সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য রাষ্ট্রকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে

এ কে এম রেজাউল করিম
এ কে এম রেজাউল করিম
22 মিনিটে পড়ুন

সাহিত্য কি করে? সাহিত্য মানুষের মনের আবেগ জাগিয়ে দেয়। মানুষকে সংবেদনশীল করে, যার ফলে মানুষ বিভাজন ডিঙ্গিয়ে যেতে চায়। দার্শনিক হয়তো শ্রমিকের দুঃখ দেখে কাতর হবে, শ্রমিক হয়তো চাইবে সে শাসক হবে, সৈনিক হয়তো ওপরে যেতে চাইবে, কিম্বা নীচে; তখন রাষ্ট্র ভেঙে পড়বে, তখন “ন্যায়” বলে কিছু থাকবে না, অন্যায়ে ছেয়ে যাবে সমস্ত কিছু। প্লেটোর সে রাষ্ট্রের প্রধান কথা হলো নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রাখা, সেখানে তাই সাহিত্যের স্থান নেই।

প্লেটোর রাষ্ট্রের জন্য সাহিত্য বিপজ্জনক, যেমন তা বিপজ্জনক ছিল হিটলারের রাষ্ট্রের জন্য। রাষ্ট্রের অনেক কিছুই থাকে। সিপাহী, সান্ত্রী, আইন, আদালত- সব কিছুই আছে তার। বিবেক নেই? হ্যাঁ, বিবেকও আছে বৈকি। সেই বিবেক হচ্ছে শাসক শ্রেণির স্বার্থ। “ন্যায়”ও তাই, শাসক শ্রেণির স্বার্থ। ওদিকে সাহিত্যের কাজটাই হলো মানুষের ভেতর যে বিবেকবান, অর্থাৎ সংবেদনশীল মানুষটি থাকে তাকে জাগিয়ে রাখা, তাকে সতেজ করা। সাহিত্য তাই শ্রেণি-বিরোধী এবং সে-কারণে রাষ্ট্র-বিরোধী। প্রাচীন গ্রীক সাহিত্যে এন্টিগনির যে গল্পটি আছে সেটি একটি বিদ্রোহের কাহিনী। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যক্তির বিদ্রোহ। শাসনের বিরুদ্ধে বিবেকের অভ্যুত্থান।

এন্টিগনি বলেছে, তার মৃত ভ্রাতাকে সে কবর দেবে। দেবেই দেবে। কেননা এটি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য। রাষ্ট্র বলছে দেয়া যাবে না, কেননা লোকটি ছিল রাষ্ট্রদ্রোহী। এই বিশেষ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের মুখপাত্রটি অন্য কেউ নয়, তিনি হচ্ছেন এন্টিগনিরই আপন মামা, ক্রীয়ন। কিন্তু এখানে আত্মীয়তা কাজে দেয় না। রাজা বন্দী রাষ্ট্রীয় স্বার্থের শৃঙ্খলে। এন্টিগনি এগিয়ে গেল, ভাইকে কবর দিতে, ক্রীয়ন বিদ্রোহী এন্টিগনিকে আটক করে কবর দিয়ে দিলো, জ্যান্ত। ক্রীয়নের পুত্র তার প্রেমিকা এন্টিগনির কবরে গিয়ে মারা গেল কাঁদতে কাঁদতে। কিন্তু ক্রীয়নের কিছু করার ছিল না। রাজা হয়ে তিনি বন্দী। ব্যক্তি যখন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় রাজা তখন রাষ্ট্রের পক্ষে এবং ব্যক্তির বিরুদ্ধে, অতি অবশ্যই; নইলে তিনি রাজা কেন। এন্টিগনির মতো যারা বিবেকবান মানুষ রাষ্ট্র তাদের ভয় করে। আর সাহিত্যের কাজই হচ্ছে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে মানুষকে বিবেকবানে পরিণত করা। সাহিত্য আনন্দ দেয় এ আমরা জানি; সাহিত্য শিক্ষা দেয় এ-ও আমরা মানি; কিন্তু তবু সাহিত্য বিনোদনের অনুষ্ঠান নয়, যেমন নয় সে পন্ডিতের পাঠশালা; সাহিত্যে ওই দু”য়েরই ভূমিকা থাকে, কেননা এরা উভয়েই সাহিত্যের মূল কর্তব্যের অংশ, যেটি হলো মানুষের হৃদয়কে সংবেদনশীল করা। সাহিত্যের শিক্ষা মস্তিষ্কের নয়, হৃদয়ের। হৃদয়বান মানুষরাই বিবেকবান, যে-জন্য হৃদয়কে রাষ্ট্রের বড় ভয়।

রাজনৈতিকভাবে শেকস্পীয়র ছিল রক্ষণশীল। তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু বড় শিল্পী ছিল বলেই শেকস্পীয়র বারবার তার নাটকে দেখিয়েছেন রাষ্ট্র কি করে ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত করে। রাজপুত্র হ্যামলেট একা লড়ছেন রাজার বিরুদ্ধে। কিন্তু রাজা একা নয়, রাষ্ট্র আছে তার আজ্ঞাবাহ রূপে দাঁড়িয়ে। হ্যামলেট দেখছেন একজন দুর্বৃত্ত যেহেতু বসে আছে সিংহাসনে তাই সবকিছুই রওনা হয়েছে নষ্টের অভিমুখে। রাষ্ট্র বড়ই কঠিন প্রাণী।

