বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী উলূমে দীনিয়া কওমী মাদ্রাসার নুরানী বিভাগের এক শিক্ষককে অবরুদ্ধ ও কেতাব বিভাগের ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
মাদ্রাসার ক্লাস রুমে ও মুহতামিমের কক্ষে এবং বার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল সোমবার বেলা ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলা এ হামলায় হাতুড়ি পেটায় ১০ হাফেজ আহত হয়েছে। গুরুতর আহত এক হাফেজকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এতে মাদ্রাসায় ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার হতে কেতাব বিভাগের ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনার রেশ ধরে রাত ৯টার দিকে মাদ্রাসার মুহ্তামিম মুফ্তি আমিনুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গৌরনদী থানার ওসি আফজাল হোসেন জানান, এ ব্যাপারে এক পক্ষের একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার রাতে অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অভিযোগের তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাদ্রাসার মুহ্তামিম মুফ্তি আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ”মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্জাহান প্যাদার নির্দেশে আমি কেতাব বিভাগের ক্লাস অনির্র্দিস্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছি।
আমাকে ও কেতাব বিভাগের ছাত্রদের জঙ্গি বানানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে। রাত ৯টার দিকে মাদ্রাসার কম্পাউন্ডে সভাপতির উপস্থিতিতে ব্যবসায়ী আজিজ বেপারী আমাকে লাঞ্ছিত করেছে।
মুহ্তামিম বলেন, সভাপতির নির্দেশে পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য মঙ্গলবার সকালে অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক শওকত হোসেনকে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে।
মাদ্রাসার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক ও আহত ছাত্ররা জানান, উপজেলার বার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্জাহান প্যাদার ভাগ্নে ও বার্থী কওমী মাদ্রাসার নুরানী বিভাগের শিক্ষক হাফেজ মানিক বেপারী কেতাব বিভাগের ছাত্রদের প্রায়ই ব্যঙ্গ করে ডাকেন এবং অসদাচরন করেন।
এ অসদাচরনে নিষেধ করায় শিক্ষক হাফেজ মানিক বেপারী ক্ষিপ্ত হয়ে সম্প্রতি কেতাব বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ শাহ্জালাল, মোহাম্মদ মাহামুদকে পিটিয়ে আহত রোববার বিকালে কেতাব বিভাগের ছাত্র শাহ্জালালকে কিলঘুষি মেরে নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ায়।
এ ঘটনার বিচার দিতে কেতাব বিভাগের সহপাঠিরা সোমবার সকাল ১০টার দিকে মাদ্রাসার মুহতামিম মুফ্তি হাফেজ আমিনুল ইসলামের কাছে যায়।
এ বিচার দেয়ার কারণে শিক্ষক মানিক বেপারী ক্ষিপ্ত হয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্লাস রুমে ঢুকে কেতাব বিভাগের ছাত্র রফিকুল ইসলাম, মাহামুদ হোসেনকে পিটিয়ে আহত করে।
এতে কেতাব বিভাগের ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষক মানিককে ধাওয়া করে। এ সময় শিক্ষক মানিক দৌড়ে মাদ্রাসার মুহতামিমের কক্ষে আশ্রয় নিলে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা তাকে আধ-ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।
এরপর কেতাব বিভাগের ছাত্ররা বিচার দিতে শিক্ষক মানিকের মামা বার্থী গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্জাহান প্যাদার বাড়িতে গেলে শিক্ষক হাফেজ মানিক ও তার মামা যুবলীগ নেতা জাফর প্যাদার নেতৃত্বে বহিরাগত ১৫/২০ যুবক হাতুড়ি, ব্যালচা, লাঠিসোটা নিয়ে শাহ্জাহান প্যাদার বাড়িতে গিয়ে ’জঙ্গি’ অপবাদ দিয়ে নালিশ দিতে যাওয়া কেতাব বিভাগের ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। হামলার সময় শাহজাহান প্যাদা বাড়িতে ছিলেন না।
হামলাকারীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কেতাব বিভাগের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান, আবু ইউসুফ, সোয়াইব, হাফেজ হোসেন, হাসানউদ্দিন, হাফেজ হাবিবুল্লাহসহ ১০ ছাত্রকে আহত করে।
এ ঘটনায় কেতাব বিভাগের ছাত্র হাফেজ সোয়াইব বাদি হয়ে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে গৌরনদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে মাদ্রাসার নুরানী বিভাগের শিক্ষক হাফেজ মানিক বেপারী বলেন, কেতাব বিভাগের ২ ছাত্র বেয়াদবী করার কারণে তাদের বকাঝকা kora হয়েছে। আমার ও আমাদের মাদ্রাসার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য কতিপয় ছাত্র কুৎসা রটাচ্ছে।।