কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং পূর্ব ফলিয়াপাড়া দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্র তৈরি ও মেরামতের কারখানা গড়ে উঠেছিল। র্যাবের অভিযানে সেখান থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। গোলাগুলির ঘটনায় ঘটলেও সেখানে কেউ আহত হয়নি।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান এলিট ফোর্স র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, ‘সম্প্রতি বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের শরণার্থী ক্যাম্প ও আশপাশে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এছাড়া চাঁদাবাজি, বিভিন্ন মাদক ব্যবসা ও লুটপাতের ঘটনা ঘটছে। র্যাবের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, উখিয়ার কুতুবপালং পাহাড়ে মাটি কেটে একটি অস্ত্র তৈরির, মূলত অস্ত্র মেরামতের কারখানা গড়ে উঠেছে। এরপরই র্যব-১৫ সেখানে অভিযান চালায়। সেখান থেকে দশটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার এবং হাবিবুল্লাহ, বায়াত উল্লাহ, মো. হাসনকে আটক করা হয়। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- চারটি এসবিবিএল, একটি শটগান, ৫টি ওয়ানশুটার গান, ১৩ রাউন্ড কার্তুজ, একটি কিরিচ ও চাকুসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম। আটক তিনজন মিয়ানমারের নাগরিক কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আজ রাত তিনটা থেকে সকাল পর্যন্ত এই অভিযান হয়েছে।’
র্যাব মুখপাত্র আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সম্প্রতি সময়ে হামলা ও অবৈধ কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমাদেরও নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। তারপরই উখিয়া থানাধীন ৪ নম্বর রাজাপালং পূর্ব ফলিয়াপাড়া দূর্গম পাহাড়ে অভিযান চালানো হয়।’
গত ২২ অক্টোবর উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ নামের একটি মাদ্রাসায় হামলা চালিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় ছয়জন নিহত হন। নিহতদের সবাই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা সদস্য।
এই ঘটনার রেশ না কাটতেই ২৯ অক্টোবর কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্পের ভেতরে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ মারা যান। এশার নামাজ শেষ করে মুহিবুল্লাহ তার নিজের প্রতিষ্ঠিত আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) এর অফিসে অবস্থান করছিলেন। অফিসের ভেতরে ঢুকে বন্দুকধারীরা তাকে ৫ রাউন্ড গুলি করে। তিন রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ১৯৯২ সালে রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
ক্যাম্প এলাকায় অভিযান অব্যাহৃত থাকবে জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, এই অস্ত্র তাদের কাছ থেকে কারা নিত, অস্ত্রের অপব্যবহার কোথায় হতো আমরা আটকদের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছি। পাশাপাশি র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির কারণে আমরা সেখানে আরও অভিযান করতে পারব।
র্যাবের অভিযানের সময় কোনো হতাহত আছে কিনা জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তিনজনকে আটক করেছি। আমরা আশা করছিলাম সেখানে আরও লোক থাকার সম্ভাবনা ছিল। সেখানে গোলাগুলি হয়েছে, অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে কিন্তু আমাদের কেউ হতাহত হয়নি। তাছাড়া যাদের আটক করেছি, তাদের কেউ হতাহত হয়নি।’