কবি অবশেষ দাসের ছ’টি ছড়া

অবশেষ দাস
অবশেষ দাস
3 মিনিটে পড়ুন

হরতাল

মুখে হাসি হাতে পেন
চোখ নাচে ছন্দে
দাদা বলে, শোন ভাই
ভালো কাজে মন দে।

কথা কম কাজ বেশি
বাকি সব বাদ দে
স্বপ্নের কারিগর
গরীবের ছাদ দে।

ছোটদের ভালোবেসে
বড়দের মান দে
দেরি কেন সব কাজে
বুদ্ধিতে শান দে।

যারা লোভী তারা বলে
টাকাকড়ি ধন দে
জীবনটা সুখ নয়
ভালো আর মন্দে।

- বিজ্ঞাপন -

শেষে বলি বেশি জেনে
পড়ে যাবি দ্বন্দ্বে
চোখে দেখি ঘুম নেই
বাংলায় বনধে।

তিন বোন

ইন্নি বিন্নি তিন্নি, তিন বোন যেন গিন্নি
খেলার ছলে কাদামাটি মেখে
বানাবে পুজোর শিন্নি।

শিন্নিতে চাই দুধ কলা আর সামান্য কিছু চিন্নি
বিড়ালকে ডেকে ইন্নি বলল,
দোকানে চলে যা মিন্নি।

বিন্নি বলল বিড়াল খোকা, বুঝবেনা বেশি কথা
কেবল বোঝে দুধের বাটি,
মাছের বড় মাথা।

শিন্নি করা বন্ধ হলো, তিন্নি বলে হেসে
এমন অনেক বিড়াল বাবু
আছে তো এই দেশে।

- বিজ্ঞাপন -

সবার কথার মধ্যে দেখি , ম্যাও ম্যাও করে মিন্নি
তিন বোন বলে, বিড়াল কথা
থাকবে চিরদিন্নি!

নদীর ব্যথা

একটা নদী তাকিয়ে আছে
দূর আকাশের দিকে
আকাশ বলে, ছোট্ট নদী
মুখ কেন তোর ফিকে?

নদীর জলে টেউ ওঠে না
বাক্য তো নেই মুখে
আকাশ বলে, সব বুঝেছি
জল নেই তোর বুকে।

- বিজ্ঞাপন -

সময় যাচ্ছে জলের মত
সবাই যেন থেমে
আকাশ, নদী মুখোমুখি
সন্ধ্যা এলো নেমে।

আকাশ বলে, চুপটি কেন
একার মত চলা
দুঃখ নিয়ে তোর কাছে তো
দু-এক কথা বলা।

ভরসা দিলে সঙ্গে আছি
কষ্ট কিসের মনে
তুই তো চাইলে যেতেই পারি
সারাজীবন বনে।

নদী বলে, বুঝিস তো সব
দিস না কেন তবে
বল্ না আকাশ, শ্রাবণধারায়
বৃষ্টি পাব কবে?

নিরুদ্দেশে

ভোরবেলাতে গান ধরেছে
খাঁচায় পোষা বুলবুলি-
তুলতুলি রে তুলতুলি
চল্ না রে বোন দু’জন মিলে
মেঘমুলুকে ফুল তুলি!

ফুল তুলি?
আমি তো রোজ দাদুর মাথার
পাকা পাকা চুল তুলি!
আমার তো নেই ওড়ার ডানা-
বল্ না পাখি কেমন করে
মেঘমুলুকে ফুল তুলি?

তুলবো রে ফুল হেসে-
ইচ্ছে-ডানায় স্বপ্ন মেখে অনেক দূরে ভেসে,
মেঘ মুলুকের দেশে,
ঘুমিয়ে নেব আয়েস করে
মেঘবালিকার কেশে।
ইচ্ছে তো হয়, একটু খানি হারাই নিরুদ্দেশে!

মায়ের স্মৃতি

ঘরের দাওয়ায় ছড়িয়ে আছে
মায়ের পায়ের ধুলো,
সেই ধুলোতে জড়িয়ে আছে
সুখের সে দিনগুলো-

মা ডাকছে, ভোর হয়েছে
গাইছে কোকিল গান,
পড়তে এবার বসতে হবে
বই-খাতা সব আন।

মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে যায়
বিছ্না ছেড়ে বসি,
ভোরের হাওয়ায় ঘুম ছাড়েনা
দুই হাতে চোখ ঘসি।

মা চলে যায় ঠাকুর ঘরে
শঙ্খ-কাঁসি বাজে,
হয়তো তখন মগ্ন আমি
লাটাই খোঁজার কাজে।

সাত সকালে বাবার অফিস
রান্না করার তাড়া,
কাজের ফাঁকে মা বললো
‘নেই কেন রে সাড়া’।

তখন আমি দিচ্ছি সাড়া
সবুজ-শ্যামল মাঠে,
ভাল্লাগে না একলা ঘরে
মন বসে না পাঠে।

হারিয়ে গেছে সুখের সেদিন
অ-নে-ক অ-নে-ক দূরে,
মা’তো এখন কাচের ছবি
হৃদয় আসন জুড়ে।

ছড়ার মুলুক

একটা ছড়া আসি-ভাসি, ইচ্ছে সবুজ ডানা
অন্য ছড়া চোখ রাঙানি, সবকিছুতেই মানা!