- বিজ্ঞাপন -

টলস্টয় শেকস্পীয়রকে পছন্দ করতেন না। মনে করতেন শেকস্পীয়র রাজা বাদশাদেরই গ্রহণ করেছেন পাত্র-পাত্রী হিসেবে, জনগণকে বিশেষ মর্যাদা দেন নি। হ্যাঁ, শেকস্পীয়রের দেশপ্রেমও ছিল সঙ্কীর্ণ। কিন্তু প্রশ্ন তো চরিত্রের অবস্থান নয়, প্রশ্ন হচ্ছে চরিত্রের মানবিক পরিচয়। পোশাক, কিম্বা সামাজিক পরিচয় যাই হোক, শেকস্পীয়র দেখছেন, অন্তর্গত মানুষটিকে। সেই মানুষটি রাজা নন, রাজপুত্র নন, শুধুই একজন মানুষ। বিবেকবান রাজপুত্র হ্যামলেটের জন্যও রাষ্ট্র মিত্র নয়, শত্রু বটে। রাষ্ট্র তাকে হত্যা করার প্রচেষ্টার কোনো অবধি রাখে না। সাহিত্য দেশ মানে না। কাল মানে না। রাষ্ট্র মানে না। শুধু মানে না বললে যথেষ্ট বলা হবে না, সাহিত্য ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বটাকে তুলে ধরে। সাহিত্য স্থান ও কালবিরোধী যতটা নয়, রাষ্ট্রবিরোধী সে তুলনায় অনেক বেশি।

টলস্টয়ের নিজের লেখাতেও রাষ্ট্র-বিরোধিতা অত্যন্ত স্পষ্ট। স্বভাবতই। সেই অতিবৃহৎ উপন্যাস “যুদ্ধ ও শান্তি”তে টলস্টয় দেখাচ্ছেন যুদ্ধ ব্যাপারটা রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রেরই সংঘর্ষ আসলে, কিন্তু দুর্ভোগটা সাধারণ মানুষেরই। আর রাষ্ট্রনায়কেরাও সাধারণ মানুষই শেষ পর্যন্ত, যদিও তারা ভান করতে ভালোবাসে অসাধারণত্বের।

“আন্না কারোনিনা”র নায়ক-নায়িকারা অধিকাংশই রাষ্ট্রের সেবক। আন্নার স্বামী মস্ত বড় আমলা, তার প্রেমিকা সেনাবাহিনীর অফিসার। আন্নার ভাইও বড় সরকারি কর্মচারি। ওই সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের ভেতরেই আন্নার চলাফেরা, ওঠাবসা ও জীবনযাপন। অনেক দিক দিয়েই অসাধারণ এই মেয়ে; সৌন্দর্যে, ব্যক্তিত্বে, মেধায় ও আচরণে নিজের বৃত্তের সব মানুষকে ছাড়িয়ে ওঠে; বিশেষভাবে ব্যতিক্রমী হলো তার আন্তরিকতা। এই মানুষটিকে চরিতার্থতা দেবার ক্ষমতা তার স্বামীর নেই, তার প্রেমিকেরও নেই। বেচারা আন্না বেশি বয়সী স্বামীকে ছেড়ে প্রায় সমবয়সী প্রেমিকর কাছে যায়, কিন্তু চরিতার্থ না দিল তাকে তার আমলা স্বামী, না তার সৈনিক প্রেমিক। উভয়েই সামান্য তারা, রাষ্ট্রলালিত বুর্জোয়া স্বার্থপরতার বন্ধনে আবদ্ধ হবার কারণেই, বিশেষভাবে।

এ উপন্যাসে রাষ্ট্রবিরোধী রাজনৈতিক লোকেরাও রয়েছে, তারা ছায়াছায়া, খুব প্রত্যক্ষ নয়। তারা নতুন ব্যবস্থার কথা ভাবে, কমিউনিজমের কথাও। মোট বিষয়টা দাঁড়ায় এই যে, প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে গেছে, এটা ভেঙে পড়ছে। আন্নার মতো মানুষদের পক্ষে এখানে তাই আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকছে না।

টলস্টয়ের এ উপন্যাসে আসন্ন বিপ্লবের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। রেল গাড়ির নীচে পড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া আন্নার সুন্দর দেহটি যেন বলে দিচ্ছে, ওই রাষ্ট্র ও সমাজ মানুষের স্বপ্নগুলো ওইভাবেই কেটে টুকরো টুকরো করবে, যদি বিপরীত কিছু না ঘটে।এক অর্থে টলস্টয় রক্ষণশীল। তিনি রক্তপাত পছন্দ করতেন না, রাষ্ট্রবিপ্লবও নয়। কিন্তু তাঁর লেখার ভেতর দিয়ে রুশ বিপ্লবকে এগিয়ে আনছিল তিনি বিদ্যমান রাষ্ট্রের অন্তঃসারশূন্যতা ও নিষ্ঠুরতাকে উন্মোচিত করে দিয়ে। এটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। হৃদয় দিয়ে বুঝেছেন এবং অন্যের হৃদয়ে সেই বুঝটাকে সংক্রমিত করে দিয়েছেন।

