চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই অর্থনীতির প্রধান তিন সূচক‑ আমদানি, রফতানি ও রাজস্ব আয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় এই বছরের সেপ্টেম্বরে আমদানি বেড়েছে ৫০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। একইভাবে গত বছরের অক্টোবর মাসের তুলনায় এই বছরের অক্টোবরে রফতানি আয় বেড়েছে ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এছাড়া রাজস্বের পালেও হাওয়া লেগেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে আমদানি ব্যয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৪৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। একইভাবে অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাসে রফতানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বরে ৬৪৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এদিকে অক্টোবরে ৪৭২ কোটি ডলার পণ্য রফতানি করেছেন দেশের উদ্যোক্তারা। অতীতে আর কোনও মাসেই এ পরিমাণ পণ্য রফতানি হয়নি। সেপ্টেম্বর মাসে তারা ৪১৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিলেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা দীর্ঘদিনের স্থবিরতা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকেই আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন উদ্যমে উৎপাদন কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সে কারণেই একদিকে রফতানি আয় বাড়ছে, অন্যদিকে শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ (ক্যাপিটাল মেশিনারি) সব ধরনের পণ্য আমদানিই বেড়ে গেছে; বাড়ছে এলসি খোলার পরিমাণও।
তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১ হাজার ৫৭৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। এই চার মাসে তৈরি পোশাকপণ্য রফতানি থেকে আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে।
তথ্য বলছে, অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে ১ হাজার ২৬২ কোটি ১১ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে নিটওয়্যার পণ্য রফতানি করেছে ৭২১ কোটি ডলার, এ খাতের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ শতাংশ। আর ওভেন পণ্য রফতানি হয়েছে ৫৪১ কোটি ১০ লাখ ডলারের, এই খাতে প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ।
এছাড়া ব্যাংকগুলোতে ঋণপত্র বা এলসি খোলারও হিড়িক পড়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, আমদানি, রফতানি ও রাজস্ব আয় ‑ অর্থনীতির এই তিন সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরে। এটি হয়েছে মূলত দীর্ঘ দিনের স্থবিরতা থেকে বের হয়ে আসার কারণে।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগস্টের চেয়ে সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ৬১০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাইয়ের চেয়ে আগস্টে বেশি এসেছে ৩ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ০৩ শতাংশ। আর অর্থবছরের প্রথম তিনমাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রথম প্রান্তিকে প্রধান তিন খাত কাস্টমস, মূসক ও আয়কর থেকে মোট ৫৮ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা প্রায় ৮ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা (১৬.৭২ শতাংশ) বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। আগস্টে রাজস্ব হয়েছিল ১৯ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে আহরণ হয়েছিল ১৫ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুনে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। জুলাইতে প্রবৃদ্ধি হয় ৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। আগস্টে প্রবৃদ্ধি ২৪ দশমিক ৫৮ এবং সেপ্টেম্বরে ২০ দশমিক ০৩ শতাংশ। ( সূত্র বাংলাট্রিবিউন )