পর্ব – একুশ: আঁধার পাহাড়ে জেগে উঠল চন্দন রোশনির উদ্যান
প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্রের জন্য ভাড়া ফ্ল্যাটে এসে অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার মুখে গার্ডের মুখোমুখি হতে হলো উর্বশীকে। কম বয়সী এক নিরাপত্তারক্ষী, অতি উৎসাহী হয়ে বলল, ‘গতকইল গোয়েন্দা পুলিশ আইছিল আপনাগোর লগে কথা কইতে।’
থমকে দাঁড়িয়ে উর্বশী জিজ্ঞেস করল, ‘কী বলল? কী খোঁজ নিয়েছে?’
‘কোনো পুরুষ মানুষ রাইতবিরাইতে আমনে গো ফ্লাটে যাইত কিনা জিগাইল।’
‘তুমি কী বললে?’
‘কইছি কুনু হুরুষ মানুষ ঢুকতে দেহিনি। তয়, একদিন মাইঝ রাইতে দুইজন ঢুইকা আক্রমণ করছিল আপনাগো।’
‘বলোনি যে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে তাদের ধরতে পারোনি?’
‘কইছি। তয় হেরা আঙ্গো কথা বিশ্বাস করেনি। উল্টা কইল আক্রমণকারী নয়, যারা হেই রাইতে ঢুকিছিল ঘরে, হেরা আপনাগো হরিচিত।’
নিরাপত্তারক্ষীর কথা শুনে অবাক হলো না। বুঝল তদন্তকাজেও খোঁজা হচ্ছে বাজে আঙ্গিনা- কেবল সাপ ধরতে চায় না গর্ত খুঁড়ে, দুর্গন্ধও বের করতে চায় তারা, ছড়িয়ে দিতে চায় দুর্গন্ধের ঝাঁঝ। তদন্তের পেছনে তদন্ত করার প্রয়োজনীয়তা উড়িয়ে দিতে পারল না ও। ভেঙে না গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের উদ্দেশে আবার প্রশ্ন করল, ‘তোমাদের ধারণা কী? লোক দুটো কী আমাদের পরিচিত ছিল, তাই ভেবেছিলে তোমরা?’
উর্বশীর তেজী কথার দাপটে চুপ হয়ে গেল ওরা। এ নীরবতার অর্থ খোলাসা হলো না ওর কাছে। তবে বুঝল পুলিশের কথাই বিশ্বাস করেছে তারা। একা থাকার দুর্বিনীত ইচ্ছায় ঘটছে কালিমালেপন। সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে রঙ চড়ানোর ঘটনা ঘটছে। একেই কি তবে বলে তদন্ত? সাদা পাথরও তবে কালো হয়ে যেতে পারে তদন্তের নামে? আর কালো পাথর হয়ে যেতে পারে সাদা? ভাবনার আড়াল থেকে ক্লান্তির ডানা বেরিয়ে এলো। ভেতরের তেজ কমে যেতে লাগল। কমতি তাগিদ নিয়ে লিফটে চড়ে এলো ফ্ল্যাটের সামনে। ঢুকেই বুঝল লুকিয়ে কেউ ঢুকেছিল ঘরে। তন্ন তন্ন করে হয়ত তারা খুঁজেছিল অনৈতিক জীবনের প্রমাণচিহ্ন। পাওয়ার কথা নয়। তবে না-পাওয়া বিষয়কেও তারা ঘাটাতে জানে, পাওয়ার চেয়ে বেশি কিছু পাওয়ার অভিনয় করতে জানে। পেয়েছি ভেবে তৃপ্তির ঢেউ তুলতে জানে। সেই ঢেঁকুরে অন্যের মান-মর্যাদার ক্ষতি হলে হোক- এমন মনোভাবই সক্রিয় থাকে তদন্তের নামে অশুভ হাতে। ওই হাত গুঁড়িয়ে দিতে হবে। ভেঙে পড়লে চলবে না। লুকিং গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে তাকাল গ্লাসে প্রতিফলিত নিজের দিকে। চোখের কর্নিয়ার ভেতর ঢুকে থাকা মাইক্রোচিপ থেকে ছড়িয়ে যেতে লাগল নতুন আলোর কণা। সেই কণা কি স্পর্শ করেনি অর্ণবকে? সাড়া পাচ্ছে না কেন তার?
