতসোয়ানায় সংগৃহীত নমুনায় এ ধরন ছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধরনটির অস্বাভাবিকভাবে জিনগত রূপ বদলের ব্যাপারটি থেকেই বোঝা যায় যে এটি সম্ভবত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে এসেছে। যেমন চিকিৎসা করা হয়নি এমন একজন এইচআইভি পজেটিভ বা এইডস আক্রান্ত রোগী। এ ধরনটির স্পাইক প্রোটিনে ৩০টির বেশি মিউটেশন রয়েছে। অতি সংক্রামক ডেলটার তুলনায় সংখ্যাটা দ্বিগুণেরও বেশি। আমাদের দেহকোষে ঢুকে পড়ার জন্য ভাইরাস মূলত এটাকে ব্যবহার করে থাকে। জিনগত রূপ বদলের বিষয়টির ওপর ভিত্তি করেই বিজ্ঞানীদের পূর্বানুমান, এ ধরনটি আরও বেশি মাত্রায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং এর আগে অন্য ধরনের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি হয়েছে তারা পুনরায় আক্রান্ত হতে পারেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় যেখানে ২৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হয় এ সপ্তাহের শুরুতে সেই সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। এর ৮০% বেশি দেশটির গৌতেং প্রদেশের। এ ধরন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে আগাম সতর্কতা জরুরি হয়ে পড়েছে।
নতুন ধরনের জিনগত রূপ বদল নিয়ে বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তাদের উদ্বেগের কারণ নতুন ধরনের কিছু কিছু মিউটেশন যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব ভালোভাবে বুঝতে আরো কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। এটি কতটা সংক্রামক, তা নির্ধারণ করতে বৈজ্ঞানিকরা এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। তবে এ মুহূর্তে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এখন পর্যন্ত এমন কোনো শক্তিশালী কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, যার কারণে সন্দেহ করা যায় নতুন এ ধরনটি ভয়াবহ হবে, নাকি মাঝারি পর্যায়ের হবে।