দুর্গা মহাশক্তির দেবী। আদ্যাশক্তি। তিনি ছিলেন, আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন; তাই তিনি সনাতনী। জগতের সৃষ্টি পালন ও সংহারের দেবী তিনি। দেবী দুর্গা মহামায়া, মহিষাসুর মর্দিনী। তিনি নিত্যকালী হয়ে মহাকালকে ধারণ করে আছেন। সত্তঃ রজঃ ও তমঃ গুণাশ্রিতা তিনি।
দুর্গামাতার পূজা বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন নামে অনুষ্ঠিত হয়। শরতে শারদীয়া দুর্গা, হেমন্তে কাত্যায়নী দুর্গা এবং বসন্তকালে বাসন্তী দুর্গা নামে পূজিতা তিনি। মা দুর্গার পূজার ইতিহাসে বেশ পুরানো। আজ থেকে পাঁচ হাজার বছরেরও পূর্বে প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে নানা জায়গায় শক্তির দেবী দুর্গার স্তুতি-বন্দনা ও আরাধনা করতেন শাক্ত ভক্তগণ।
‘শাক্ত’ মানে যারা শক্তির উপাসনা করেন। বিভিন্ন স্থানে চতুর্ভুজা থেকে অষ্টাদশভ‚জা দেবীমূর্তি পূজিতা হতো। তবে দশভুজা দুর্গা প্রতিমাই সংখ্যায় অধিক। বর্তমানে সর্বত্র দশভুজা দুর্গামূর্তি পূজিতা ও পূজনীয়া। মূর্তিপূজা মানে পরমাত্মার সাকার উপাসনা। মূর্তিপূজার বিশেষত্ব হলো পরমাত্মাকে ব্যক্তি স্বরূপ মেনে তাঁকে বিশেষভাবে অনুধ্যান করা।
এতে ভক্তদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট মূর্তির মধ্যে ধ্যান এবং চিন্তা সহজ সাধ্য হয়। প্রায় সব আস্তিক ব্যক্তিই মানেন যে ভগবান সর্বত্র পরিপূর্ণ। তাই সতত সকল বস্তুর ও প্রাণীর মধ্যে ঈশ্বরের উপস্থিতি আছে বলে বিশ্বাস করেন তারা। সুতরাং মাটি খড় কাঠ পাথর কিংবা সোনা-রূপার তৈরি দেব-দেবীর মুর্তিতেও ঈশ্বর আছেন।
এজন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে মূর্তি পূজার মাধ্যমে ভগবানের মুখোমুখি হওয়া যায়। মৃন্ময়ী মাটির মূর্তিতে ঈশ্বরের চিন্ময়ী রূপ দর্শন করে ভক্তিভাবে পূজারী-ভক্তগণ আত্মহারা হয়ে যান। মা দুর্গার প্রতিমা কাঠামো জাগতিক শিক্ষার এক মহাচিত্র। প্রাকৃতিক, সামাজিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক, মানবিক ও নান্দনিক বিদ্যাপাঠ গ্রহণের এক মহাউপকরণ।
প্রতিমা কাঠামোতে মা দুর্গার সংগে আছেন দেবাদিদেব বাবা মহাদেব। মা বাবার সন্তান রূপে আছেন গণেশ কার্তিক লক্ষী ও সরস্বতী। আছে মহিষাসুর, সর্প ও সিংহ। শক্তির দেব দেবীগণের বিভিন্ন বাহনও স্থান পেয়েছে প্রতিমার গাঠনিক চিত্রপটে। যেমন-ইদুর, পেঁচা, ময়ূর ইত্যাদি।
সিদ্ধিদাতা গণেশ : সকল কর্মের প্রারম্ভে গণেশের পূজা করা হয়। গণেশ সিদ্ধিদাতা ও বিঘœ বিনাশক। খর্বাকৃতি দেহ, ত্রিনয়ন, চাহিহস্ত এবং হস্তীর ন্যায় মস্তক। গণেশ ঠাকুর শঙ্খ চক্র গদা ও পদ্মধারী চতুর্ভুজা। গণেশ মঙ্গল ও সিদ্ধির জনক বলে সকল দেবতার আগে পূজিত হয়। গণেশের অপর নাম গণপতি বা গণদেবতা।
গণেশ পূজারী ভক্ত উপাসককে গাণপত্য বলা হয়। বেদ লেখক হিসাবে গণেশের খ্যাতি আছে। বেদ চারটি। সাম, ঋক, যজুর ও অথর্ব। এজন্য গণেশের চার হাতকে বেদহস্তও বলে। শনির অভিশপ্ত দৃষ্টিপাতের কারণে গণেশের মুন্ডুপাত হলে দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর বাহন ঐরাবত হস্তীর মুন্ডু এনে গণেশের দেহে স্থাপন করেন এবং পুনর্জীবন দান করেন।
