নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম একটি অর্থকরী ফসল। নারিকেল চাষের উদ্যোগ সম্ভাবনার বিচারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নেয়া প্রয়োজন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নারিকেলের বহুবিধ ব্যবহারে এর গুরুত্ব বাড়িয়েছে। নারিকেলের আদিস্থান প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে পৃথিবীর ৯৩টা দেশে এর বিস্তার ঘটে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে এর ফলন হয়ে থাকে বেশি তারমধ্যে রয়েছে বরিশাল, ভোলা, খুলনা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সন্দ্বীপ, কক্সবাজার, সুন্দরবন সহ বিভিন্ন এলাকা নারকেলের জন্য বিখ্যাত। এ গাছের পাতা, ফুল, ফল, কাণ্ড, শিকড় সব কিছুই বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্পের কাঁচা মাল, হরেকরকম মুখরোচক নানা পদের সুস্বাদু খাবার তৈরির উপকরণ, পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, সুস্বাদু পানীয়, রোগীর পথ্য সহ নানা গুণে গুণাম্বিত এই গাছটি সবার কাছে সমাদৃত ও সুপরিচিত।
উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনার আমতলীতে এক প্রকার সাদা মাছি পোকার আক্রমণে উপজেলার প্রায় সকল ইউনিয়নেই নারিকেল উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
শহর ও গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন মোবাইল ফোনের টাওয়ার স্থাপনের কারণে এ অঞ্চলের নারিকেল গাছ গুলোর ফুল ও ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করছে চাষীরা। পরবর্তীতে তাদের এ ধারণা ভুল বলেও প্রমাণিত হয়। ভুতুড়ে রোগের কারণে নারিকেল গাছ গুলোতে প্রচুর ফুল ধরার পরেও ফল পরিপক্কতা হচ্ছে না। সূত্রে জানা যায়, এক ধরণের ছোট সাদা মাছি পোকার আক্রমণে কচি ডাবের বোটার কাছ থেকে খোসা বা খোলের ওপর বাদামি দাগ পড়ছে। ফলে কচি নাকিলের চার পাশে বাদামি দাগে ভরে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে দাগ থেকে আঠালো পদার্থ নির্গত হওয়ায় অধিকাংশ নারিকেল গাছের ফুল ফলে পরিণত হওয়ার আগেই ঝরে যায়।
জানা যায়, বর্তমানে বড় সাইজের এক জোড়া নারিকেল ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে বিক্রি হতো ২০-২৫ টাকা। তবে, একটি বড় ডাব বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। যা আগে বিক্রি হতো ১৫-২০ টাকায়। গত আট-দশ বছর ধরে এলাকায় হাজার হাজার নারিকেল গাছে এক প্রকার সাদা মাছি পোকার কারণে নারিকেলের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, ইতোপূর্বে আমাদের দেশে নারিকেল গাছে এ ধরণের মাছি পোকার আক্রমণ রোগ কখনো দেখা যায়নি।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম মুঠোফোনে জানান, ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র শ্রীলংকায় এ রোগের আবির্ভাব ঘটে। ওই সময় শ্রীলংকার কৃষিবিদরা গাছের এ রোগ সম্পর্কে ব্যাপক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে নিশ্চিত হয়, যে নারিকেলে সংক্রমণের জন্য সাদা মাছি পোকাই দায়ী। বাংলাদেশের রাজশাহি অঞ্চলে ২০১৯ সালে এ পোকার আক্রমণ আসে আর এ কারণেই ডাব ও নারকেলের ফলন কমে যাচ্ছে।