যতই বলা হোক কালীপুজো মানেই কামরূপ-কামাখ্যা, যতই প্রচার করা হোক বারাসতের মতো অত বড় বড় মা কালীর মূর্তি আর কোথাও হয় না, যতই বলা হোক অমুক মন্দিরের কালী বেশ জাগ্রত, আসলে পৃথিবীতে যত রকমের কালীমূর্তি আছে এবং যে আদলগুলো কোত্থাও নেই, সেই সব কালী মূর্তিকেও আপনি যদি এক জায়গায় দেখতে চান, তা হলে কালীপুজোর রাতে কিংবা তার পরের দু’দিনের মধ্যে যে কোনও একদিন আপনাকে যেতেই হবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে। কেওড়াতলা ব্রিজের ও পারে, চেতলায়। যেখানে এখনও প্রতি শনি-মঙ্গলবার হাট বসে। মশারি, মাছ ধরার জাল আর বরশির জন্য প্রসিদ্ধ। কালীপুজোর সময় এক দল আরেক দলকে টেক্কা দেওয়ার জন্য আমাদের জানা নানা রূপের বাইরেও এখানে মনগড়া অজস্র কালী-রূপের আরাধনায় মেতে ওঠে বিভিন্ন ক্লাব-সংগঠন।
ডুব দে রে মন কালী বলে, সারা এলাকা ডুবে যায় আলোর রোশনাই আর আতশবাজির প্রবঞ্চময় জগতে। কোথাও রাবণ কালী, কোথাও অগ্নি কালী, কোথাও আবার নেপালি কালী। দেবীর যে রূপ যাঁদের পছন্দ, তাঁরা সেই মূর্তিতেই দেবীর আরাধনা করেন।
শুধু শাস্ত্রমতে বর্ণিত রূপই নয়, রকমারি চেহারা ও বেশভূষার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে তার বাইরেও আরও অনেক মূর্তির অবতারণা করে দক্ষিণ কলকাতার এই ছোট্ট অঞ্চল। জায়গাটি ভারী অদ্ভুত। যেখান থেকেই রওনা হোন না কেন, কোনও না-কোনও সেতু পেরোতেই হবে। সে চিড়িয়াখানা সংলগ্ন জিরাট সেতুই হোক বা কালীঘাট ব্রিজ নামে পরিচিত, আলিপুর জেল ঘেঁষা সেতুই হোক কিংবা কেওড়াতলা মহাশ্মশানের সামনের শহিদ যতীন দাস সেতু। আসলে এলাকাটিকে গোল করে ঘিরে রয়েছে আদি গঙ্গা।
এটুকু জায়গার মধ্যে যত বড় বড় মাপের নানা রকম রূপের এবং গা ঘেঁষাঘেঁষি করে যতগুলো প্রতিমার পুজো হয়, পৃথিবীর আর কোথাও তা হয় না। শুধু চেতলা ঘুরলেই দেবীর সকল রূপ দর্শন হয়ে যায়। যেন মা দুর্গার চারপাশে ঘুরে গণেশের পৃথিবী দর্শন। কালীর কোন রূপ নেই এখানে? জহুরা, চামুণ্ডা, ষোড়শী? কিছুই বাদ যায় না।
চেতলা থেকে যে ডিরোজিও সেতুটি নিউ আলিপুরের দিকে গেছে, তার গোড়াতেই আলিপুর আরাধনা সমিতি। পুজো হয় ক্লাবের ঘেরা জায়গায়। ৯০/এ, আলিপুর রোডে। এরা করে চামুণ্ডা কালী। ষোলো ফুট উঁচু প্রতিমার পাশে দশ ফুট শিব। দেবীর বিকট মূর্তির পাশে এক হাঁটু গেড়ে জোড় হাতে প্রণামের ভঙ্গিমায় বসে থাকে শিব। দু’দিকে থাকে ভয়াল চেহারা নিয়ে ডাকিনী যোগিনী। মণ্ডপের ভিতরে তীব্র অটোমেটিক আলো জ্বলে আর নেভে। মনে হয় দেবী যেন ঘাড় ঘুরিয়ে এ দিক-ও দিক তাকাচ্ছে। খানিকটা আতঙ্কের পরিবেশ। তবে ভক্তজন ভীত হবেন, না মুগ্ধ হবেন, বলা মুশকিল। এদের বাজেট প্রতি বছরই কিছু না কিছু বাড়ে। চেতলা সেন্ট্রাল রোড আর আলিপুর রোডের সংযোগস্থল থেকে একেবারে নিউ আলিপুর থানা পর্যন্ত, এরা যে আলোর ব্যবস্থা করে, তাতে চোখ আর মগজ দুই-ই গুলিয়ে যায়।
