সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে হিন্দু ধর্মীয় উপাসনালয়ে ও তাদের বাড়িঘরে হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশটির বিশিষ্ট ৪৭ নাগরিক। আজ শুক্রবার দেওয়া এ বিবৃতিতে হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় আমরা ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা মনে করি যারা এসব ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত, তারা দেশের সব নাগরিকের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার বিরোধী এবং পক্ষান্তরে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। তাই অবিলম্বে এইসব দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতের জন্য আমরা সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’
সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয় বিবৃতিতে।
এতে আরও বলা হয়, ‘কুমিল্লায় সংঘটিত ঘটনার পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সতর্ক, সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল। কিন্তু ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরও সাম্প্রদায়িক হামলা আমরা দেখলাম, যার দায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই নিষ্ক্রিয়তার কারণ কী তা খুঁজে বের করতে হবে।’
‘অন্যদিকে কিছু জায়গায় জড়ো হওয়া জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিবর্ষণের যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে শক্তিপ্রয়োগ পরিমিত ও আইনানুগ ছিল কি না তাও তদন্ত করে দেখতে হবে,’ এতে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটা এসব নিন্দনীয় সহিংস ঘটনার পর আমরা চরম উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে এগুলো প্রতিহত করার পরিবর্তে একে অপরকে দোষারোপ করার পুরোনো অভ্যাসে লিপ্ত হয়েছে। যথাযথ তথ্য-প্রমাণ বিবর্জিত এ ধরনের দোষারোপের রাজনীতি প্রকৃত অপরাধীদের প্রকারান্তরে আড়ালে থাকতে এবং পার পেয়ে যেতে সহায়তা করে।’
‘আমরা রাজনীতিবিদদেরকে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাই। একইসঙ্গে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঢালাওভাবে মামলা দায়ের, বিচারের নামে হয়রানি না করার এবং গ্রেপ্তার বাণিজ্যে লিপ্ত না হওয়ার অনুরোধ জানাই,’ এতে যোগ করা হয়।
‘অতীতে এ ধরনের অনেক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটলেও এর কোনো বিচার হয়নি’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে গত কয়েক দিনে যে সব ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে, তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এতে আরও বলা হয়, ‘একইসঙ্গে সমাজের সব শুভ শক্তিকে একত্রিত করে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সব নাগরিকের সমধিকার নিশ্চিত করতে অবিলম্বে একটি বাস্তব কর্মসূচি গ্রহণের জন্য আমরা সরকারে প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিবৃতিদাতারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রীপরিষদ সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি বিচারপতি আব্দুল মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমদ, অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক পারভীন হাসান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী, আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, অধ্যাপক আকমল হোসেন, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক স্বপন আদনান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোনোয়ার কামাল, অধ্যাপক নায়লা জামান খান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আর্টিকেল ১৯ এর আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, মানবাধিকারকর্মী ড. ফস্টিনা পেরেরা, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিয়াজ আসাদুল্লাহ ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. নোভা আহমেদ।