বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং সাম্প্রতিক হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো।
সোমবার (১৮ অক্টোবর) টুইটারে মিয়া সেপ্পো উল্লেখ করেন, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দুদের ওপর হামলা বাংলাদেশের সংবিধানের মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং এটা বন্ধ করা দরকার।
আমরা সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সহনশীলতা জোরদারে আমরা সবাইকে হাতে হাত রেখে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) রাতে কুমিল্লার দিঘীরপাড়ের একটি দুর্গাপূজার মণ্ডপে মূর্তির পায়ের ওপরে কোরআন শরিফ রাখার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন বুধবার সকালে দু’জন ৯৯৯ নম্বরে কল করে অভিযোগ জানালে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা পায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনওয়ারুল আজিম পূজামণ্ডপে গিয়ে কোরআন শরিফটি উদ্ধার করেন। মূর্তির পায়ের ওপর থেকে কোরআন উদ্ধারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে ওইদিন সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা নানুয়ার দিঘীরপাড়ে জড়ো হয়ে মিছিল করে এবং দু’টি মণ্ডপে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক আহমেদ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
বুধবার দুপুর ১২টার পর জেলা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। উত্তেজিত জনতা দু’টি মন্দিরে ও একটি পূজার গেটে ভাঙচুর করে। বিকেলে টমছম ব্রিজেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজিত জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত দফায় দফায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও মিছিলের ঘটনা ঘটে। এতে ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০০ জন আহত হন। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর জের ধরে গত কয়েকদিন হবিগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ ও নোয়াখালীতে কয়েকটি মন্দিরে ভাঙচুর হয়েছে। সব শেষ রোববার (১৭ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর একটি ফেসবুক পোস্টের জেরে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ১৩ নম্বর রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া-বটতলা ও বড়করিমপুর গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
এ ধরনের ধর্মীয় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠন নিন্দা জানাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।