এর পাশেই, ৭০, আলিপুর রোডে রয়েছে দেবব্রত স্মৃতি সংঘ। এরা করে সিংহবাহিনী কালী। বেশ কয়েক বছর হল ক্লাবের ছোটরাই পুজো করছে। ফলে আগের মতো অতটা জাঁকজমক হচ্ছে না বটে, তবে কোনও অংশে কমও হচ্ছে না।
এখান থেকে গাড়ি রাস্তা পেরোলেই গোবিন্দ আঢ্য রোড। শুরুতেই ৭৩/জি, আলিপুর রোডের শেতলা স্মৃতি সংঘ। এরাও করে সিংহবাহিনী কালী। চেতলায় কালির এই রূপ এরাই প্রথম করে। আসলে এটা রাজপুরের দুলাল বাবার চণ্ডী মন্দিরের প্রতিমার আদলে তৈরি বিপত্তারিণী চণ্ডী। প্রতিমা মোটামুটি চোদ্দো ফুটের মতো হয়। পাল্লা দিয়ে মণ্ডপও হয় কুড়ি-বাইশ বুকের ওপর। এই পথ দিয়ে আরও মিনিট দেড়েক এগোলে ৭, গোবিন্দ আঢ্য রোডের ইয়ং ইনস্টিটিউট। এখানে হয় দক্ষিণেশ্বরের কালী। এরা প্রতিমার মাপের দিকে খুব একটা নজর দেয় না। মুকুট-টুকুট নিয়ে মেরেকেটে পাঁচ কি সাড়ে পাঁচ ফুট। তবে এদের মূল আকর্ষণ মণ্ডপের ভেতরটা। এমন নিখুঁত ভাবে করে, যেন ভিতরে ঢুকলেই দর্শনার্থীদের মনে হয় তাঁরা চেতলায় নয়, দক্ষিণেশ্বরে এসেছেন। আর এটা বজায় রাখার জন্যই মণ্ডবের বাইরের দিকটা জমকালো করে কিংবা আলোর ঝর্না দিয়ে ধাঁধিয়ে দিতে চায় না। প্রতি বছরই পুজোর আগের দিন সন্ধ্যায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পুজোর সূচনা হয়।
কয়েক পা এগিয়ে ডান দিকে ঘুরলেই ৭৮/বি, পেয়ারী মোহন রায় রোডের চেতলা যুব সংঘ। পাশেই ২৪ পল্লির একচিলতে খোলা জায়গা। এখানে দশ মহাবিদ্যার পূজা হয়। নামের মধ্যে দশ সংখ্যার উল্লেখ থাকলেও আসলে মূর্তি থাকে এগারোটি— শ্যামা, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গিনী, কমলা এবং আদিকালি অর্থাৎ শ্মশান কালী। এদের প্রতিমাগুলোর মাপ ছ’ফুট করে হয়। মণ্ডপ চোদ্দো ফুটের মতো। প্রস্থে কম করেও ষাট-পঁয়ষট্টি ফুট। প্রতিবারই এখানে পুজো করতে আসেন রামকৃষ্ণ সারদা মিশন বা জয়রামবাটীর কোনও না-কোনও এক মহারাজ। পুজো হয় বৈদিক নিয়মে। চলে সাত দিন ধরে। প্রতিদিনই হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নানা রকম প্রতিযোগিতা। মণ্ডপের দু’পাশের রাস্তাই থাকে আলোয় আলোময়।
আরেকটু এগোলে সতেরো নম্বর বাসস্ট্যান্ড। আঠাশ-তিরিশ বছর আগে এখানে খুব ধুমধাম করে পুজো হত। সন্ধে থেকেই ভিড় উপচে পড়ত। এখন অবশ্য অতটা হয় না। আয়োজক ৮৭/এ, পেয়ারী মোহন রায় রোডের জাগৃতি সংঘ। ছ’ফুট মাপের দশ হাত কালী। দশ হাত মানে দেবীর দশটা হাত। না, শুধু প্রতিমাই নয়, এদের বিশেষত্ব হল মণ্ডপ। প্রতিবারই কোনও না-কোনও মন্দিরের আদলে তৈরি হয়। মাঝে মাঝে প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে গুহা-টুহা করা হয়। আলোর আয়োজন এত নিখুঁত থাকে যে, গুহার আনাচে-কানাচে কী এবং কতটা সূক্ষ্ম কাজ আছে, তা সহজেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। হাতড়াতে হয় না। মণ্ডপের উচ্চতা হয় সাধারণত আঠেরো ফুটের মতো।
