জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে বাস চলাচল বন্ধের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কগুলোতে বেড়েছে রিকশা, সিএনজি ও মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য। দ্বিতীয় দিনের ধর্মঘটে সড়কে বের হওয়াদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বিকল্প হিসেবে বাধ্য হয়ে যারা এসব বাহনে উঠছেন তাদেরও গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। আবার বাধ্য হয়ে অনেকেই হেঁটেই রওনা দিচ্ছেন গন্তব্যে। সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, সরকার জনগণকে এভাবে ভোগান্তিতে না ফেলে অতি দ্রুত এ ব্যাপারে যেন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।
শনিবার (৬ নভেম্বর) রাজধানী মিরপুর, ধানমন্ডি, আসাদগেট, শ্যামলী, আগারগাঁও, মিরপুর ১০, ফার্মগেটসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন অলিগলিগুলোতে চলছে রিকশার দৌরাত্ম। গন্তব্যে যেতে রিকশাচালকরা হাঁকছেন অতিরিক্ত ভাড়া। আর এক একটি সিএনজি দেখলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। এ সুযোগে বেশি ভাড়া চাইছেন সিএনজিচালকরাও। একই অবস্থা ভাড়ায় চালিত মোটরবাইকগুলোরও।
পরিবহন-ধর্মঘট
গতকাল শুক্রবার থেকেই শুরু হয়ে ধর্মঘট। তবে প্রথমদিন ছুটির দিন হওয়ায় খুব একটা প্রভাব পড়েনি জনজীবনে। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। আজ তাদের ভোগান্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও জরুরি সেবা সংস্থার কর্মীরাও। সকাল থেকেই তাদের সড়কের মোড়ে মোড়ে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
বাস বন্ধ থাকলেও চালু রয়েছে সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাস। যাতে করোনার এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানাতো দূরে থাক কোনোরকম জায়গা পাওয়াই যেন হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর কোনও একটি বাস আসলেই হুড়োহুড়ি করে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ওঠা শুরু করছেন অপেক্ষারতরা। প্রতিটি বাসেই দেখা গেছে ভিড়।
শ্যামলী থেকে উত্তরায় অফিস করেন বেসরকারি একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্যামল। উত্তরায় নামার পর কথা হলো এই যুবকের সঙ্গে। তিনি জানালেন, সকালবেলা বাসা থেকে বের হয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা রাস্তায় অপেক্ষা করেছি। সবশেষ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে একটি সিএনজিতে ঠিক করলাম। শ্যামলী থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে উত্তরা আসলাম। বাস চলাচল বন্ধের সুযোগে যে যেভাবে পারছে এই সুযোগের অপব্যবহার করে চলেছে।
মিরপুরে কথা হয় আরেক যুবক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। পেশায় ব্যাবসায়ী সাইফুল বললেন, ‘বাস চলাচল বন্ধ আছে। এই সময় এই যে সিএনজি এবং রিকশার অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে, এগুলো নজরদারির জন্যতো কাউকে দেখছি না। কল্যাণপুর থেকে প্রতিদিনই আমাকে কাজের জন্য মিরপুরের দিকে যেতে হয়। রিকশায় যেখানে প্রতিদিন ৪০ টাকা করে যেতাম, গত দু’দিন ধরে বাস বন্ধ থাকায় সেখানে আমাকে যেতে হচ্ছে ৮০ টাকা করে।
মোহাম্মদপুরের একটি সরকারি কলেজের শিক্ষক রেজাউর রহমান। সকালে জরুরি কাজে কলেজের উদ্দেশে বের হয়েছেন তিনি। এই শিক্ষকের ভাষ্য, ‘রাস্তায় যা চলছে তা রীতিমতো এক ধরনের ডাকাতি। গন্তব্যে যেতে রিকশা, সিএনজি কিংবা মোটরসাইকেলে ভাড়া চাইছে দ্বিগুণেরও বেশি।