রক্তলাল রোদ
আখের রসের মতো উথলিয়ে ওঠে
কামুক রাতের লালা
সুরালাল রক্তের ওমে নারকেল
তেলের মতো উনিয়ে যায়
শজনে ডাঁটানরম শরীর
নিয়ন আলোয় প্লাবিত শহরে
অন্ধকার দরজায় দরজায় কড়া নাড়ে
আড়ষ্ট পূর্ণিমার চাঁদ উলঙ্গ আকাশে
হারিয়ে ফেলে সতীত্বের অহংকার
নীরবতার বুনোকাঁটা খচখচ
বিঁধে যায় শোকার্ত
সবিতার ঝলসানো হৃৎপিণ্ডে
রক্তের ফিনকি দুই চোখে ঝরনা হয়ে নাচে
শূন্যে উড়ে যায় কাঁচা ঘাসের আদিম গন্ধ
প্রজন্মের স্বপ্ন শুকনো পাতার মতো
হতাশার ঘূর্ণিবাতাসে ঘোরে
পৃথিবীর মাটি ভিজে গেছে দ্বিধার দলকে
প্রশান্তির বৃষ্টি কখনো হয়তো নামে
চালাক চাষির ছাদবাগানে
হয়তো ফোটে গন্ধহীন ফুল
বিষধর সাপের আশ্রয় রূপে
তবু বলবো জানালার পর্দা খুলে ফ্যালো
চোখের আলো ভিজে যাক রক্তলাল রোদে…
রাক্ষুসে মাছ
মিঠাজলে ঘাই মারে রাক্ষুসে মাছের এক ঝাঁক
আঁশটে গন্ধ চোখে মাখে চন্দ্রশালার ক্ষুধার্ত দাঁড়কাক
বাছুর ভেড়ার পালে আদর্শ বিলায় আর হাসে
কঁড়ে মগজের প্রজ্ঞা যক্ষ্মা রোগীর মতোন কাশে
সনদ ছিনিয়ে নেয় আততায়ীর অদৃশ্য হাত
অভিমানী মুক্তাপ্রভা ঝিনুকের পেটে কুপোকাত
পাকা জিভ চেখে দ্যাখে বেওয়ারিশ মাংসের বাসনা—
প্রথম সারিতে বসে টিকিট পেতে করে বাহানা
সম্মাননার মালায় পচা ফুল দুর্গন্ধ ছড়ায়
চতুর লোভের বিষে যেন তারার আলো পুড়ায়
যাদের অভাব নেই তারাই আজ ক্ষুধার্ত ঢের
যাদের ক্ষুধার্ত পেট বুকে জাগ্রত খনি স্বর্ণের
আগুন ইশারা
আগুন রঙের শাড়ি পরে সরষে ফুলের হলুদ
শয্যায় বেলুনবেলা হাতের ইশারায় সে ডাকলো
আমাকে; মুহূর্তে সারা শরীর কেঁপে উঠে অবশ
হয়ে গেলো; চোখের আলো ঝাঁক ঝাঁক মধুমক্ষিকা
হয়ে উড়ে গেলো তার কাছে; শাড়ির আগুনে পুড়ে
গেলো পাখনা; চোখগুলো মুক্তার মালা হয়ে গলায়
হাসছিলো; গোলাপজলে মুক্তার মালাটি সাতবার
চুবালো; একটুখানি সেঁকে নিলো আগরবাতির
ধোঁয়ায়; একটি চিল হয়ে মুক্তার মালাটি নখে
করে মেঘের ভেতর দিয়ে শাঁ শাঁ করে উড়ে গেলো
তারার আলোর আঁচে শুকিয়ে নিলো মেঘভেজা ডানা;
আলোঝলমলে একটি প্রাসাদের উপর পৌঁছিয়ে
ফেলে দিলো নিচে, লুফে নিলো এক অনিন্দ্যসুন্দরী
সাতরঙা ফুলের রসে ধুয়ে পরিয়ে দিলো রানির
গলায়; অন্ধকারের বিরাট চাদরে ঢেকে গেলো
প্রাসাদ; বাঘের তীব্র গর্জন,রক্তাক্ত দাঁত, বৃষ্টি
ফোঁটার রোদন,কাঁচা মাটির গন্ধ, আঁতুড়ঘরে
নবজাতকের চিৎকার আর নিভুনিভু এক তারা।
সবুজ কার্পেট
বহু বহু কাল আগে অজস্র ডাইনোসর পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াতো;
তারপর কঙ্কাল আর করুণ আখ্যান—তুমি তো হাওয়াই মিঠাই—