দশ মহাবিদ্যা পর্যন্ত ফিরে এসে বিপরীতেই শঙ্করী বসু রোড। এক-দেড় মিনিট হেঁটে গেলে সি আই টি পার্ক। এখানে পুজো করে দক্ষিণ চেতলা সর্বজনীন মহাকালী পূজা কমিটি। দশ মুণ্ডু কালীর। রাবণের মতো দশটা মাথাওয়ালা প্রতিমা। কুড়িটা হাত। লম্বায় তেরো ফুট। প্রতি বছরই কোনও না-কোনও মন্দিরের আদলে মণ্ডপ হয়। সামনে করা হয় সুদৃশ্য বাগান। কোনও কোনও বার ঝর্না। পুকুর। সেই পুকুরে খেলে বেড়ায় বেশ কয়েকটি রাজহাঁস। পুজোর আগের দিন সন্ধ্যায় প্রতিমার উন্মোচন হয় গান-বাজনার মধ্য দিয়ে।
এখান থেকে একটু এগিয়ে বাঁ দিকে ঘুরলেই ১৫/২, চেতলা রোডের ব্লু স্টার ক্লাব। ক্লাবঘরের ভিতরেই এরা করে তারাপীঠের কালী। ক্লাবের ভিতরের স্থায়ী বেদিতে। এই পথ দিয়ে এগোলেই ১৭, চেতলা রোডের চেতলা সবুজ সংঘ। এরা কোনও মণ্ডপ-টণ্ডপ করে না। ক্লাবের মাঝখানেই একটা প্রকাণ্ড বটগাছ। তার ঝুরিগুলো এমন ভাবে মাটিতে এসে মিশেছে যে, পাহাড়ের গায়ে গুহার দ্বার বলে ভ্রম হয়। তার ভিতরেই মূর্তি বসানো হয়। ওরা নিজেরাই বলে, মন্দিরের জন্য আমাদের একটি পয়সাও খরচ করতে হয় না। উপরের ছাউনির কাজটাও করে দেয় গাছটার মোটামোটা ডাল।
এ পথ দিয়েই সোজা হাঁটলে শহিদ যতীন দাস সেতু। সেতুর নিচ দিয়ে গেলেই বাঁ হাতে চেতলা বয়েজ হাই স্কুল। এখানে হয় জহুরা কালী। দেবীর অন্যান্য চেহারার সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। উদ্যোক্তা চেতলা ইয়ং ফ্রেন্ডস। মালদহের দাসপাড়ায় একটা অদ্ভুত মন্দির আছে। কুয়োর মতো প্রায় খাঁড়া নেমে যাওয়া গহ্বরে সিঁড়ি দিয়ে পাক খেতে খেতে নামলেই মন্দিরের দরজা। সেখানে অধিষ্ঠিত দেবীর রূপ এত বীভৎস যে, দু’মিনিটও তাঁকিয়ে থাকা যায় না। তারই আদলে তৈরি হয় এই প্রতিমা।
যখন এতটাই এসেছেন, যদিও সেটা চেতলার মধ্যে পড়ে না, তবু সেতুটা পেরিয়ে দেখে আসতে পারেন কেওড়াতলা মহাশ্মশানের শ্মশানকালী। মিনিট দশ-পনেরো খরচ করে। তার আগেই অবশ্য ঢুঁ মেরে নিতে পারেন চেতলা অগ্রণী ক্লাবে। কলকাতার মেয়র এবং নগর ও পুর উন্নয়ণমন্ত্রী ববি হাকিমের এই পুজোর বয়স এখন পঁচাত্তর পেরিয়ে গেছে। প্রতি বছরই বিশাল টাকা খরচ করে এখানে দেখবার মতো থিম-মণ্ডপ করা হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই লম্বা লাইন পড়ে যায়।
এটা দেখে ফের চলে আসুন জহুরা কালীর কাছে। সেখান থেকে মিনিট দেড়-দুয়েক হাঁটলেই রক্ত চামুণ্ডা। পুজো হয় জামা হাটে। আয়োজক ৬৩এ, চেতলা রোডের মিলন সংঘ। এদের মণ্ডপ হয় তিরিশ-পঁয়তিরিশ ফুটের ওপরে। প্রতিমা ষোলো-সতেরো ফুট। ঝোপঝাড়, কঙ্কাল, ডাকিনী-যোগিনী আর আলোর কারসাজি দিয়ে করা হয় এক গা ছমছমে পরিবেশ। লাল টকটকে কঙ্কালসার কালী। প্রতিমা থাকে চার দিন। ভাসানের পরে পুজোর ছ’দিনের মাথায় হয় বগলা পুজো। রাস্তাগুলো সাজানো হয় চন্দননগরের লাইটে। চেন, নিয়ন আর ঝিকঝাকের চেকনাই আলো দিয়ে। আশপাশের একতলা, দোতলা, তিনতলা বাড়িগুলোর ছাদ থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় আলোর মালা।
