কুমিল্লায় পূজামণ্ডলে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দুই দফায় টানা ১১ দিনের রিমান্ড শেষে ইন্ধনদাতাদের পরিচয় জানিয়েছে ইকবাল।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) দুই দফা রিমান্ডের শেষ দিনে এ কথা সে জানিয়েছে বলে সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
টানা এগারো দিনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিআইডির কাছে স্বাভাবিকভাবে এমন তথ্য দিলেন ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল। তবে ইকবালসহ ধর্ম অবমাননা মামলার চার আসামিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারও রিমান্ডে নেওয়া হবে কিনা তা এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সিআইডি। তবে বুধবার আবারও তাদেরকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
ইকবাল জানিয়েছে, গত ১২ অক্টোবর কুমিল্লায় নানুয়ারদীঘির পাড় পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখে ইকবাল। পরে মাজার মসজিদে এসে বিশ্রাম নেয়। পরদিন ভোরে পরিস্থিতি দেখতে পূজামণ্ডপে যায় এবং সেখানে কিছুক্ষণ থেকে আবার ফিরে আসে। ঘটনাকে ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকলে আবারও মণ্ডপে গিয়ে হামলা ও ভাঙচুরে অংশ নেয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি খারাপ দেখে নিজেকে আড়াল করতে ট্রেনে করে কুমিল্লা থেকে পরদিন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায় সে।
এদিকে ঘটনার পরপরই সিসিটিভি ফুটেজে ইকবাল শনাক্ত হওয়ার পর পাগল বা ভবঘুরে বলে তার পরিবার দাবি করলেও মঙ্গলবার আলাপকালে সিআইডি কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান জানান, কুমিল্লায় ধর্ম অবমাননার মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি ইকবাল হোসেন মানসিক ভারসাম্যহীন নয়, সে একজন সুচতুর সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ।
তিনি বলেন, “ইকবাল নানুয়াদিঘির পাড়ে পুজা মণ্ডপে কোরআন রাখার পূর্বে পুরো এলাকাটি প্রদক্ষিণ করে। এরপর দারোগাবাড়ি মাজার মসজিদ থেকে কোরআন নিয়ে সেখানে রাখে। পরে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার জন্য প্রথমে চট্টগ্রামে, পরে কক্সবাজারে চলে যায়।”
এদিকে ধর্ম অবমাননা মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি সূত্রে আরও জানা যায়, কুমিল্লায় পূজামণ্ডপকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত ইকবালসহ চার আসামিরও দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডও শেষ হয়েছে। এদিকে, দুই দফায় টানা এগারো দিনের রিমান্ডে সিআইডি’র জিজ্ঞাসাবাদে আসামিদের কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এখন শুধু যাচাই-বাছাই করে ইন্ধনদাতাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে সিআইডি। এছাড়া, এই এগারো দিনে ইকবালসহ চার আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদেরও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়েছে।
সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, “কুমিল্লার ঘটনায় ধর্ম অবমাননা, হিন্দুদের পূজামণ্ডপ ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় কুমিল্লার কোতয়ালী, সদর দক্ষিণ, দাউদকান্দি ও দেবিদ্বার থানায় পৃথক ১২টি মামলা হয়েছে। তারমধ্যে অভিযুক্ত ইকবালের ধর্ম অবমাননা মামলাটিসহ এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা তদন্ত করছে সিআইডি। এরমধ্যে কোতয়ালী থানায় পুলিশের দায়ের করা আইসিটি আইনে ফেসবুকে লাইভ করা ফয়েজের একটি মামলা, কোতয়ালী ও সদর দক্ষিণ থানায় মন্দিরে ভাংচুর করা পুলিশের দায়ের করা দুইটি মামলা এবং সর্বশেষ ফেজবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার সাজ্জাদ ও ফয়সাল নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সিআইডির দায়ের করা একটি মামলা। এই পাঁচ মামলায় ইকবালসহ এইপর্যন্ত অন্তত ২৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”