আবার তাকাল গ্লাসে প্রতিফলিত নিজের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে আবার প্রশ্নের উদয় হলো- কারা হতে পারে মধ্যরাতের দুই আক্রমণকারী? শত্রু চিহ্নিত না হলে আবার আঘাত আসতে পারে। আঘাত মোকাবিলার কৌশল ভেবে রাখতে হবে। অথবা রণেভঙ্গ দিয়ে পালাতে হবে বারবার। একা থাকার আকাক্সক্ষা ত্যগ করে পিছু হটতে হবে। মধ্যরাতে ফ্ল্যাটের সিঁড়িতে আক্রমণকারী নিশ্চয়ই হিকমত আবসারির লোক নয়। অ্যাপার্টমেন্টের কেউ অথবা তাদের কেউ ফলো করেছে আক্রমণের আগে, এমনও হতে পারে। হিমাদ্রির পক্ষে কি সম্ভব? অর্ণব হারিয়ে যাওয়ার পর সহযোগিতার প্রলেপ দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল হিমাদ্রি। তার ঝোঁক ছিল শরীরের দিকে। সুযোগ নেওয়ার চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু অর্ণবের আলোর পরশ পাওয়ার পর, ইলেকট্রিসিটির শক খেয়ে ভয় পেয়ে লেজ গুটিয়ে নিয়েছে হিমাদ্রি। এত ভীতু কারো পক্ষে লোক নিয়োগ সম্ভব নয়। অথচ হিমাদ্রির সঙ্গে ক্ষণকালীন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটাও চলে গেছে তদন্ত দলের হাতে। যে কোনো তদন্তে এভাবে তাহলে উঠে আসতে পারে মানুষের একান্ত গোপন জাগতের খবর- কালো-সাদা বিবেচ্য নয়, ঘটনার রস চিপে বের করবে তদন্তকর্মকর্তা। ক্রিমিনাল ধরতে ধরতে তাদের মনের শুদ্ধতাও কি কালোর দোষে দুষ্ট হয়ে যায়? সাদা দেখার ক্ষমতা হারিয়ে যায়?
আচমকা একটা ছায়া ভেসে উঠল লুকিং গ্লাসে। দরজার ফাঁকে কে যেন উঁকি দিয়ে চট করে সরিয়ে ফেলেছে মাথা। আঁচ করতে পেরে ঘুরে দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়াল ও। ক্ষণকালের জন্য নির্ভীক মনে খেলে গেল ভয়ের শিহরণ। শরীরে আকস্মিক তৈরি হলো উচ্চচাপ- রোম খাড়া হয়ে গেল সজারু কাঁটার মতো। কাঁটার অগ্রভাগ পরিণত হয়ে গেল লাভা উদগীরণের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ছিদ্রে। ছিদ্র বেয়ে শাঁ শাঁ শব্দের গতিতে বেরুতে লাগল অগ্নিলাভা। জ্বলে উঠল অদেখা আগুন। দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে গেল সে দরজার দিকে।
না। কেউ নেই। যতটুকু পর্যন্ত দেখা যায় সিঁড়ির, কোনো ছায়া নেই!
কেউ কি ছিল? কোথায় গায়েব হয়ে গেল! এত দ্রুত তো লিফট খোলার কথা নয়। হঠাৎ ভয়ের ঝলকানি খেল ও। বিরোধীদলের হরতাল অবরোধ বোমাতঙ্কের রেড অ্যালার্ট যেমন সরকারপক্ষকে হার্ডলাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে, নিজের সত্তার ভেতর থেকে তেমনি এক দুর্দমনীয় ডাক শুনতে গেল উর্বশী। নিজেকে রক্ষার অন্তর্গত কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনী ভেঙে খান খান হয়ে গেল। তবু শ্বাস বন্ধ করে ছুট দিল লিফটের দিকে। লিফটের সিগনাল দেখে বুঝল দশ তলায় দাঁড়িয়েছে লিফট। কেউ কি এখান থেকে দশ তলায় নেমেছে? উড়াল প্রশ্নের চেয়েও দ্রুতগতিতে সিঁড়ি ভেঙে নেমে এলো দশ তলায়। না। নেই। দশ তলার বারান্দায় দেখা গেল না কোনো মানুষজন। লিফটের সিগনাল দেখে বুঝল নিচে নেমে যাচ্ছে লিফট। কী করবে না বুঝে জিদ চাপা রেখে সিঁড়ি বেয়েই ফিরে এলো নিজের ফ্ল্যাটে। আবার দাঁড়াল লুকিং গ্লাসের সামনে। মুখের ওপর বসে আছে উদ্বেগের রোদ্দুর। বারুদবিহীন শলতেয় আগুন জ্বলে উঠার মতো জ্বালানির প্রলেপ মিশে আছে তাতে। না জ্বলে উঠে নিভে যাক আগুনশিখা- এমন ইচ্ছা