এখানে গায়ে গায়ে এত পুজো এবং আলোর ব্যবস্থাও এত পাশাপাশি যে, আলাদা করা যায় না কোনটা কাদের। মাইকের অবস্থাও শোচনীয়। যখন যে দিকেই যান না কেন, অন্তত চার-পাঁচটা বিভিন্ন ধরনের গান আপনাকে তাড়া করেবেই। কোনটায় কী বাজছে, হাজার চেষ্টা করেও সে জট খোলা যাবে না। রক্ত চামুণ্ডার বাহির পথ দিয়ে বেরিয়ে ডান দিকে ঘুরে বাঁক নিলেই ৪৭/১, চেতলা রোডের জাতীয় সংঘ। এখানে ষোড়শী মূর্তি। শিবের নাভিকুণ্ড থেকে বেরোনো পদ্মের উপর উপবিষ্ট দেবী। গায়ের রং শ্যামলা। একেক হাতে একেকটা— শঙ্খ, পদ্ম, চক্র আর সাপ। পরনে ঝলমলে বুটিওয়ালা ঢাকাই জামদানি। এদের প্রতিমা হয় মাত্র সাড়ে চার ফুটের মতো। উদ্যোক্তারা দাবি করে, মাপ নয়, দেবীর রূপটাই বিবেচ্য।
এখান থেকে এক মিনিটেরও পথ নয় ২৯, রাখালদাস আঢ্য রোডের চেতলা ফিজিক্যাল কালচার অ্যাসোসিয়েশন। এরা করে হাজার হাত কালী। না না, হাজার হাত লম্বা নয়, দেবীর হাত হাজারটা। দেবীর ডান পায়ের তলায় থাকে পদ্ম আর বাঁ পায়ের নীচে ধ্যানস্থ শিব। হাওড়ার শিবপুরে স্থাপিত হাজার হাত কালীর অনুকরণে তৈরি হয় এই প্রতিমা। ইতিমধ্যে পঞ্চাশ বছর পার করে দিয়েছে এই পুজো। মূর্তি হয় পনেরো ফুটের ওপর। কোনও মহিলাকে মণ্ডপ ছুঁতে দেওয়া হয় না, প্রবেশ করা তো দূরের কথা। ক’হাত দূর থেকে গোটা মণ্ডপটা বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। সাধারণত শান্তি আশ্রমের পুরোহিত এসে পুজো করেন। যে ক’জন সদস্য মণ্ডপের ভিতরে থাকেন, তাঁদের প্রত্যেকের নাক-মুখ কাপড়ে ঢাকা থাকে। তাঁরা নির্জলা উপোস করেন। এই মণ্ডপের এ দিকে ও দিকে তাকালেই নজরে পড়বে আরও দু’-দুটি মূর্তি। রক্ষাকালী এবং শ্যামাকালী। এগুলোর উদ্যোক্তা অবশ্য অন্য ক্লাব।
একটু এগোলেই চেতলা প্রভাত সংঘ। ঠিকানা ৭৬, রাখালদাস আঢ্য রোড। এরা করে আদি চামুণ্ডা। লম্বায় ষোলো ফুট। রোগা লিকলিকে। মানুষের গায়ের মতো রং। তবুও দেখতে ভয়ঙ্কর লাগে। থাকে শিব। দু’-তিনটে কঙ্কাল। আর তার আশপাশটা অন্ধকার-অন্ধকার রাখা হয়। যেটুকু না দিলেই নয়, শুধু সেটুকুই আলোর ব্যবস্থা থাকে।
আদি চামুণ্ডা দেখা হয়ে গেলে, যে পথ দিয়ে এসেছেন, সে পথ দিয়েই পায়ে পায়ে রক্ত চামুণ্ডার দিকে এগোন। কিন্তু একেবারে দোরগোড়ায় এসে কালীঘাটের কালী মাকে দর্শন না করে ফিরে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? বিশেষ করে এমন দিনে? রথ দেখা এবং কলা বেচার মতো দেবী দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে এখানে অবশ্যই উপভোগ করে নিতে পারেন গঙ্গার ঠান্ডা বাতাস।
গঙ্গা বললেও, এটাকে অবশ্য অনেকেই টালিনালা বলেন। দু’বছর আগেও দু’টাকা দিয়ে নৌকোয় করে পার হতে হত। এখন ব্রিজ হয়ে গেছে। ও পারে গেলেই কালীঘাটের কালী মন্দির। না যেতে চাইলে, নাক বরাবর এক মিনিট হেঁটে গেলেই ৪এ, রাখালদাস আঢ্য রোডের জুনিয়র স্টাফ। এরা একটা গাছের বাঁধানো বেদিতে পুজো করে স্বর্ণকালী। এই প্রতিমার সঙ্গে চিরাচরিত কালীমূর্তির তফাৎ মূলত রঙে। একেবারে কাঁচা সোনার মতো রং। আর ব্যতিক্রম হল মুকুটে। তিনটে আকন্দ ফুলের ত্রিকোণের মাঝখানে থাকে একটা পঞ্চমুখী জবা।