- বিজ্ঞাপন -

“আন্না কারেনিনা”র পরের উপন্যাস “পুনরুজ্জীবন”। এতে রাষ্ট্রের মুখচ্ছবি আরো প্রত্যক্ষ। কাটিউসা মাসলোভা একজন নিরপরাধ কিশোরী। সামন্ত পরিবারের যুবক নেখলিউদভ তাকে নষ্ট করলো। মাসলোভার সন্তান হবে, কিন্তু সন্তানের পিতা নেখলিউদভ তখন অনেক দূরে। সে তখন সেনাবাহিনীর নবীন অফিসার। মাসলোভা কাজ করে, দেহ বিক্রয় করে, জেলও খাটে। সবই বাঁচার চেষ্টায়। আসামি হয়ে আদালতে এসেছে মাসলোভা। অদৃষ্টের কী কৌতুকবোধ, সেই বিচারে জুরীদের একজন হয়ে বসে আছে নেখলিউদভ। নেখলিউদভ চিনেছে ওই মেয়েকে। তার ভেতরে অনুশোচনার বোধ জেগেছে। সে চাইলো মাসলোভাকে রক্ষা করবে। কিন্তু পারলো না। বিচারে জেল ও নির্বাসন হয়েছিল মাসলোভার। জেলটা মওকুফ করালো নেখলিউদভ, আমলাদের কাছে দেন-দরবার করে। কিন্তু নির্বাসন বলবৎ রইলো। মাসলোভা চলেছে সাইবেরিয়াতে। নেখলিউদভ চলেছে পিছু পিছু। তার পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। সে প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়। মাফ চাইবে। মাসলোভা রাজি হলে তাকে বিয়ে করবে। শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটা নেখলিউদভ করতে পারলো মাসলোভার কাছে, সাইবেরিয়াতে গিয়ে। আশা করেছিল মাসলোভা কাল বিলম্ব করবে না, সম্মত হতে। “বুঝেছি, সেবার আমার দেহটা ব্যবহার করেছো, এবার ব্যবহার করতে চাইছো আমার আত্মাটাকে। না, তা হবে না।”

আসলে মাসলোভারও পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। সেও আর আগের সেই পথহারা মেয়েটি নেই। পথের সন্ধান পেয়ে গেছে সে। সাইবেরিয়াতে তার সহবন্দীদের মধ্যে কয়েকজন ছিল রাজবন্দী। এরা অন্যধরনের মানুষ। এরা সংযমী, মেধাবী; এরা বই পড়ে, একজনের থলের ভেতর দেখা যায় মার্কসের “পুঁজি” বইটি উঁকি দিচ্ছে। এদেরই একজন হচ্ছে সাইমনসন। তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে মাসলোভার। তারা ভালোবেসে ফেলেছে পরস্পরকে। তাদের বিয়ে হবে। নেখলিউদভরা যতই যা করুক, তারা বন্দী বটে, রাষ্ট্রের বৃত্তের ভেতর আবদ্ধ। ওই বৃত্তে কারোরই মুক্তি নেই, না নেখলিউদভের, না মাসলোভার, না সাইমনসনের। বিশেষভাবে পীড়িত হবে মাসলোভারা। নেখলিউদভরা তাদেরকে ব্যবহার করবেনিজেদের বিশেষ প্রয়োজনে। মানুষের মুক্তির জন্য নতুন ব্যবস্থা প্রয়োজন হবে। যে ব্যবস্থার পক্ষে সাইমনসনেরা লড়ছে। বলা বাহুল্য, ওদের মধ্যেই লেনিন ছিল, যার সন্ধান টলস্টয় তখনও পান নি, “পুনরুজ্জীবন” উপন্যাসটি যখন তিনি লিখে শেষ করেন, ১৮৯৯-এ।