নিয়ে তাকাল নিজের চোখের দিকে; মণি থেকে বেরুতে দেখল রমণীয় শিল্পকৃতির অনুপম চন্দন রোশনি। আনন্দের ঝলক উঠল চিত্তে, ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি লেগে ঝলমল করে চিত্ত’- এমন রবীন্দ্র অনুভবে শান্তি ছড়িয়ে গেল মনে। তখনই শুনল দূর দেশ থেকে ভেসে আসা ক্ষীণতরঙ্গের টিক টিক শব্দের আনন্দবার্তা। তরঙ্গধ্বনির অস্পষ্টতা ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে, স্পষ্টতর হতে হতে পূর্ণমাত্রার অনুকম্পন ছড়িয়ে দিল দেহ-মনে। আনন্দের অভাবে মনে জেগে উঠেছিল উদ্বেগ, আলোর অনুপস্থিতিতে কালো ছায়াময় হয়ে গিয়েছিল চলার পথ, সব ছাপিয়ে এখন নতুন রোশনি ছোঁয়ায় কানেক্ট হয়ে গেল ও অর্ণবের সঙ্গে। সংযোগ স্থাপিত হলেও সহস্র কোটি চিকচিক ধ্বনির আড়ালে ডুবে রইল অর্ণব। মনে মনে উর্বশী বলল, ‘কী করব অর্ণব? মগজে ঢুকিয়ে দাও নতুন সংকেত, পাশে দাঁড়াও দুঃসময়ে।’
না, পাশে দাঁড়াল না; সাড়া পেল না সে অর্ণবের।
দূরবর্তী শব্দরাজি চুম্বকের মতো টেনে রেখেছে অর্ণবের বোধশক্তি। শব্দের উৎসস্থল লক্ষ্য করে স্রোতশক্তির টানে ছুটে চলেছে ও জাভা সাগরের দিকে। এই টানের কারণে উর্বশীর দিকে নজর দিতে পারছে না। সর্বোচ্চ জরুরি কাজটিই ও শেষ করতে চায় আগে- তাড়নায় অর্ণবের দেহের আলোক তরঙ্গকণায় রাডারের মতো ধরা পড়ছে এয়ারএশিয়া ইন্দোনেশিয়ার ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১-এর ১২টি ধ্বংসাবশেষ। ভাসমান সব টুকরো এক ঝলক দেখে নিয়ে ছুটে গেল সে তীক্ষ্ণ শব্দ প্রেরণকারী পুচ্ছ হিসেবে পরিচিত উড়োজাহাজের শেষ অংশের দিকে। কাছে গিয়ে বুঝল এখানেই সংরক্ষিত আছে উড়োজাহাজটির ব্ল্যাকবক্স। নিজের তরঙ্গদ্যুতিতে শব্দগুচ্ছের বুদবুদ ধরা পড়লেও উদ্ধারকারী ডুবুরি দলের ‘সোনার স্ক্যান যন্ত্রে’ ঢুকছে না সুরক্ষিত ব্ল্যাকবক্স সৃষ্ট শব্দতরঙ্গ। ড্রাইভ দিয়ে ব্ল্যাকবক্সের কাছে পৌঁছানোমাত্রই উল্লাসধ্বনির মতো ছড়িয়ে যেতে লাগল টিকটিক শব্দের শোরগোল। শব্দঢেউ মিশে গেল আলোর ঢেউয়ের সঙ্গে। সেই শব্দের শোঁ শোঁ আওয়াজ পৌঁছতে লাগলে উর্বশীর শ্রবণেন্দ্রিয়ে, তালা লেগে যেতে লাগল তার কানেও। শব্দের উৎপাত ঠেকাতে এক ঝটকায় রুমের দরজা বন্ধ করে দিল ও। ভয়ের শিহরণ উঠল।
অর্ণব নতুন কোনো বিপদে পড়েনি তো? উর্বশীর ভাবনাজগতের এ প্রশ্ন পৌঁছে গেল অর্ণবের বোধে। উদ্ধারকাজে মগ্ন হলেও এবার সাড়া পাঠাল ও, বিপদ নয় ভালো কাজে এখন সহযোগিতা করছি ডুবুরিদের।
প্রাথমিক তদন্তের স্থল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে উল্টো দিকে মুখ করে বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজছে ডুবুরি দল। ব্ল্যাকবক্সের শব্দঢেউ ও ঘুরিয়ে দিল ডুবুরি দলকে নিশানা করে। সঙ্গে সঙ্গে ডুবুরি দলের ‘সোনার স্ক্যান যন্ত্র’ সক্রিয় হয়ে উঠল। তারা ছুটে আসতে লাগল ভগ্নস্তূপের দিকে।
কাছে এলে কি ওকে দেখে ফেলবে ডুবুরিদল? এমনি প্রশ্নে বিস্ময় জেগে উঠল, যখন দেখল তারা ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করছে, উদ্ধার করছে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার আর ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার কিন্তু একবারও ফিরে তাকাল না তার দিকে। জলজগতের অর্ণব কি তবে থেকে গেল তাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে!