এখান থেকে মাত্র কয়েক পা হাঁটলেই চেতলা ইয়ং স্টাফ। ঠিকানা ওই একই। এরা যে প্রতিমা করে, তার নাম— আকালী। শিবের মূর্তি সাঁটা সিন্দুকের উপরে উপবিষ্ট দেবী। তার দুটি হাত। এক হাত আশীর্বাদের ভঙ্গিমায়। অন্য হাতে সাপ। দেবীর সারা শরীর ঢাকা থাকে নানা রকম সাপে। মুখে এক চিলতে কাপড়ের আঁচল। এই মূর্তি আছে মাইথনে। প্রচলিত আছে— এক ব্রাহ্মণ পুজো সেরে দরজা বন্ধ করার সময় বলে যান— মা, যা রইল, সব খেয়ে নিস। তিনি জানতেন না, তাঁর মেয়ে ওই ঘরে লুকিয়ে আছে। পরে মেয়ের খোঁজে ঘরে ঢুকে দেখেন, সব ফলমূলের সঙ্গে দেবী তাঁর মেয়েকেও খেয়ে নিয়েছে। শুধু শাড়ির একটা কোণ তখনও দেখা যাচ্ছে মায়ের মুখে। যে-শাড়িটি তাঁর মেয়ে পরে ছিল। ক্ষোভে-দুঃখে ব্রাহ্মণ বলে ওঠেন, তোর মুখ আর দেখতে চাই না। বলার সঙ্গে সঙ্গে মূর্তির মুখ পিছন দিকে ঘুরে যায়। তাই মায়ের মুখ ঠিক মতো দেখা যায় না। সেটারই নকল করেছে এরা। এদের প্রতিমার উচ্চতা সাত ফুট।
এর গায়েই রয়েছে চেতলা বালক সংঘ। ঠিকানা ওই একই। এরা করে তাম্রকালী। প্রতিমার গায়ের রং অবিকল তামার। বারো কি তেরো ফুট লম্বা। গুহা, পাহাড়-টাহাড় আর অটোমেটিক আলো দিয়ে এরা তৈরি করে এক অদ্ভুত পরিবেশ। এদের পুজোও প্রায় চল্লিশ বছরে পড়ল।
আবার ফিরে আসা যাক রক্ত চামুণ্ডার প্রবেশ পথের সামনে। ডান হাতে দেড় মিনিট হাঁটলেই ২১/১, চেতলা হাট রোডের চেতলা প্রদীপ সংঘ। বাজারের খোলা জায়গায়। যেখানে চৈত্রসংক্রান্তির দিন এখনও মহাধুমধাম করে চড়ক মেলা হয়। এখানে হয় পঞ্চমুণ্ডা কালী। অর্থাৎ পাঁচ মাথাওয়ালা কালী। শিব থাকে না। শিবের বদলে থাকে বাবা পঞ্চানন। তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকে দেবী। লাল টকটকে গায়ের রং। পাঁচ রঙের পাঁচটা মাথা। এদের প্রতিমা হয় বারো-তেরো ফুটের কাছাকাছি। মণ্ডপ কুড়ি-বাইশ ফুট। আলোয় তেমন জাঁকজমক কিছু থাকে না।
এর ঠিক উল্টো গলিতেই ৪০/১, গোপালনগর রোডে গোপালনগর যুবক সংঘ। এরা প্রায় প্রতি বছরই গলির প্রবেশ পথে রাক্ষসের বীভৎস মুখ করে। একতলা বাড়ির সমান। বাচ্চারা দেখে ভয় পায়। ওই রাক্ষসের মুখের ভেতর দিয়ে ঢুকে বেশ কিছুটা হেঁটে প্রতিমা দর্শন করতে হয়। ফলে গলিটার নামই হয়ে গেছে রাক্ষস গলি। প্রত্যেক বছর আলো, ধ্বনি আর মূর্তির মাধ্যমে এরা নানা রকম কাহিনি প্রদর্শন করে। সন্ধ্যার পর থেকেই লম্বা লাইন পড়তে শুরু করে। মিনিট দেড়-দুই এই প্রদর্শনী দেখে পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে, ফের সামনে এসে গোপালনগর মোড়ের দিকে হাঁটলেই বাঁ হাতে পড়বে ২বি, নব রায় লেন। এখানে রয়েছে গোপালনগর গোল্ডেন ক্লাব। এরা করে এলোকেশী কালী। গায়ের রং কুচকুচে কালো। দেখে মনে হয়, মা যেন দৌড়ে আসছেন। এদের প্রতিমা হয় পনেরো-ষোলো ফুটের মতো। মণ্ডপ খুব সাধারণ। প্রতি বছরই প্রতিমার পিছনের দিকে টান টান করে টাঙানো থাকে লাল সালু। মণ্ডপের উচ্চতা পঁয়তিরিশ-চল্লিশ ফুট।
