বাঁশবাগানের ওপর প্রায় ৩০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন দিনমজুর লকু রায়। বাঁশঝাড়ের উপরে বাঁশ, সিমেন্টের বস্তা আর পলিথিনের টুকরো দিয়ে তৈরি করা ঘরে বাকি জীবনটাও কাটিয়ে দেবেন বলেও ঠিক করেছেন তিনি। সেখানে বিষধর সাপ, কাঠবিড়ালি আর বিভিন্ন রকমের পাখিদের সঙ্গে মিলেমিশে দিনই গুজরান করেন বর্ধমানের পালিতপুর গ্রামের রায়পাড়ার এই বাসিন্দা।
আসলে স্ত্রীকে তিনি এতটাই ভালবাসতেন যে, স্ত্রীর মৃত্যুর পরে একদম ভেঙে পড়েছিলেন। তাই একদিন ঘর-সংসার ছেড়ে এখানে এসেই সন্ন্যাস জীবন যাপন করতে শুরু করেন বছর পঞ্চান্নর লকু।
তিনি যেখানে থাকেন তার চারিদিকে সবুজ ধানের জমি। মাঝখানে একফালি জমিতে বাঁশঝাড়ের ওপরে লকুর এই আস্তানা। সেই আস্তানার এদিকে ওদিকে আছে অজস্র বিষধর কেউটে সাপ। একটা ছোবলেই জীবনের শেষ হয়ে যেতে পারে। তবু তাতে তাঁর কোনও ভয়ডর নেই। উলটে বলেন, আমি তো এই সাপখোপেদের সঙ্গেই মিলেমিশে আছি।
লকু পেশায় দিনমজুর। কাজ থাকলে ভাল। আর কাজ না থাকলে সেখানকার ছোট্ট একচিলতে জমিতে তিনি জলের নালা বানিয়ে নিয়েছেন। সেখানে গিয়ে মাছ ধরার ফাঁদ পাতেন। নিজের ধরা সেই মাছের ঝোলেই তৃপ্তি করে খান নিঃসঙ্গ এই মানুষটি।
জানা গেছে, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তাঁর বউ মারা যায়। তার পর থেকেই মানসিক ভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েন লকু। ঘরে কিছুতেই থাকতে পারছিলেন না। বউয়ের স্মৃতি তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। তাই এই বাঁশবাগানে এসে তিনি দিন কাটাতে থাকেন।
এই গ্রামেই তিনি জন্মেছিলেন। আশপাশের সবাই তাঁকে চেনেন। তাই কেউ কিছু বলেন না। তাঁর ইচ্ছে হলে মাচা থেকে নামেন। না হলে নামেন না।
তিনি এখানে আর কত দিন এ ভাবে থাকবেন? জিজ্ঞেস করলেই তাঁর সাফ জবাব, বউ যদি কোনও দিন ফেরে, তা হলেই আমি ওখানে যাব। না হলে আমি আর ওই ভিটেয় কোনও দিন পা রাখব না। আমার জীবনের বাকি ক’টা দিন আমি এই বাঁশগাছের ওপরেই কাটিয়ে দেব।