আমাদের এই উপমহাদেশে সাহিত্যচর্চার সঙ্গে রাষ্ট্রের একটা প্রত্যক্ষ দ্বন্দ্ব ছিল। ইংরেজ আমলে যেমন, পরেও তেমনি। ইংরেজের শাসনামলে মনে হয়েছিল রাষ্ট্র বাংলা সাহিত্যকে বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। তা করেছে বটে। বাংলা গদ্যের সৃষ্টি ইংরেজ আগমনের ফল, এ কথা ইতিহাসে লেখা আছে। যে-মধ্যবিত্ত শ্রেণি আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে অতটা এগিয়ে নিয়ে গেল তারাই বা কোথা থেকে আসতো, ইংরেজ না এলে। ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তন না করলে, চাকরি-বাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি করে না দিলে কেইবা পড়তো বাংলা সাহিত্য। সবই সত্য। কিন্তু বাঙালি যে ইংরেজির চর্চা না করে বাংলা চর্চা করলো এটা একটা রাষ্ট্রবিরোধিতা তো বটেই। সে মিশে গেল না। কেউ কেউ গেল, যারা ইংরেজ হতে চাইলো। কিন্তু অত্যন্ত বড়মাপের অনেকগুলো মানুষ যে গেল না, তারা যে মাতৃভাষার চর্চা করলেন সেই ঘটনা তো বলে দিচ্ছে যে, গ্রহণের অন্তরালে সুদৃঢ় একটা বর্জন রয়ে গেছে। মাইকেল মধুসূদন চলে গিয়েছিল, তিনি সাহেব হয়েছেন, মেম সাহেব বিয়ে করেছেন, ধর্ম ত্যাগ করে খৃষ্টান হয়েছিল, ইংরেজিতেই লিখবেন বলে ঠিক করেছিল; কিন্তু ওই যে ফিরে এলেন, হলেন বাঙালি লেখক, ওইখানেই তার আসল বিদ্রোহ, ইংরেজ হওয়ার বিদ্রোহের চেয়ে যা অনেক গভীর।

- বিজ্ঞাপন -

রাষ্ট্রভাষা ছিল ইংরেজি। বাঙালি সে-ভাষার চর্চা করেছে; কিন্তু সে-ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করে নি। না-করে বাংলা ভাষাকেই বরঞ্চ এগিয়ে নিয়ে গেছে। স্বাধীনতার দাবি সেই সাহিত্যে এসেছে, নানাভাবে, নানা সুরে। কিন্তু রাষ্ট্র ছিল অত্যন্ত প্রবল। তার ক্ষমতা ছিল অপরিমেয়। তার ক্ষতিকর দাপটকে যে অস্বীকার করা যাবে তা সম্ভব ছিল না। না, সাহিত্যও পারে নি।সাহিত্যের ক্ষতি হয়েছে দুটো। একটি সাম্প্রদায়িকতা, অপরটি শ্রেণিবিভাজন। বঙ্কিমচন্দ্রের দৃষ্টান্ত সহজেই আসে। তিনি অসামান্য ছিল যেমন ইহজাগতিকতায়, তেমনি স্বাধীনতাপ্রিয়তায়।

স্বাধীনতার পক্ষে লিখতে গিয়ে তাঁর লেখবার কথা ছিল ইংরেজের বিরুদ্ধে; কিন্তু তা লেখা সম্ভব ছিল না বলে “আনন্দমঠ” ও “দেবী চৌধুরানী”তে শত্রু হিসেবে দাঁড় করালেন অনুপস্থিত মুসলমানকে। সাহিত্যে ওই যে সাম্প্রদায়িকতা প্রবেশ করলো, ওই যে নদী ঘুরে গেল তার স্বাভাবিক ধারা থেকে ভিন্ন দিকে, তার প্রভাব পরবর্তীকালে অনেক ক্ষতির কারণ হয়েছে, বাঙালির জন্য।

১৯৪৭-এ এসে বঙ্গদেশ যে দু”টুকরো হলো তার প্রধান কারণ সাম্প্রদায়িকতা এবং সেই কারণকে সাহিত্য প্রতিহত করে নি, বরঞ্চ পুষ্টই করেছে। আর রইলো শ্রেণি। ইংরেজের রাষ্ট্র বিদ্যমান শ্রেণি-বিভাজনকে আরো শক্ত করেছে। সাহিত্য তাকে ভাঙতে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় নি। সাহিত্য রয়ে গেছে বিত্তবান শ্রেণির সংস্কৃতি হিসেবে। তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে আমরা বাংলা সাহিত্যের চর্চা করেছি রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় নয়, রাষ্ট্রীয় বৈরিতার ভেতরে। হ্যাঁ, পুরস্কার ছিল, পত্রিকা ছিল, গণমাধ্যমে প্রচার পাওয়া যেতো; কিন্তু মূল সত্যটা ছিল এই যে, ওই রাষ্ট্র বাংলাভাষাকে রাখতে চেয়েছিল উর্দুর নীচে। ঠিক যেমন ইংরেজরা চেয়েছিল ইংরেজিই হবে প্রধান, মুগলরা চেয়েছিল ফার্সীর প্রাধান্য, আর্যরা সংস্কৃতের, তেমনি পাকিস্তানিরা চাইলো উর্দু হবে প্রধান, বাংলা দ্বিতীয়। বাঙালি সেটা মানে নি। কিন্তু সাহিত্যে রাষ্ট্র-বিরোধিতা কতোটা এসেছে বা আসে নি সে-প্রশ্নটা থাকে। না, বেশি আসে নি। সাতচল্লিশের পরে আমাদের সাহিত্য ছিল কবিতা প্রধান। আমাদের প্রধান কবিরা রাষ্ট্রের মহিমাকীর্তন করে অনেক কবিতা ও গান লিখেছেন। সে ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে কোনো গ্লানি দেখা যায় নি। ফরাসী কিম্বা রুশ বিপ্লবের পেছনে যেমন সাহিত্যের একটা ভূমিকা ছিল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পশ্চাৎভূমিতে তেমন কোনো সাহিত্যিক ঘটনা ঘটে নি।