এখান থেকে কয়েক পা পিছন ফিরে ডান দিকে ঘুরলেই, বাঁ হাতে ২, চেতলা হাট রোডের ছিয়াশি পল্লি। পল্লির মাঠেই এরা খুব ধুমধাম করে ছিন্নমস্তা মায়ের পুজো করে। এদের প্রতিমা হয় পনেরো-ষোলো ফুট লম্বা আর মণ্ডপ চল্লিশ-বিয়াল্লিশ ফুট। প্রতিমার রং লাল টকটকে। মুণ্ডুহীন। নিজের কাটা মুণ্ডু নিজেরই হাতে ধরা। ডান হাতে খাঁড়া। গলা থেকে ছিটকে আসা তিনটে রক্তের ধারা মায়ের কাটা মুণ্ডু আর ডাকিনী যোগিনী পান করে। মা দাঁড়িয়ে থাকে কাম-রতি, মানে চিৎ ও উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা নারী ও পুরুষ মূর্তির উপরে। এই মূর্তি দুটি থাকে ফোটা পদ্মফুলের ওপরে। প্রতিমা থাকে টানা পাঁচ দিন। পথের দু’ধারে অটোমেটিক আলোয় খেলা করে কয়েকটা আঁকিবুকি। এ বাড়ি-ও বাড়ির ছাদে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে এক-একটা বোর্ড। তাতে ধরা পড়ে নানান নকশা, আলপনা আর দৃশ্যাবলি।
শুধু এখানে নয়, গোটা চেতলার যে কোনও মণ্ডপে ঢুকলেই মনে হবে, না, মা কালীর কেবল ভিন্ন রূপই নয়, রকমারি বেশভূষাই নয়, আমরা দেখতে এসেছি আধুনিকতম আলোকসজ্জা এবং মণ্ডপ সজ্জাও। আর এগুলো দেখতে দেখতেই অনুমান করা যাবে, কী ভাবে প্রতিদিন পালটে যাচ্ছে ডেকরেটরদের রুচি, শিল্প ও সৌন্দর্যবোধ।
আর একটু হাঁটলেই, ১৯/এ, চেতলা হাট রোডের চেতলা সংঘ। এখানে হয় কৃষ্ণকালী। গলার নিচ থেকে গোটা ধড়টাই কৃষ্ণের আকার। মুখটা শুধু শ্যামা কালীর। এক হাতে বাঁশি আর অন্য হাতে খাঁড়া। এদের প্রতিমার উচ্চতা ফুট আষ্টেক। মণ্ডপ কুড়ি ফুটের মতো। সামান্য এগোলেই কে এম ডি এ বিল্ডিং। ঠিকানা ওই একই। এখানে রয়েছে চেতলা গীতাঞ্জলি স্পোর্টস ক্লাব। এরা করে চন্দ্রঘণ্টা কালী। গায়ের রং রক্তের মতো লাল। মুখের দু’দিকে হাতির মতো দুটো দাঁত। এক দিকে শান্ত শিব। অন্য দিকে যুদ্ধের ভঙ্গিমায় অসুর। দেবীর হাতে ঘণ্টা। খাঁড়া। সাপ। চতুর্থ হাতটি আশীর্বাদী। পরনে বাঘের ছাল। মূল পুজো হয় কালীপুজোর আগের দিন চতুর্দশীতে। পাঁঠা-সহ পাঁচ রকমের বলি হয়। প্রতিমার উচ্চতা বারো ফুট। মণ্ডপ বাইশ ফুট। মণ্ডপের ভিতরে অন্ধকারে লাইট জ্বলে আর নেভে। মনে হয়, দেবীর জিভ, চোখ আর ঘণ্টা নড়ছে। গোটা পরিবেশটা হয়ে ওঠে ভয়ার্ত। এই বিল্ডিং প্রাঙ্গণের ভিতরেই আরও অনেকগুলো পর পর পুজো হয়। তার মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য নটরাজ কালী। দেবী এখানে নৃত্যের ভঙ্গিমায়। আর একটা হল তারা মা। এ দুটো না দেখে এই চত্বর থেকে বেরোনো ঠিক হবে না।
সামনেই ১৯বি, চেতলা হাট রোডের সৎ সংঘ। এরা করে দুর্গা কালী। প্রতিমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত মাঝ বরাবর লম্বালম্বি ভাগ করা। এক দিকে কালীর রূপ। সে দিকে দুটো হাত। অন্য দিকে দুর্গার রূপ। সে দিকে পাঁচটা হাত। এদের প্রতিমা হয় আট ফুট। মণ্ডপ বারো ফুট।