তিড়িং-বিড়িং করো—সর্বগ্রাসী নেশা যেন তোমাকে মাতাল করে রাখে,
সম্পদের হিমালয় জিগা গাছের আঠার মতো লালসায় লেগে থাকে;
দাপিয়ে বেড়াতে তুমি মহাপ্লাবনের আগে—চষে বেড়াতে এই পৃথিবী
জিউসের আক্রোশের ঝড়-ঝঞ্ঝার আগেও, এক মৎস অবতারের
বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের সতর্ক বার্তার আগে তোমার দম্ভে কাঁপতো পৃথিবী—
এখনো তীব্র দর্পে পৃথিবী চষে বেড়াও, প্রতিনিয়ত কাঁদাও তাকে;
ছিলে তুমি এককোষী অথবা দুটি নিক্ষিপ্ত অভিশপ্ত আলাভোলা প্রাণ,
তারপর ধীরে ধীরে পৃথিবীটা নীল হলো কোবরার লাগাতার ছোবলে—
দানবনখের আঁচড়ে পাতলা কাগজের মতো ফরফর ফেঁড়ে গেছে বুক,
তুমি নিজেই তোমার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সে গৌরবময় লড়াই
ম্লান করে দিয়েছে, অথচ সাজাতে পারতে এ পৃথিবীটা অনাগতের
মনের মতো করে; যেটুকু মহৎ সৃষ্টি বংশপরম্পরায় সেটুকু
হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে করেছো কলঙ্কিত—জননীর উদর ভরেছো
তুমি এক আকাশগঙ্গা বোমা এবং বারুদে; এখন নীল বিষ চুষবে কে?
জননীর বুক ফাটবে—জ্বলবে—একটানা জ্বলবে, তারপর হয়তো বা থরে
থরে সাজানো ফসিল তন্নতন্ন করে খুঁজবে ভিনগ্রহের দরদি চৌকস
বিজ্ঞানীরা, হয়তো বা, তোমারই শুভ প্রজ্ঞা বাঁচাবে মুমূর্ষু জননীকে—
অনাগত প্রজন্মের জন্য সবুজ কার্পেট বিছিয়ে রাখবে—ফোটাবে ফুল;
বর্ণিল ছ্যাঁক
বটগাছগুলো আজ দাউদাউ জ্বলে
ধোঁয়ার সাগরে ম্রিয়মাণ
মাঠে বাউরা ফসল চাতকের মতো
চাষির জন্য অপেক্ষমাণ
মরিয়ম ফুলচাষে মাতোয়ারা তুমি
সবুজ আগুনভেজা ছেলে
গেন্দা ফুলের বাগান গোসলব্যাকুল
দোনের জলের ঘোলা ঢলে
পলিমাটির সুবাস বালুঝড়ে ভেসে
মহাকাশে হারিয়ে গিয়েছে
পবিত্র জলের ফোঁটা নদী ও সাগরে
রাক্ষুসে মাছের মতো হাসে
এমন সময়ে তুমি এসো একবার
শিকড়ের কাঁচা গন্ধ মেখে
অর্পিত নীল আগুন ছাই হয়ে যাক
কালো চোখের বর্ণিল ছ্যাঁকে
ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকি
কৈশোরের সবুজ মাঠে
উড়তে থাকা রংবেরঙের
ফড়িঙের পাখায়, ঘুমন্ত
বাঁওড়ের জলের মতোন
ভোরগুলো, তালুবন্দি করে
দাঁড়িয়ে আছি আজ তোমার
বিষণ্ণ চোখ রাঙাবো বলে ;
তোমার অস্থির কোলে ঘুম
পাড়াতেই, রোদ-দলকের
সাথে লুকোচুরি খেলাচুর
শৈশবের একদোলনা
ন্যাংটো হাসি পাঁজাকোলা করে
প্রতিনিয়ত ফাঁসির মঞ্চে
অপেক্ষায় থাকি—নবোদিত
সূর্যের্র মতোন যৌবনের
প্রথম শিহরণ ঠোঁটে করে;
আমি মরে গিয়ে জেগে থাকি
তোমার রুক্ষ ঠেঁাটের ভাঁজে
নিংড়াবো বলে; সব যন্ত্রণা
ছাইগাদায় পঁতে দ্রাবিড়
মেয়ের মতো তুমি চুলের
আদিম বাসনায় নিরিবিলি
নিথর দেহ ভিজিয়ে দিয়ো;