দারিদ্র্যতা নাকি কাজী নজরুল ইসলামকে মহান করেছিল; দিয়েছিল খ্রিষ্টের সম্মান। কথাটা সত্য হলে মানতেই হবে যে, অভাব-দারিদ্র্য এবং কষ্টবোধ মানুষকে বড় হতে প্রেরণা যোগায়। বড় মানে ধনবান নয়। নয় বিত্ত-বৈভবের সমারোহ। বড় মানে অনেকের মধ্যে অনন্য হওয়া, অসাধারণ হওয়া। কাজী নজরুল ইসলাম সেটি হতে পেরেছিলেন। কিভাবে পেরেছিলেন তা সকলেরই জানা। তিনি সাহিত্যের ঐশ্বর্যে এতো ‘বড়’ হয়েছিলেন যে, জীবদ্দশায় এমনকি মৃত্যুর পরেও তাঁর সাহিত্য-ঐশ্বর্য তাঁকে খ্রিষ্টের সম্মানে মহিয়ান করে রেখেছে। কাজী নজরুল বৈষয়িক দিক থেকে দরিদ্র ছিলেন সত্য, মনের দিক থেকে নয়।

বৈষয়িক দারিদ্র্য হয়তো ঘোচানো যায়, মনের দারিদ্র্য ঘোচানো বড়ই কঠিন। বৈষয়িক দারিদ্র্য ঘোচানোর জন্য প্রয়োজন অর্থকড়ির। মনের দারিদ্র্য অর্থকড়িতে ঘোচে না। সমাজে অনেক অর্থশালী আছেন যারা বৈষয়িক দারিদ্র্য থেকে যোজন যোজন দূরে। কিন্তু তাদের কারো কারো মনের দারিদ্র্য এতোই প্রকট যে, এদের জন্য আমাদের করুণা হয়। এই দুর্ভাগা দরিদ্রের সংখ্যা এদেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এদের দারিদ্র্য ঘোচাতে প্রয়োজন নির্মল সাহিত্য, সুস্থ সংস্কৃতি, নিঃশর্ত জ্ঞানসাধনা। যতদিন তারা সেটি না পারবে ততদিন বিত্তের বড়ত্ব থাকলেও তারা মানবিক বড়ত্বে উন্নীত হতে পারবে না। এটি অলঙ্ঘনীয় সত্য। মানুষ মাত্রই বড় হতে চায়। বড় হতে চাওয়া অন্যায় কিছু নয়। বৈষয়িক বড়ত্বই মানুষের প্রথম চাওয়া। এ বড়ত্ব মানুষকে বড় করে না। বড় করে মানবিক বড়ত্ব।

চিন্তায়, চেতনায়, মূল্যবোধে বড় হতে পারা মহত্তর অর্জনেরই নামান্তর। এ অর্জন সবার দ্বারা সম্ভব নয়। সবাই পারেও না। যারা পারে তারাই অনন্য, অসাধারণ। সৃজনশীল চিন্তার মানুষ যারা তাদের মূল্যবোধ আর দশজনের চেয়ে অবশ্যই প্রখর। বিত্ত তাদের চিত্তকে পরাস্ত করতে পারে না। তারা বড় কিছু করার নেশায় এতোটাই বিভোর থাকেন যে, বড়ত্বের মহিমায় জাগতিক স্বাচ্ছন্দ্যকেও তারা অবলীলায় বিসর্জন দেন।
একথা সব সৃজনশীলের ক্ষেত্রে হয়তো প্রযোজ্য নয়, কিন্তু প্রকৃতই যারা নির্মোহ এবং সৃষ্টিশীল মানুষ তাদের কাছে ব্যক্তিগত সুখ-সাচ্ছন্দ্য কখনোই প্রাধান্য পায় না।একজন সাহিত্যিক সমাজের আর দশজন মানুষের মতোই সামাজিক জীব। তারও থাকতে পারে অভাব, দারিদ্র্য, প্রাপ্তির নেশা। কিন্তু তার নেশাটি কখনোই অন্যদের মতো রূঢ় হবে না। তার প্রাত্যহিক প্রয়োজনটি প্রকাশিত হয় কোমল আবেগে, শিল্পীত ঢঙে।

সৃষ্টিশীল মানুষ হিসাবে একজন সাহিত্যিকের কাছ থেকে কেউ রূঢ়তা আশা করে না। রূঢ়তা সাহিত্যিকের স্বভাব বিরুদ্ধ। মানুষ একজন সাহিত্যিককে সাদামাটা, নির্লোভ ও নির্মোহ দেখতেই অভ্যস্ত। সাহিত্যিক মানে নির্মল চিন্তার মানুষ। তিনি হবেন ফুল-পাখি-প্রকৃতির মতোই উদার এবং সুন্দর। মানুষের এই প্রত্যাশাকে সাহিত্যিকও উপলব্ধি করেন। উপলব্ধি করেন বলেই তিনি বিত্ত-প্রত্যাশী নন। তিনি শুধুই চিত্তের কাঙাল। একজন সাহিত্যিককে একটি ফুল দিয়ে যত সহজে জয় করা সম্ভব, অন্যের ক্ষেত্রে তা ততটাই অসম্ভব। ’’রাষ্ট্র কেন নির্লিপ্ত থাকবে সাহিত্যের প্রতি? সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য রাষ্ট্রকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।