এদের দশ-বারো হাত দূরেই ডাকাত কালী। এটার উদ্যোক্তা শহিদ স্মৃতি সংঘ ব্যায়ামাগার। ঠিকানা ওই একই। এখানে আঠেরো ফুট লম্বা কালো কুচকুচে বিশাল প্রতিমা বন্দি থাকে মোটা মোটা শেকলে। এই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার কোনও বালাই নেই। কারণ, সারা বছরই প্রতিমা এখানে বিরাজমান। মণ্ডপ নয়, এটা একটা স্থায়ী মন্দিরই বলা যায়। পঞ্চাশ পা-ও হাঁটতে হবে না। এর পরেই শিবকালী। আয়োজক ১৮/১, চেতলা হাট রোডের বালক সংঘ। মূর্তিটি দুর্গাকালীর মতোই লম্বালম্বি করে মাঝ বরাবর ভাগ করা। ডান দিকে কালীর রূপ। বাঁ দিকটা শিবের। এখান থেকে কয়েক পা গেলেই ১৭, চেতলা হাট রোড। ক্লাবের নাম ইয়ংগার ব্রাদার্স। রাস্তার ওপরেই করে কালীঘাটের কালী।
সামনেই আলিপুর রোড। বাঁ দিকে ঘুরলেই তেওয়ারি পাড়া। এখানে হয় শ্বেতকালী। একেবারে দুধ সাদা গায়ের রং। দুটি হাত। এক হাতে কৃপাণ। অন্য হাতে খালি। জিভ নেই। কালীর বাঁ পা শিবের মাথার উপর রাখা। ক্লাবের সম্পাদক জানালেন, হাওড়া উদয়নারায়ণপুরের জমিদার দুলালচন্দ্র ভর, যিনি তালমিছরির জন্য সুপরিচিত, তিনি মায়ের এই রূপ স্বপ্নে পান। হাওড়ার রাজবল্লভ ঘাটের কাছে এই রাজবল্লভী মূর্তির মন্দির আছে। তন্ত্রমতে এই পুজো করে ২৩/এ, আলিপুর রোডের এ বি এস স্পোর্টিং ক্লাব।
না, গলি থেকে বেরোতে হবে না। তার আগেই, বাঁ হাতে রয়েছে ২৭/এ, আলিপুর রোড, যার নতুন ঠিকানা ২৭/পি। এখানেই মা দক্ষিণা কালীর সাধনা শুরু করেন বারুইপুরের ত্রিমাতৃ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাত্রী, প্রখ্যাত তন্ত্রসাধিকা মা পরমেশ্বরী পারুলরানি সিংহ। এখানে বহু বছর ধরে জাঁকজমক করে চলে আসছে এই পুজো। প্রতি অমাবস্যা, পূর্ণিমা, শনি-মঙ্গলবারে প্রচুর ভিড় হয়। ভক্তদের নানা সমস্যার সমাধান করা হয়। অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তিও এখানে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন। জনশ্রুতি আছে, অমাবস্যা, পূর্ণিমায় এখানে এসে মনে মনে কোনও কিছু কামনা করলেই যে কোনও মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। গোটা এলাকা উপচে পড়ে। রাত থেকেই প্রসাদ বিতরণ শুরু হয়। চলে পর দিন সকাল পর্যন্ত।
এর ঠিক উল্টো দিকের গলিতেই আলিপুর অশোক ক্লাব। ঠিকানা ৮বি/সি, অশোক রোড। এরা করে কঙ্কালিনী কালী। প্রতিমার রং ধুসর। উচ্চতা ষোলো ফুট। বেশ কয়েক বছর যাবদ এই পুজোটা ছোটরাই করছে।
গলি থেকে বেরিয়ে ক’পা হাঁটলেই চেতলা সেন্ট্রাল রোড ও আলিপুর রোডের সংযোগস্থল। ডান দিকে ঘুরে বাঁ দিকে বাঁক নিলেই ৪৪/২০, দুর্গাপুর লেনে রয়েছে আলিপুর রবীন্দ্রনাথ সংঘ। এরা প্রতি বারই কিছু না-কিছু অভিনব করেই।