অর্ণবের বোধের জগতে ঘূর্ণি উঠল। নতুন ঢেউয়ে নতুন শব্দের অণুকণা সাগরজলে মিশে যেতে লাগল অশ্রুকণারূপে।
হা হা করে উঠল মন। উর্বশী স্পষ্টই শুনল কান্নাধ্বনি। মনে হচ্ছে শিশুদের মতো করে কাঁদছে অর্ণব। আর তার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে সহস্র উড়োজাহাজের ঝাঁক। উড়ালশব্দে ভর করে ঝড়ের মতো ছুটে আসছে কান্নার রোল।
প্রথম যখন উড়োজাহাজটি সাগরে ঢুকে গেল, কাছে এসে দাঁড়াল, উদ্ধার করার কথা বলল পাইলটের সঙ্গে, তখন এমন বোধ জাগেনি কেন? তখন ব্ল্যাকবক্স সৃষ্ট শব্দরাজি কেন ধরা পড়েনি তার বোধের জগতে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। আকস্মিক চিন্তার ঝড় থেমে গেল। শিশুর কান্নার রোল উৎকীর্ণ হয়ে ছড়িয়ে যেতে লাগল টাইডাল স্রোতের ভেলায় চড়ে; বাতাসশক্তির ঢেউতরঙ্গে মিশে যেতে লাগল সাগর আর মর্ত্যলোকে। সবুজ প্রকৃতিতে সাড়া পড়ে গেল, গাছে বিশ্রামরত ঘুমন্ত পাখির দলও আচমকা জেগে উঠে উড়াল দিয়ে আকাশে ডানা মেলে বাতাসশক্তি থেকে শব্দতরঙ্গ ধারণ করে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যেতে লাগল জাভা সাগরের দিকে। পানিতে ডুবন্ত এক শিশুর কান্না শুনতে পাচ্ছে তারা। শিশুর কান্না ছুঁয়ে যাচ্ছে উর্বশীর মনোজগৎও।
অর্ণব কি শিশুর রূপ ধরে কাঁদছে, ফিরে আসতে চায় তার কাছে? ভাবল উর্বশী।
বদ্ধ দরজা খুলে দিল ও। ফ্ল্যাটের ছাদে এসে দাঁড়াল। খোলা আকাশে শ্বাস নিলো বুক ভরে। আর তখনই দেখল ছাদে উঠে এসে পাশে দাঁড়িয়েছে এক তরুণ।
‘হাই! দিস ইজ অপু। তের তলার বাসিন্দা।’
ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠল, পরিচিত হওয়া তরুণের দিকে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে ভেসে বেড়ানো কান্নার রোলও থেমে গেল।
‘দিস ইজ উর্বশী, চৌদ্দ তলায় থাকি।’
‘হ্যাঁ। জানি। আপনারা দুজন থাকেন ওই ফ্ল্যাটে। একজন হসপিটালে। তিনি…।’
‘ওঃ। সব জানেন!’
‘বাহ! জানব না! খবরের কাগজে বিস্তারিত লেখা হয়েছে আপনাদের নিয়ে। এখনও লেখা হচ্ছে।’
দমে গেল উর্বশী। আকাশের রোদ আকস্মিক ঢেকে গেল আঁধারে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ও সামনে দাঁড়ান তরুণটি থেকে। আপন তন্ময়তার মধ্য থেকে দেখল কল্পজগতের রেখাচিত্রের প্রায়োগিক বাঁকের নানামুখী গলি। মুখোমুখি গলিতে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব।
একটি শিশু কোলে নিয়ে হাসছে অর্ণব!
কার শিশু এটি! জলজগতেও কি আছে তবে মানবজগৎ? সন্তানটি কি অর্ণবের?
প্রশ্নের তোড়ে উর্বশী উড়ে গেল চিন্তার এক কালো পাহাড়ে। ধীরে ধীরে পাহাড়টা সাদা হতে লাগল। আর ধবধবে সাদা পাহাড়ে উর্বশী দেখল আলোর ঝলক। সাগর থেকে সেই পাহাড়ের চূড়ায় ১১ মাস বয়সী এক শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব। সেই পাহাড় থেকে বাঁকানো চন্দন রোশনির দ্যুতি মিশে গেছে সাগরে।
আকস্মিক বোধের ক্যানভাসে ভেসে উঠল নতুন তথ্যের ইমেজ- জাভা সাগরে ৮৫০১ এয়ারএশিয়া ফ্লাইটে ছিল একটি শিশু। আলোর মানবরূপেই কি সে শিশু আশ্রয় পেয়েছে আলোর দেহে গড়া নতুন অর্ণবের আবেগে। তাহলে একা আর নয় সে। ওই শিশুই কি হবে তার জলজীবনের অস্তিত্ব রক্ষার নতুন প্রেরণা-উৎস?
ভাবনার ফাঁক গলে ছড়াতে লাগল নতুন চন্দন রোশনি। এ রোশনি কেবল অর্ণবের। কেবলই অর্ণবের।
চলবে…