ক্রীড়াবিদ তৈরির জন্য রাষ্ট্রের যে পরিচর্যা ও অর্থ ব্যয় তা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও বিস্তৃত করতে হবে। সাহিত্যের জন্য গঠন করতে হবে পৃথক মন্ত্রণালয়। জেলায় জেলায় স্থাপন করতে হবে বাংলা একাডেমির শাখা অফিস।
জাতির মানবিক দৈন্য ঘোচাতে সাহিত্য যদি ভূমিকাই রাখে তাহলে এর প্রতি অবহেলা কিছুতেই কাম্য নয়। লেখককে ‘বড়’ হবার সুযোগ দিতে হবে।সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে দেশ ও জাতির জন্য ‘খ্রিষ্টের সম্মান’ অর্জনে লেখকই পারেন চিত্তের বিকাশ ঘটাতে। সুতরাং মননশীল সাহিত্য ও সাহিত্যিকের যথাযথ মূল্যায়ন আজ সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।’’

লেখক মানেই সাহিত্যের কর্মী। যারা সাহিত্য করেন তাদের অন্তর্চক্ষু থাকে উন্মীলিত। অন্তর্চক্ষু একজন সাহিত্যিককে অনেক কিছুই দেখিয়ে দেয়। সাধারণ মানুষ সাদা চোখে যা দ্যাখে না, একজন সাহিত্যকর্মী তা-ও দেখতে পান নিবিড় পর্যবেক্ষণে। এখানেই অন্যের সাথে সাহিত্যকর্মীর ভিন্নতা। এখানেই স্বাতন্ত্র্য। সাহিত্যকর্মী একের মধ্যে অনেককে দেখতে পান, অনেক কিছুই দেখতে পান। দেখতে পারার এই শক্তিই একজন সাহিত্যিককে বড় করে, অনন্য করে। শুধু সাহিত্য করে জীবন চলে না। অতীতেও চলেনি। সবাই তো আর রবীন্দ্রনাথ-মাইকেল নয়। পিতৃ-বৈভব সব লেখকের ভাগ্যে জোটে না। তাই লেখককেও কিছু একটা করতে হয়। এই কিছু একটা করার ‘শৃঙ্খল’ একজন লেখকের জন্য নির্মম নিয়তি।

যে নিয়তির ঘেরাটোপে লেখকের সৃষ্টিকর্ম বাধাপ্রাপ্ত হয়। মূল্যবোধ হয় শৃঙ্খলিত, চিন্তার জগত হয় অবরুদ্ধ। লেখকের ‘বড়’ হওয়ার পথে জীবিকার তাগিদ একটি বড় অন্তরায়। এ অন্তরায় দূর করার সহজ কোনো রাস্তা নেই। বাস্তবতার নিষ্ঠুর অভিঘাতে লেখকের সুন্দর স্বপ্নগুলো বারবার হোঁচট খায়। পা’ পিছলে পড়ে।যারা সুন্দরের আরাধনা করেন তাদের মধ্যে লেখকসমাজ অন্যতম। দেশের এই অন্যতম শক্তিকে টিকিয়ে রাখার দায় যাদের তারাও লেখকের সমস্যা নিয়ে খুব একটা গা করেন না। যা কিছু সুন্দর, যা কিছু কল্যাণকর তা বাঁচিয়ে রাখার দায় যেন শুধুই লেখকের। লেখকের দায় সমাজ নেবে না, রাষ্ট্রও নেবে না। এভাবে সুন্দরের চর্চা সম্ভব নয়; সম্ভব নয় মূল্যবোধের পরিচর্যা করা।রাষ্ট্রের পরিচয় বিকশিত হয় সাহিত্যের মাধ্যমে, সংস্কৃতির মাধ্যমে। রাষ্ট্রের মানুষকে সাহস যোগায় সৃষ্টিশীল সাহিত্য। নজরুলের কবিতা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে, এমনকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কামানের গোলার চেয়ে কোনো অংশে কম ভূমিকা রাখেনি। এই সত্য সবাই স্বীকার করলেও লেখকের মূল্যায়ন সেভাবে স্বীকৃত নয়। রাষ্ট্র যতক্ষণ সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক না হবে ততক্ষণ লেখকের দৈন্য ঘুচবে না। লেখকের দৈন্য না ঘুচলে বড় মাপের সাহিত্যও হবে না। যে রাষ্ট্রে বড় মাপের সাহিত্য নেই, সে রাষ্ট্র ঐশ্বর্যহীন, পশ্চাৎপদ। ঐশ্বর্যহীন ও পশ্চাৎপদ রাষ্ট্রে চিন্তার মুক্তি কখনোই ঘটে না।