যত পারুন ঠাকুর দেখুন। কিন্তু যে মণ্ডপে না গেলে আপনার এই চেতলার প্রতিমা-পরিক্রমা একেবারে অসমাপ্ত থেকে যাবে, সেটা হল— দুর্গাপুর জাগরণী সংঘ। যেখান থেকে প্রতিমা দেখা শুরু করেছিলেন, সেই চামুণ্ডা কালীর পেছনের রাস্তাতেই দুর্গাপুর পাম্প হাউসের কাছে ১৬এ, দুর্গাপুর লেনের সামনেই, রাস্তার ওপরে হয় এই পুজো। এরা করে জীবন্ত কালী। আট থেকে পনেরো বছর বয়সী চোদ্দো-পনেরো জন ছেলেমেয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে মা কালীর এক-একটা রূপে অবিকল সেজে একেবারে মাটির প্রতিমার মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখের পলক পর্যন্ত পড়ে না। এই প্রদর্শনী চলে সন্ধ্যা ছ’টা থেকে রাত দশটা অবধি। পর পর তিন দিন। শেষ দিন রাত এগারোটা পর্যন্ত।
না, এখানেই শেষ নয়। এর পরেও বাকি রয়ে গেল আরও বহু প্রতিমা। এখানে শুধু উল্লেখযোগ্য কয়েকটার কথা জানানো হল মাত্র। এ বার প্রশ্ন উঠতে পারে, তা হলে চেতলায় পুজো হয় ক’টা? এ প্রসঙ্গে আলিপুর থানার ওসি জানিয়েছেন, শুধুমাত্র তাদের আয়ত্তাধীন চেতলাতেই পুজো হয় কম করে ষাটটি। বাকিটার হদিশ দিয়েছেন নিউ আলিপুর থানার ওসি। ওঁদের কাছে অন্তর্ভুক্ত আছে চেতলার প্রায় চল্লিশটি পুজো। অর্থাৎ এই দুটো থানার হিসেব অনুযায়ী চেতলায় পুজো হয় অন্তত একশোটি। এর পরেও আছে চেতলা থানার অধীনে আরও বেশ কিছু পুজো। রয়েছে বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ির নিজস্ব পুজো, ঘরোয়া পুজো এবং কচিকাঁচাদের পুজো। এদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এত পুজো! তবু দেওয়া হল মাত্র এ ক’টার সন্ধান!
এটা ভেবে অনেকেরই আফসোস হতে পারে। তাঁদের অবগতির জন্য জানাই, বাকিগু
লোর বেশির ভাগটাই দেখা হয়ে যাবে, এই লেখায় উল্লিখিত একটা মণ্ডপ থেকে আর একটা মণ্ডপে যেতে যেতে। এ দিক ও দিক তাকালেই চোখে পড়বে বটকালী, হনুমান কালী, কমলা কালী, মোহনবাগান কালী-র মতো এখানকার লোকেদের মনগড়া নানান কালী।
তবে হ্যাঁ, প্রতিমার ফিরিস্তি যত বড়, পথ কিন্তু তত বড় নয়। খুব বেশি হলে ঘুরতে হয় মাত্র দেড়-দু’কিলোমিটার। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ধীরেসুস্থে দেখলেও আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই সারা হয়ে যাবে প্রধান প্রধান প্রতিমাগুলোর দর্শন।
যেখানেই থাকুন না কেন, ফিরতেও কোনও অসুবিধা হবে না। হাওড়া, শিয়ালদহ, ধর্মতলা, সল্টলেক বা বেহালাগামী বাস, মিনিবাস— সবই পাওয়া যাবে। মেট্রোও পাওয়া সাবে কালীঘাট স্টেশন থেকে। মনে পড়ে? রামপ্রসাদ গেয়েছিলেন— ‘মা আমায় ঘোরাবি কত, চোখ বাঁধা কলুর বলদের মতো’, চেতলায় হাজার মণ্ডপে ঘুরতে ঘুরতে কেউ এই রামপ্রসাদী গান গুনগুন করে গেয়ে উঠতেই পারেন, কিন্তু এখানকার একের পর এক বৈচিত্র্যময় প্রতিমা দর্শন এতটাই রোমাঞ্চকর এবং মধুর যে, পরের প্রতিমাটি দেখার জন্য মন কেবলই ছটফট করে আর প্রতিটি মূর্তিই মনের গভীরে স্মৃতি হয়ে থাকে অনেক অনেক দিন পর্যন্ত।