বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন ও সাফল্যগাঁথা তুলে ধরার মহতী উদ্যোগের নাম ‘সুবর্ণযাত্রা।’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’র অনস্বীকার্য অবদান, যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই- বিশ্বশান্তির বার্তা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ পৃথিবীর অঙ্গীকার- এই তিনটি বিষয়কে উদ্দেশ্য করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত দেশপ্রেমিক প্রবাসী বাংলাদেশীদের গড়া- সুইডেনে নিবন্ধিত আন্তর্জাতিক অলাভজনক সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠন ‘চিন্তা ও চাকা’র ব্যানারে, ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে, দেশমাতৃকাকে হৃদয়ে ধারণ করে এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন কয়েকজন তরুণ- ক্যানাডা থেকে সৈয়দ ফারহান, ইংল্যাণ্ড থেকে রাকিবুল আদিদ ও ওয়াহেদ সাদেক, ফিনল্যান্ড থেকে মতিউর রহমান এবং সুইডেন থেকে কাজী আলম সহ মোট পাঁচজন অভিযাত্রী। এই সুবর্ণযাত্রার অভিযাত্রীরা ইউরোপ ও এশিয়ার প্রায় ৫০টি দেশ অতিক্রম করে আনুমানিক ৪০০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অপর্ণের মধ্যে দিয়ে এই ঐতিহাসিক যাত্রা সম্পন্ন করবেন তারা।

‘বিশ্ব ঘুরবে সোনার বাংলা, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’- এই শ্লোগান নিয়ে গত ১২ অক্টোবর উত্তর নরওয়ের নর্থ কেপ থেকে মোটর শোভাযাত্রা করে গতকাল ১৫ অক্টেবর বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ নরওয়ের বার্গেন শহরে এসে পৌঁছান। তাদেরকে স্বাগত জানান সাদিক হাসান, মাইকেল মালাকার রানা, শাহিনুল ইসলাম, আমিনুর রহমান, নিয়াজ আহমেদ, একরাম উদ্দিন, মুজতবা চৌধুরী, শাহিন সরোয়ার, তাহমিনা তানজিম হাসান সহ প্রমুখ।

হিম ঠান্ডা ও মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন প্রায় অর্ধশত প্রবাসী বাংলাদেশী। বিকেল সাড়ে ৪টায় শহরের মিউজিক প্যাভেলিয়নে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সূচনা হয়। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপরে দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন, সুবর্ণযাত্রার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন মতিউর রহমান। সর্বশেষে শিশু কিশোরদের কেক কাটার মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠানের সমাপ্ত হয়। আজ সকালে অভিযাত্রীগণ বার্গেন শহর থেকে নরওয়ের রাজধানী অসলো’র উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রায় ৩৫বছর বার্গেনে বসবাসরত সাদিক হাসান সাময়িকীর প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আমাদের হৃদয়ে চির অম্লান। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি- সেই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধারের হৃদয়ে গভীর থেকে স্মরণ করছি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বের কাছে বিস্ময়- যা বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে মহিমান্বিত করছে। একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমি গর্বিত এবং সুবর্ণযাত্রার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই, তাদের উদ্দেশ্য সফল হোক।

মানবাধিকার কর্মী মাইকেল মালাকার রানা বলেন, অপরিসীম সাহস, দৃঢ়চেতা মনোভাব ও আপসহীন নেতৃত্ব দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরাধীন বাঙালি জাতিকে সংগ্রামী হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছিলেন- দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটালেও আমরা তা ভুলে যাই নি। আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিশ্বব্যাপী যতই ছড়িয়ে পড়বে ততই এর গভীরতা সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে। সুবর্ণযাত্রার অভিযাত্রীদের জন্য শুভকামনা।

‘চিন্তা ও চাকা’র প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান খান এক অডিও বার্তায় জানান, এই অবিস্মরণীয় যাত্রায় ৩টি প্রধান বিষয়ের বার্তা বহন করা হবে। এক. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর অনস্বীকার্য অবদান ও বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অসামান্য অর্জনকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা। দুই. যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই- এ স্লোগানকে বুকে ধারণ করে বিশ্বশান্তির বার্তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তিন. জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ও দূষণমুক্ত বাসযোগ্য সুন্দর একটি সবুজ পৃথিবী, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়ার অঙ্গীকার ও আহ্বান।

তিনি আরও বলেন, সুবর্ণযাত্রা তার এই পথপরিক্রমায় প্রায় প্রতিটি প্রধান শহরে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সমন্বয় করে, বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের তথ্যচিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবে। প্রচারকৃত বিষয়ভিত্তিক কিছু মৌলিক গান ও কথামালার ডালা সাজিয়ে তা ছড়িয়ে দিতে দিতে এগিয়ে আসবে প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির দিকে। সুবর্ণযাত্রা দেশের কথা বলে। তাই সুবর্ণযাত্রা আমাদের সকলের। সুবর্ণযাত্রা বাংলাদেশের।

সুবর্ণযাত্রা এর বাংলাদেশের মিডিয়া ও কমিউনিকেশন কো-অর্ডিনেটর মডেল-অভিনেতা অন্তু করিম বলেন, একদল দেশপ্রেমিক প্রবাসী বাংলাদেশির এমন একটি উদ্যোগ সত্যিই নিজেদের গর্বিত করে। এই উদ্যোগের সঙ্গে সরাসরি জড়িত হতে পেরে আমিও গর্বিত। ধারাবাহিকভাবে মিডিয়া এবং সাংবাদিক ভাইদের সুবর্ণযাত্রার আপডেট তথ্য ও সংবাদ পৌঁছে দেব।

সুবর্ণযাত্রার অন্যতম একটি প্রতিশ্রুতি, ‘দূষণ মুক্ত সবুজ পৃথিবী।’ নরওয়ে থেকে বাংলাদেশে মোটর যাত্রা পথে যে পরিমান কার্বন নির্গত হবে, তা অফসেট করতে বাংলাদেশে ততোধিক গাছ লাগানো হবে, সেই ফলশ্রুতিতে, বায়ুমন্ডলে কার্বন নির্গমনের পূর্বেই তা অফসেট করার জন্য অগ্রিম গাছ রোপণ কর্মসূচীর সুচনা করলো ৫০০০ ফলজ গাছের চারা বিতরন ও রোপনের মাধ্যমে! এই কর্মসূচীর মাধ্যমে তা চলবে যাত্রার শেষ পর্যন্ত।

সুর্বণযাত্রার কার্যক্রমের অংশ হিসাবে সুবর্ণযাত্রার সহযোগীতায় নবচেতনা মানবিক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন বনায়নের কার্যক্রমের সহযোগী সংগঠন হিসাবে যশোর জেলার সদর উপজেলা এবং ঝিকরগাছা উপজেলাতে ২৫০০ জন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এবং গ্রাম পর্যায় জনসাধারণদের ২ টি করে কলমের ফলজ গাছ প্রদান করে।
‘সুবর্ণযাত্রা’র ভিডিওটি দেখতে নিচে ক্লিক করুন।