নাটোরের নলডাঙ্গায় হতদরিদ্রদের নামে সরকারের দেয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড নবায়নের নামে টাকা আদায়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে । উপজেলার খাদ্যবন্ধব কর্মসূচির ডিলার ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার যোগসাজসে এ টাকা আদায় করছেন বলে দাবী করেছেন হতদরিদ্র উপকারভোগীরা।
তবে ডিলার ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা এ অভিযোগ স্বীকার করে হতদরিদ্রদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
আবার তালিকায় নাম থাকলেও ৪ বছর ধরে চাল না পাওয়াসহ অনেক বিত্তবানরা এ সুবিধায় চাল উত্তোলন করে ১০ টাকা কেজির চাল প্রতিকেজি ৩০ টাকায় হতদরিদ্রদের কাছে বিক্রি করার অনেক অভিযোগ রয়েছে।
আর সচেতন মহল সরকারের জনবান্ধব এ উদ্যোগকে যারা টাকার বিনিময়ে বিক্রি ও অনিয়ম করছে, তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী করেন।এ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সভাপতি ও স্থানীয় উপজেলা প্রসাশন এ ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে হতদরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য ১০ টাকা কেজি দরে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি চাল ৩০০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন সরকার।
এ কর্মসুচীর আওতায় নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৬ হাজার ৮৩২ জন হতদরিদ্র উপকার ভোগীর তালিকা তৈরি করা হয়। প্রতিবছর মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই ৫ মাস ওই চাল বিতরনের জন্য উপজেলায় ১১ জন ডিলার নিয়োগ দেয় উপজেলা প্রশাসন।
গত ৫ বছর ধরে এ সুবিধা পেয়ে আসছে উপজেলার হতদরিদ্র ৬ হাজার ৮৩২ পরিবার।এ বছর হতদরিদ্র উপকারভোগীদের কাডের্র লেখার ঘর শেষ হওয়ায় নবায়নের সিদ্ধান্ত নেন সরকার। কার্ড নবায়নের জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ডিলারদের নির্দেশ দেয়।
উপজেলার ডিলাররা ওই সুযোগে কার্ড নবায়নের নামে কার্ড প্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেন উপকারভোগীরা। আবার তালিকায় নাম থাকলেও ৪ বছর ধরে চাল না পাওয়াসহ অনেক বিত্তবানরা এ সুবিধায় চাল উত্তোলন করে ১০ টাকা কেজির চাল প্রতিকেজি ৩০ টাকায় হতদরিদ্রদের কাছে বিক্রি করার অনেকে অভিযোগ করেছে।
বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুরের গ্রামের জায়েদা বেওয়া বলেন, ‘আমার নাম তালিকায় নাম থাকলেও কার্ড দেয়নি। এজন্য তিনি চাল তুলতে পারেনি।ডিলার আমার নামে বরাদ্দকৃত ৪ বছর ধরে চাল উত্তোলন করেছেন’ বলে অভিয়োগ করেন। তিনি বিগত বছরের এ চাল ফেরত ও এ ঘটনায় দায়ী ইউপি চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য ও ডিলারের তদন্ত করে বিচারের দাবী করেন।
বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নের অভিযুক্ত ডিলার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এর আগে একজনের নামের কার্ডের চাল পরিবারের যে কেউ তুলতো।পরে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার নির্দেশে একজনের নামে কার্ডে আরেকজন চাল তুলতে পারবে না।
এ নির্দেশ মোতাবেক চাল বিতরণ শুরু করলে এই জায়েদা বেওয়ার কার্ডের চাল আর কেউ তুলতে আসেনি।পরে ওই ওর্য়াডের ইউপি সদস্য মুকুল ফোন করলে আমি জায়েদা বেওয়াকে চাল দেওয়া শুরু করি। তার চাল আগে কে বা কাহারা তুলেছেন আমি আমি বলতে পারবো না।’
পশ্চিম মাধনগর গ্রামের এরশাদ সরদার, বাচ্চু রহমান ও কালিপদ অভিযোগ করে বলেন, ‘ডিলাররা চাল বিতরনের সময় কার্ড রেখে নবায়নের নামে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা আদায় করে। এ টাকা দিতে না চাইলে তারা কার্ড বাতিলের হুমকি দেয়।’
পাটুল হাফানিয়া গ্রামের রশিদা বেগমের স্বামী আশরাফুল ইসলাম রশিদ বলেন, আমি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে আমার স্ত্রীর নবায়নকৃত কার্ড নিতে আসলে আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা আদায় করার অভিযোগ করেন।
মাধনগর ইউনিয়নের অভিযুক্ত ডিলার মঞ্জুর আলম বাবু কার্ড নবায়নের জন্য টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার কিছু কর্মচারী উপকারভোগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে নবায়ন করা কার্ড দিয়ে ১২০ টাকা আদায় করেছে। আদায় করা টাকা আমরা ভুক্তভুগীদের কাছে ফেরত দিচ্ছি।’
নলডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রওশানুল কাওছার বলেন, ‘কার্ড নবায়নে কোন টাকা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়নি। ডিলারদের টাকা আদায় করার বিষয় জেনে আদায়কৃত টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এ প্রকল্পের সভাপতি ও নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আফরোজা খাতুন বলেন, ‘কার্ড নবায়নে কোন টাকা আদায় করা যাবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’