প্রায় পঁচিশ বছর আগের কথা। প্রতি বিজয়াদশমীর বিকালে দূরর্গার মূর্তি গঙ্গায় পড়ার পর বেলপাতায় ‘দূর্গানাম’ লেখা-র পর সামান। সিদ্ধি মুখে দিয়ে মা-বাবাকে প্রণাম করে মামার বাড়ি চলে যেতাম। সেবার সঙ্গে গেল নব-পরিণীতা স্ত্রী সর্বাণী। মামার বাড়ি ঘুগনি-নিমকি সহযোগে চা-পানের পর প্রতিমা দর্শনের গল্প সেরে বেশ কয়েকটি গজা-নাড়ু-ক্ষীরের সন্দেশ খেয়ে বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখতে দেখতে বাড়ি ফিরছি মাথাটা কেমন টলে গেল। হঠাৎ করে এমনটা হল কেন বুঝতে পারলাম না। সর্বাণী কিছু একটা আন্দাজ করে হাত ধরে নিয়ে এলো বাড়িতে। বাড়ি ফিরে দেখি বিষম কাণ্ড ঘটছে। ছোটোভাই বিছানায় শুয়ে ঠক্ ঠক্ করে কাঁপছে। মা বিপর্যস্তের মতো বসে। মেজোভাইও অকারণে হাসছে। মেজোভাইয়ের একবন্ধু এসেছিল মা-কে প্রণাম করতে, সে চুপ করে দাঁড়িয়েছিল। সর্বাণীকে দেখেই মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে বলল, “শু-শু-ভ বিজয়া বৌদি।”
এমন সময় বাবা এসে ঢুকলো বাড়িতে। মায়ের মুখে কথা ফুটলো, “দ্যাখো, কী ভয়ঙ্কর সিদ্ধি এনেছো এবার! এমনটাতো কোনোকালেই হয়নি। বিয়ে হয়ে এ-বাড়িতে এসেছি সাঁইত্রিশটা বছর হয়ে গেল- কখনো কই এমনটা তো দেখিনি।”
বাবা বাকি সব বাটা সিদ্ধি বাইরফেলে দিয়ে এসে বলল, “দোকানদার বলেছিল ভালো সিদ্ধি দিচ্ছি, খেলে ভালো লাগবে! কি করে আর জানবো …”
এই সময় খবর পেয়ে আমার বড় ভায়রাভাই এসে পড়ল। সবাইকে তেঁতুল-গোলা জল খাওয়াতেই বমি হয়ে সিদ্ধি বেরিয়ে গেল। রাতে না-খেয়েই সব শুয়ে পড়লাম। তবে ঘুম হয়েছিল জোরদার। সকালবেলা সবাই সুস্থ হয়ে গেলাম।