আজ (২৪ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক ডলফিন দিবস। প্রতিবছরের মতো এবারও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শুশুক ডলফিন থাকে যদি, ভালো থাকবে মোদের নদী’।
জলজপ্রাণীদের মধ্যে মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সখ্য হয় যে প্রাণীটির, সেটি হলো ডলফিন। তিমি এবং পরপয়েজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী এ প্রাণীটি ১৭টি গণেতে প্রায় ৪০টি প্রজাতিতে বিভক্ত। মহীসোপানের কাছের অগভীর সমুদ্রে সাধারণত এরা বাস করলেও স্বাদু পানির নদীতেও এদের বেশ কয়েকটি প্রজাতি থাকে।
বাংলাদেশের ডলফিন প্রজাতির মাঝে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ডলফিন হলো শুশুক। বলা হয়, এরা সত্যিকারের নদীর ডলফিন। বিশেষ আকৃতির লম্বা ঠোঁট, পিঠের ছোট ডানা আর দুই পাশের বড় পাখনার কারণে সাগরের ডলফিন থেকে এরা কিছুটা ভিন্ন। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্নফুলী নদীর প্রায় সব জায়গাতেই শুশুকের বাস। নদীর ডলফিন সাগরের ডলফিনের দূরসম্পর্কের আত্মীয়!
স্বাদু পানির ডলফিন সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ২০০৯ সালের ২৪ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ায় বিশ্বব্যাপী স্বাদু পানির ডলফিন দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশে প্রতিবছর দিনটি পালিত হয়ে আসছে। শুশুকের প্রতি মানুষের ভালোবাসা বাড়াতেই এই আয়োজন।
শুশুক ছাড়াও বঙ্গীয় অঞ্চলে আরও কয়েক প্রজাতির ডলফিন নদী ও সাগর উভয় স্থানেই দেখা যায়। যেমন ইরাবতী ডলফিন। সুন্দরবনের মিঠা পানির নদী আর বঙ্গোপসাগরের উপকুলীয় অঞ্চলে এরা বাস করে। নদীসহ যেসব উপকুলীয় জলাশয়ে নদী থেকে মিঠা পানি আসে, সেসব স্থানে ইরাবতী ডলফিন দেখা যায়। সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের জলপথে এরা শুশুকের সঙ্গে মিলেমিশেই থাকে।
এছাড়া, গোলাপি ডলফিন বা ফিনলেস পরপয়েসকে মাঝেমধ্যে সুন্দরবনের নদীতে দেখা গেলেও এরা আসলে উপকুলীয় জলভাগে বাস করে, যেখানে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদী থেকে মিঠা পানি আসে।
এদিকে ডলফিন ও এদের আবাসস্থল রক্ষায় গত ১৮ অক্টোবর সরকার ‘ডলফিন কনজারভেশন অ্যাকশন প্ল্যান’ অনুমোদন করেছে। একইসঙ্গে কিছু সংশোধনী সাপেক্ষে ‘ফান্ড ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনস’, শীতকালে গাঙ্গেয় ও ইরাবতী ডলফিন দেশের যেসব স্থানে পাওয়া যায় তার তথ্য জানতে ‘ডলফিন অ্যাটলাস ইন বাংলাদেশ’ ও হালদা নদীর ডলফিন সংরক্ষণে ‘ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান ফর দ্য গঙ্গা রিভার ডলফিন ইন হালদা রিভার’ অনুমোদন করা হয়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে এক সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
ডলফিন রক্ষায় সরকারের এ পদক্ষেপ নদী ও উপকূলীয় এলাকায় ডলফিনের হ্রাস কমাতে এবং ডলফিনের আবাস রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
আজ দিবসটি উপলক্ষে বন অধিদপ্তরে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশের সর্ববৃহৎ ডলফিনের আবাসস্থল সুন্দরবন এলাকায় অনেক হটস্পট চিহ্নিত করে সেগুলোর মধ্য থেকে পানখালি, শিবসা ও দুধমুখীতে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু সুন্দরবনেই এখন ডলফিনের জন্য ছয়টি অভয়ারণ্য রয়েছে। সেখানকার জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে সাতটি ডলফিন সংরক্ষণ দল গঠন করা হয়েছে। এ দলটির জন্য ‘ফান্ড ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন’ প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়। এছাড়া পাবনায় তিনটি রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
ডলফিনকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীদের কাতারে ধরা হয়। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ এবং খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতার জন্য ডলফিন খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে ডলফিন রক্ষায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কার্যকর বাস্তবায়ন হোক।