এ রকম রাষ্ট্রে প্রগতি মূল্যহীন, মূল্যবোধ পর্যুদস্ত। আর মূল্যবোধ বিবর্জিত রাষ্ট্রের একমাত্র ভূষণ হচ্ছে দারিদ্র্য।দারিদ্র্য ব্যক্তিকে মহান করতে পারে, রাষ্ট্রকে নয়। কল্যাণকামী রাষ্ট্রে দারিদ্র্য হচ্ছে অভিশাপের নামান্তর। দারিদ্র্য মানে শুধু আর্থিক দৈন্য নয়। চিন্তার দৈন্য, মানবিকতার দৈন্য, মূল্যবোধের দৈন্য। এ দৈন্য থেকে মুক্তির প্রধানতম অবলম্বন হচ্ছে সাহিত্য। সাহিত্যের মাধ্যমেই সম্ভব দৈন্যকে অতিক্রম করা।
যারা সেই অতিক্রমের কাজটি করছেন, তাদের অর্থাৎ লেখকসমাজের দারিদ্র্য-মুক্তির বিষয়ে কারো কোনো ভাবনা নেই। যদিও ভাবনাটি একান্তই জরুরী, নিতান্তই আবশ্যক। ক্রীড়া ও খেলাধুলা বলিষ্ঠ জাতি গঠনে ভূমিকা রাখে সন্দেহ নেই। খেলাধুলার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে রাষ্ট্রের পরিচিতি বৃদ্ধি পায়, এতেও সন্দেহ নেই।

এ কারণেই রাষ্ট্র খেলাধুলাকে যথাসাধ্য পরিচর্যা করে, পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ গঠিতও হয়েছে এ কারণেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিয়ন্ত্রণে জেলায় জেলায় এবং থানা পর্যায়েও রয়েছে ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব অবকাঠামো। রয়েছে স্থানীয় কমিটি, কমিটির অনুকূলে বার্ষিক সরকারি বরাদ্দ। সবই ঠিক আছে। এসবের প্রয়োজনও অনস্বীকার্য। একজন ক্রীড়াবিদ তৈরির জন্য রাষ্ট্র প্রতি বছর যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, ক্রীড়াবিদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার জন্য যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, তার ছিটেফোঁটাও কি আছে সাহিত্যের ক্ষেত্রে? নেই। কেন নেই সে প্রশ্ন আজ অবধি কেউ তুলেছেন বলে জানা যায় না। সাহিত্যের বিকাশ সাধনে সবেধন নীলমণি বাংলা একাডেমি রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত হচ্ছে বটে, কিন্তু তার বিস্তৃতি কোথায়?

জেলায় জেলায় ক্রীড়াসংস্থা এবং শিল্পকলা একাডেমির অবকাঠামো থাকতে পারলে বাংলা একাডেমির থাকবে না কেন? ৬৪ জেলায় বাংলা একাডেমির ৬৪টি অফিস এবং অবকাঠামো স্থাপন করা কি খুব কঠিন কাজ? মোটেই নয়। এক্ষেত্রে সদিচ্ছাই জরুরি। দুঃস্থ ও অসহায় সাহিত্যিকদেরকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নামমাত্র সম্মানী প্রদান করলেই সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা হয়ে যায় না। যে সাহিত্য জাতিকে উজ্জীবিত করে, সাহস যোগায়, সুন্দরের স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করে, তার প্রতি রাষ্ট্রের উদাসীনতা শুধু দুঃখেরই নয়, লজ্জারও।

একজন ক্রীড়াবিদ সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান। চাকরির পর খেলাধুলার জন্য অফিসেও পান বাড়তি সুযোগ। কিন্তু সাহিত্য করার যোগ্যতায় কোনো লেখক চাকরি-ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছেন তার একটি উদাহরণও নেই। বরং চাকরির পর একজন সাহিত্যিকের লেখালেখির ক্ষেত্রে নেমে আসে ‘আচরণবিধি’ নামক নিয়ন্ত্রণের খড়গ। সাহিত্যিকের সামনে প্রতিনিয়ত বাধার দেয়াল। কোনোটি দৃশ্যমান, কোনোটি অদৃশ্যমান। চাকরিতে থেকে খেলাধুলা করলে বাধা নেই, বাধা আছে সাহিত্যকর্মে। এই বিপরীত চিত্র লেখকের জন্য অমোঘ ললাট লিখন। নিয়তির খড়গ সবসময় ঝোলে লেখকের ঘাড়ে। এ অনিবার্য নিয়তি থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে হবে। রাষ্ট্র কেন নির্লিপ্ত থাকবে সাহিত্যের প্রতি? সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য রাষ্ট্রকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। ক্রীড়াবিদ তৈরির জন্য রাষ্ট্রের যে পরিচর্যা ও অর্থ ব্যয় তা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও বিস্তৃত করতে হবে। সাহিত্যের জন্য গঠন করতে হবে পৃথক মন্ত্রণালয়। জেলায় জেলায় স্থাপন করতে হবে বাংলা একাডেমির শাখা অফিস।

