দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে বাড়ির ড্রয়ারে অবহেলায় পড়ে ছিল চশমা দুটি। লকডাউনের সময় বাড়ি ঝাড়পোঁছ করতে গিয়ে চশমা দুটি প্রথম নজরে আসে ব্রিটেনের ম্যাঙ্গোসফিল্ড এলাকার এক বয়স্ক লোকের।
জানা গেছে, ১৯১০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামে কাজ করতেন ওই বয়স্ক লোকটির এক খুড়তুতো ঠাকুর্দা। সেই ঠাকুর্দাকে ১৯২০ সাল নাগাদ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী তাঁর এই চশমা দুটি উপহার দিয়েছিলেন।
শোনা যায়, গান্ধীজী প্রায়ই তাঁর ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র পরিচিতদের উপহার স্বরূপ দিতেন। ধারণা করা হয়, এই চশমা দুটিও তিনি হয়তো সেই উপহার হিসেবেই তাঁকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চশমাটির গুরুত্ব বুঝতে পারেননি তিনি। তাই সেই চশমা দুটি তিনি তাঁর ভাইপোর এই ছেলেকে দিয়ে দেন। ভাইপোর এই ছেলেও এটার কদর বুঝতে পারেননি। ড্রয়ারের এক কোণে ফেলে রেখেছিলেন। দেখতে দেখতে নয় নয় করে কেটে গেছে প্রায় ৫০টি বছর।
এত দিন বাদে বাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে সেই চশমা দুটি দেখার পর উনি সেটা বিক্রির জন্য ইস্ট ব্রিস্টল অকশন হাউজের সর্বময় কর্তা অ্যান্ড্রু স্টোকে দেন। দেওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, এটা যদি বিক্রি করা না যায়, তা হলে ফেলে দেবেন। আসলে শুধু ঐতিহাসিক মূল্যই নয়, এটার যে কত দাম হতে পারে সে সম্পর্কেও তাঁর কোনও ধারনা ছিল না। যখন ওই নিলাম সংস্থার মালিক তাঁকে বলেন যে, এই চশমাটির দাম ১৫ হাজার পাউন্ড অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা হতে পারে।
তখন সেটা শুনে তাঁর প্রায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা হয়। কিন্তু সেটা যে তারও সতেরো-আঠেরো গুণ দামে বিক্রি হতে পারে, তা তিনি ভাবতেই পারেননি। ভাবতে পারেননি নিলাম সংস্থার মালিকও।
তাই নিলাম হাউজের চিঠিপত্রের বাক্সে সাদা একটি খামের ভেতরে চশমা দুটি রেখে দিয়েছিলেন।
অ্যান্ড্রু স্টো নিজেই বলেছেন, ‘এটা এত অবহেলায় রাখা ছিল যে, যে কোনও সময় খুব সহজেই চুরি হয়ে যেতে পারত। অথবা ভেঙে যেতে পারত কিংবা আবর্জনার বাক্সেও চলে যেতে পারত।’
গান্ধীজির ব্যবহার করা চশমা শুনেই ফোনে মাত্র ৬ মিনিটের বার্তালাপেই আমেরিকান একজন সংগ্রাহক চশমা দুটি কিনে নেন। ২ লক্ষ ৬০ হাজার পাউন্ড মানে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকায়।
এই মহামূল্যবান চশমা দুটির চারটি ডান্ডাই সোনার জলে রং করা এবং কাচ চারটি যে পাত দিয়ে মোড়া ছিল, সেগুলোও সোনার জল করা। তবে না, সোনার জন্য নয়, এগুলো যদি হিরেখচিতও হত, এত দাম হত না। এই চশমা দুটি নিলামে ওঠার পরে এই পরিমান দাম ওঠার একটাই কারণ, আর সেটা হল— এর ঐতিহাসিক মূল্য আর সেটা গান্ধীজী পরতেন বলেই।