বাগেরহাটের রামপালে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় ৪ নারী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় রামপাল থানায় মোঃ ফরিদ শেখ বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে উপজেলার উজলকুড় ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত আমির হোসেনের পরিবারের সাথে একই এলাকায় হাজ্বী আঃ খালেকের সাথে দীর্ঘদিন জমিজমা সংক্রান্ত নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। পৈত্রিকসূত্রে মোঃ ফরিদ শেখ তার ওই সম্পত্তি দীর্ঘদিন যাবত শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসছিলো। কিন্তু গত ৯ নমেম্ভর আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাজ্বী আঃ খালেক, আঃ সালাম শেখ, মোঃ আবু জাফর, জেসমিন বেগম, রাবেয়া বগম, রশিদা বেগম, আফরোজা বেগম, গোলাম ছরোয়র জোরপূর্বক ফরিদ শেখের দখলে থাকা বাগাব ভিটায় আইল সিমানায় দেওয়া বেড়া উঠিয়ে ফেলায়। এসময় শাহানা বেগম, রীনা পারভিন, কেয়া বেগম, ও মর্শিদা বেগম বাঁধা দিতে এগিয়ে এলে তাদেরকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে। ওই সময় কেঁয়া বেগমের গলার থাকা একটি স্বর্ণের চেইন ও রীণা পারভীনের স্বর্ণের একজোড়া কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ১লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা।
ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গেলে বাদী মোঃ ফরিদ শেখের ভাই শেখ ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, পৈত্রিকসূত্রে দীর্ঘদিন যাবৎ ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে আমি ওই জমি ভোগদখল করে আসছি। হটাৎ করে আঃ খালেক আমার ওই জমি এসএর বাইরেও বেশি সম্পত্তি পাবে বলে দাবী করে। বিষয়টি সুরাহা করার জন্য গ্রামের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গদের জানালে তানরা সালিশির মাধ্যমে রায় দেন এসএর বাইরে আঃ খালেকের জমি পাইতে হলে আদালতের মাধ্যমে ফয়সালা করে আসতে হবে। বর্তমান যে যার অবস্থানে আছে সে সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করতে থাকবে। তখন ১৮ নভেম্বর ২০২০ তারিখে বাগেরহাট বিঞ্জ আদালতে একটি বাটোয়ারা মামলা দায়ের করেন, যা এখন চলমান রয়েছে। কিন্তু আঃ খালেক আদালতকে উপেক্ষা করে মামলা নিষ্পত্তি না হতেই তিনি ও তার সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আমার দখলে থাকা ভিটা দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। শেখ ফরহাদ হোসেন আরো জানায় আঃ খালেকের ছেলে মোঃ আব্দুল কালাম খুলনা খালিশপুর থানায় কর্মরত একজন পুলিশের কনস্টেবল অথচ এলাকায় এসে পরিচয় দেয় তিনি পুলিশের দারোগা। তার ক্ষমতার হাত নাকি অনেক লম্বা। আমাদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। একজন পুলিশের কনস্টেবল হয়ে কি করে দুটি বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন এমন প্রশ্ন করে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিকার্ষণ করে তদন্ত করার আহবানও জানান ফরহাদ হোসেন।
এলাকাবাসী শেখ উসমান গণী জানান, পৈত্রিকসূত্রে এই জমি শেখ ফরহাদ হোসেনের। ভাগবাটোয়ারা করে দীর্ঘদিন যাবত যে যার অবস্থানে আছে। বরং আঃ খালেকের চেয়ে ১০ শতাংশ জমি কম ভোগদখল করেন ফরহাদ। এই জমি নিয়ে এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে একাধিকবার সালিশিও হয়েছে। যেহেতু আদালতে মামলা চলমান রয়েছে তারপরও আদালতকে অবমাননা করে আঃ খালেকরা কি করে শেখ ফরহাদ হোসেনের দখলকৃত জমি দখল নেওয়া চেষ্টা করবো বা কেবা কাহারা তাকে এই ইন্ধন দিলো বুঝতে পারলাম না।
উজড়কুড় ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ আবু জাফর শেখ জানান, শেখ ফরহাদ ও আঃ খালেক এদের পৈত্রিক জমি নিয়ে একাধিকবার রামপাল থানায় বসাবসি হয়েছে। কাগজপত্র যাচাই বাচাই করে দেখা গেছে শেখ ফরহাদ বৈধ ও প্রাপ্ত সম্পত্তিতে ভোগদখল করে আসছে। তবে তুলনামূলক শেখ ফরহাদ হোসেন সম্পত্তি কম ভোগদখল করছেন। রামপাল থানার দারোগা আমাকে নির্দেশ দেন ওই জায়গা নিয়ে কোনো প্রকার যেনো অপ্রিতিকর ঘটনা না ঘটে। যে যার অবস্থানে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করবে। অথচ হটাৎ করে আঃ খালেক ও তার লোকজন জোরপূর্বক ফরহাদের ভিটা দখল নেওয়ার চেষ্টা করে এবং মহিলাদের স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ছিড়ে নিয়ে গেছে। আর ওরা যে মারপিটের ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলো ওটা সম্পন্ন ষড়যন্ত্র।
এবিষয় আঃ খালেকের ছেলে মোঃ আবুল কালামের কাছে জানতে চাইলে তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা উল্টো তাদের কাছে সম্পত্তি পাবো। যে কারনে আদালতে বাটোয়ারা মামলা করেছি। আর বাড়ি দুটো আমার নয় আমার বাবার। তবে পুলিশের কনস্টেবল হয়ে দারোগা পরিচয় দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও কোন থানায় কর্মরত রয়েছেন সেটা বলতে রাজি হননি তিনি।
অভিযোগের বিষয় রামপাল থানার ওসি মোহাম্মদ সামসুদ্দীন বলেন, অভিযোগ তদন্তধীন রয়েছে সত্যতা পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।