জাতির মানবিক দৈন্য ঘোচাতে সাহিত্য যদি ভূমিকাই রাখে তাহলে এর প্রতি অবহেলা কিছুতেই কাম্য নয়। লেখককে ‘বড়’ হবার সুযোগ দিতে হবে। সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে দেশ ও জাতির জন্য ‘খ্রিষ্টের সম্মান’ অর্জনে লেখকই পারেন চিত্তের বিকাশ ঘটাতে। রাষ্ট্রের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের ব্যাপারটিকে গভীর ও প্রবল করতে না-পারা সাহিত্যের জন্য অবশ্যই একটা দুর্বলতা। সে-দুর্বলতা সেদিনও ছিল; আজও রয়েছে। মানুষের জীবনের অচরিতার্থতা ও দুঃখকে ( কেবল বৈষয়িক অর্থে নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক ও অনুভূতিগত অর্থেও) নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারেনি। সে জন্য তার স্তরটা রয়ে গেছে বিনোদনের। আর ওই স্তরে যেহেতু টেলিভিশন, ইন্টারনেট ও ভিডিও কাজ করছে আরো জোরেশোরে, সাহিত্য তাই নিজেকে ততোটা প্রয়োজনীয় করে তুলতে পারছে না; যতটা প্রয়োজনীয় হওয়া তার নিজের জন্য তো বটেই, আমাদের সংস্কৃতির জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

দেশে হাল্কা উপন্যাসের পাঠক আছে, গভীর সাহিত্যের পাঠক নেই- এই অভিযোগ রয়েছে। তা গভীর সাহিত্য তেমন একটা লেখা হচ্ছে কি? তেমন সৃষ্টি কোথায় যেখানে চিন্তা, অনুভব, উপলব্ধি, কল্পনা এক হয়ে গভীরতা লাভ করেছে? যা বড়, যেমন দার্শনিকতায় তেমনি নান্দনিকতায়?

রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তির দ্বন্দ্বের জায়গাটিতে তাৎপর্যপূর্ণ রূপে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হলে সাহিত্য সাফল্য আশা করতে পারে না। এ সত্য সব বড় লেখকের লেখাতেই পাচ্ছি আমরা। আমাদের সাহিত্যের একটা বড় দুর্বলতাও সেই ব্যর্থতাতেই নিহিত রয়েছে। সুতরাং মননশীল সাহিত্য ও সাহিত্যিকের যথাযথ মূল্যায়ন আজ সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম ১৯৭৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। কে এম আবদুল করিম এবং মিসেস ফাতেমা করিমের জেষ্ঠ্য সন্তান তিনি। তিনি যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিখ্যাত ওয়েষ্টমিনষ্টার ইউনিভারসিটি থেকে জি.ডি.এল ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি দেশে বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একাধিক ডিগ্রী সহ ট্রেনিং গ্রহন করেন। ছোটবেলা থেকেই রেজাউল করিম লেখালেখি ও গনমাধ্যমের সাথে জড়িত। ছাত্রজীবনে বরিশালের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক প্রবাসী দিয়ে সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি দেন। এর পরে ঢাকায় ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ সাল পযর্ন্ত মোহম্মদী নিউজ এজেন্সিতে তিনি কনিষ্ঠতম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ‘চ্যানেল আই’তে বিজনেস ফাইল এবং এটিএন বাংলায় অর্থনৈতিক পরিক্রমা নামে অনুষ্ঠান উপস্থপনা করতেন। এছাড়া দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক যায়যায় দিন প্রতিদিন ও জনকন্ঠ পত্রিকাও তিনি লেখালেখি করতেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক আমার দেশ (অন লাইন), দৈনিক দিনকাল সহ কয়েকটি অন লাইন মিডিয়ায় নিয়মিত কলাম লিখছেন এবং লন্ডনে কয়েকটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে ‘টক শে’ তে অংশ নিচ্ছেন। সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস এন্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট এব্ং ডেমোক্রেসি সেন্টারের সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে তিনি জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি আর্ন্তজাতিক সম্মেলন, বৈঠক ও আলোচনায় অংশগ্রহন করেন। যার মধ্যে ২০০০ সালে জার্মানির বার্লিনে আয়োজিত এসিসিয়েশন অব নিউজপেপারস ( ডব্লিউ.এ.এন) এবং এডিটরস এন্ড মার্কেটরস কনফারেন্স অন্যতম। এছাড়াও বিভিন্ন প্রোগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম রাশিয়ার মস্কো, ইটালির রোম, স্পেনের মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা, কানাডার টরেন্টো, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, ইটালির রোম, সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়ার কুয়ালালামপুর, আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস এবং যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ সহ বিশ্বের বিভিন্ন শহর ভ্রমন করেছেন। বর্তমানে শিক্ষানুরাগী রেজাউল করিম তার নিজ গ্রাম সাতুরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন ‘ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ’ এবং ‘শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক রিসার্চ ইনষ্টিটিউট’। ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম এক কন্যা সন্তানের জনক। তার স্ত্রী সাদিয়া করিম লন্ডনের একটি বহুজাতিক কোম্পনীতে কর্মরত। একমাত্র মেয়ে রুকাইয়া করিম।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!