একটা ছড়া মাসি-পিসি, আদর-স্নেহের দোলা
অন্য ছড়া পড়ার রুটিন, যায় না মোটে ভোলা!

একটা ছড়া খুশি-খুশি, আকাশ-বাতাস-মেঘে
অন্য ছড়া বন্দী পাখি, খাঁচায় একা জেগে!

একটা ছড়া জুটি-জুটি, সবার মাঝে জুটি
অন্য ছড়া হাত বাড়িয়ে খুঁজছে লুটোপুটি!

একটা ছড়া লুচি-লুচি, গুড়-মুড়ি আর খই
অন্য ছড়া আতা গাছের তোতা পাখি কই ?

একটা ছড়া ছুটি-ছুটি, উড়িয়ে দিলেম ঘুড়ি
অন্য ছড়া ইঁদুর দৌড়, শৈশব হয় চুরি!!

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
জন্ম: দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা। বাবা গৌরবরণ দাস এবং মা নমিতা দেবী। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পাশাপাশি তুলনামূলক ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। দুটোতেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এছাড়া মাসকমিউনিকেশন নিয়েও পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বিদ্যানগর কলেজের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক। প্রথম লেখা প্রকাশ 'দীপশিখা' পত্রিকার শারদ সংখ্যায়। তাঁর কয়েকটি কবিতার বই: মাটির ঘরের গল্প ( ২০০৪), কিশোরবেলা সোনার খাঁচায় (২০১৪), হাওয়ার নূপুর (২০২০) সহ অজস্র সংকলন ও সম্পাদিত গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার আগেই তিনি একজন প্রতিশ্রুতিমান কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। কবিতা চর্চার পাশাপাশি প্রবন্ধ ও কথাসাহিত্যের চর্চা সমানভাবে করে চলেছেন। কবি দুই দশকের বেশি কাল ধরে লেখালেখি করছেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও সংকলনে। বেশকিছুদিন সম্পাদনা করেছেন ছোটদের 'একতারা' সাহিত্য পত্রিকা। এছাড়া আমন্ত্রণমূলক সম্পাদনা করেছেন বহু পত্র-পত্রিকায়। তিনি গড়ে তুলেছেন শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক দুটি অন্যধারার প্রতিষ্ঠান 'বাংলার মুখ' ও মেনকাবালা দেবী স্মৃতি সংস্কৃতি আকাদেমি।' তাঁর গবেষণার বিষয় 'সুন্দরবনের জনজীবন ও বাংলা কথাসাহিত্য।' পাশাপাশি দলিত সমাজ ও সাহিত্যের প্রতি গভীরভাবে মনোযোগী। ফুলের সৌরভ নয়, জীবনের সৌরভ খুঁজে যাওয়া কবির সারা জীবনের সাধনা। সবুজ গাছপালাকে তিনি সন্তানের মতো ভালবাসেন। সুন্দরবন তাঁর কাছে আরাধ্য দেবী। সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন অজস্র পুরস্কার ও সম্মান: সুধারানী রায় স্মৃতি পুরস্কার (২০০৪), বাসুদেব সরকার স্মৃতি পদক (২০০৬), রোটারি লিটারেচার অ্যাওয়ার্ড (২০০৬), ১০০ ডায়মণ্ড গণসংবর্ধনা (২০০৮), পাঞ্চজন্য সাহিত্য পুরস্কার (২০১০), শতবার্ষিকী সাহিত্য সম্মাননা (২০১১), এশিয়ান কালচারাল লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০১৪), ডঃ রাধাকৃষ্ণন সম্মাননা (২০১৫), ডি.পি.এস.সি. সাহিত্য সম্মাননা (২০১৮), আত্মজন সম্মাননা (২০১৯), বিবেকানন্দ পুরস্কার (২০১৯), দীপালিকা সম্মাননা (২০১৯), সংহতি সম্মাননা (২০২০), সুকুমার রায় পুরস্কার (২০২০)।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!