ঘটনাবহুল ও আলোচিত-সমালোচিত ৭ নভেম্বর আজ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে সৃষ্ট রক্তাক্ত ঘটনাপ্রবাহ এদিন নতুন এক পর্যায়ে উন্নীত হয়। রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের বিবেচনায়, অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানসহ রক্তপাতময় উত্থান-পতনের স্রোতে এদিন বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তার ক্ষমতা সংহত করতে সক্ষম হন এবং রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। এবার এ দিনটির ৪৬তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে।
তবে সে সময়ের ঘটনাপ্রবাহে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাখ্যা অনুযায়ী এ দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত হয়। বিএনপি দিবসটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। আর জাসদ ‘সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’এবং আওয়ামী লীগসহ একাধিক সংগঠন ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে এ দিনটি পালন করে থাকে।
ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরকে ঘিরে রয়েছে নানা ঘটনা। জড়িয়ে আছে রক্তপাতের ইতিহাস। এই দিনের জের ধরে কাউকে ঝুলতে হয়েছে ফাঁসিতে। প্রাণ দিতে হয়েছে হাজারো সৈনিককে। ৭ নভেম্বরের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মাত্র ৭৮ দিন পর সেই অশুভ শক্তিই ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী চার জাতীয় নেতাকে। একে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা সেনানিবাস।
এই প্রেক্ষাপটে ৩ থেকে ৭ নভেম্বর সামরিক বাহিনীর মধ্যে একাধিকবার অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা ও জওয়ানের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। ৭ নভেম্বর সংঘটিত এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) আবু তাহের বীরউত্তম। বন্দিদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন তিনি।
কিন্তু এরপর দ্রুত নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে পুনরায় সেনাপ্রধানের পদে আসীন হন জিয়া। জিয়াউর রহমান প্রথমে উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ দখল করেন। এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ আবু সায়েমকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি হন জিয়া। তবে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা সুসংহত হওয়ার পর দেশদ্রোহের অভিযোগে কোর্ট মার্শালের বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় কর্নেল তাহেরকে। তিনি ছিলেন তৎকালীন বিপ্লবী গণবাহিনীর প্রধান।
গত ৪৫ বছরের অধিকাংশ সময় দিবসটি সরকারিভাবে পালিত হয়েছে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দিবসটি ছিল সরকারি ছুটির দিন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে আবারও এই দিনে সরকারি ছুটি বহাল করা হয়।
২০০৭-এ ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ২০০৬ সালের সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সে বছর দিনটিতে সরকারি ছুটি বহাল ছিল। তবে পরের বছর ২০০৮ সালে ছুটির তালিকা থেকে দিবসটি বাদ রাখা হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সাল থেকে দিনটিতে সরকারি ছুটি পালিত হচ্ছে না।