গণেশ ঠাকুরের দাঁত একটি। এজন্য তাঁকে এক দন্ত বলা হয়। একদা গণেশ কৈলাসে বাবা মহাদেব ও মাতা পার্বতীর অন্তঃপুরের দ্বার রক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে ভিতরে প্রবেশ করা নিয়ে পরশুরামের সংগে কথা কাটাকাটি আরম্ভ হয়। এক পর্যায়ে ধ্বস্তাধ্বস্তি এবং যুদ্ধ বেধে যায়।এতে পরশুরামের কুঠারের আঘাতে গণেশের একটি দন্ত উৎপাটিত হয়।
সেই থেকে গণপতি গণেশদেবের একটি দাঁত অর্থাৎ একদন্তে দয়াবন্তে চার ভুজাধারী।গণেশের বাহন মূষিক বা ইঁদুর। প্রাণী জগতের অনেকেই আমাদের দেব দেবীর বাহন। তাদের কিছু কিছু গুণের জন্যেই তারা দেব দেবীর আশ্রয় পেয়েছে। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ইঁদুর তী দাঁত দিয়ে সবকিছু কেটে ফেলতে সিদ্ধহস্ত। জীব অষ্টপাশে বদ্ধ।
এগুলো হলো-ঘৃণা, অপমান, লজ্জা, মান, মোহ, দম্ভ, দ্বেষ ও বৈগুণ্য। পাশ মানে বন্ধন রজ্জু। পাশ অর্থে মায়ার ফাঁসও ধরে নেওয়া যায়। বদ্ধ জীবকুলকে মায়া মোহের ফাঁস থেকে মোক্ষ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যেও গণেশ তাঁর বাহন পদে বরণ করেছেন। তী²দন্ত মূষিক বা ইঁদুরকে।
নবপত্রিকা নবদুর্গা ও কলাবৌ : দুর্গাপূজার সংগে প্রকৃতির পূজা জড়িত হয়ে আছে। ঐশ্বর্য প্রকৃতি থেকে আসে। শস্যই হলো ঐশ্বর্য। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা দেবী দুর্গার নয়টি নামকরণ করেছেন। এগুলো সমষ্টিগতভাবে নবদুর্গা নামে প্রসিদ্ধ। বৃক্ষলতার মধ্যেও মহাশক্তির অস্তিত্ব বিরাজমান। উদ্ভিদ জগতের প্রতীক নব প্রত্রিকা কলা বৌ রূপে অভিহিতা।
নব পত্রিকার নয়টি পল্লবে দুর্গাদেবী নয়টি রূপে পূজিতা। কচুতে কালিকা, হলুদে দুর্গা, জয়ন্তীতে কার্তিকী, বেলে শিবা, ডালিমে রক্ত দন্তিকা, অশোকে শোকরোহিতা, মানে চামুন্ডা আর ধানে লক্ষী। এবং কলাবৌ রূপে প্রকৃতির প্রতীক মা দুর্গা ব্রহ্মাণী নামে অধিষ্ঠাত্রী।
লক্ষী ধনসম্পদের দেবী : শিব-পার্বতীর কন্যা লক্ষী ধনসম্পদ ও বসতি বাণিজ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। লক্ষী দেবী স্বর্ণময়ী। তিনি কৃষিময়ী। লক্ষীদেবীর দুটি হাত। বাম হাতে ধন-ঐশ্বর্য্যরে ঝাঁপি বা ভান্ড, আর ডান বা দক্ষিণ হস্ত অভয় মুদ্রায় প্রকটিত।
Mahabub
Mahabub Khandakar
মা লক্ষীর বাহন পেঁচা। ঋকবেদে শ্রী ও ঐশ্বর্যের দেবী অর্থে লক্ষীর নাম উল্লেখিত। যে দেবী এতো দীপ্তিময়ী শোভাময়ী সেই দেবীর বাহন বড় কদকার পেঁচা। পেঁচা দিবান্ধ। ধনশালী হলেই লোক প্রায়ঃ বিষয় বৈভবে অন্ধ হয়ে যায়।
ধনী হবার আগে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে ধন পেলে সকলের উপকার করবো, আত্মীয় স্বজনদের দুঃখ কষ্টে থাকতে দিবো না কিন্তু ধনসম্পদ পাওয়া মাত্র সে অন্ধ পেঁচক হয়ে যায়। সেই সাথে অন্ধকার পথে, হীনপথে ধন উপার্জন না করার সতর্কবাণীও ধ্বনিত হচ্ছে লোক শিক্ষার জন্যে।
দেবসেনাপতি কার্তিক : মহাদেব ও পাবর্তীর পুত্র কার্তিক দেবসেনাপতি। ইনি যৌবশক্তির প্রতিমূর্তি। বালক ও যুবকগণের আদর্শ। সৌন্দর্য এবং বীর্য-এ দুটি বৈভবই কার্তিকের ভেতরে বিদ্যমান। কার্তিক ঠাকুরের দুই হাতে তীর ও ধনুক।
দেব সেনাপতি কার্তিকের বাহন চিত্রপুচ্ছ শিখি বা ময়ূর। প্রাণী হিসাবে ময়ূরের অনেক গুণ লক্ষণীয়। যুদ্ধ কৌশলী হওয়া, প্রাতরুত্থান, দলগতভাবে বসবাস ও ভোজন, স্ত্রী রক্ষায় বিক্রম প্রকাশ ময়ূরের জন্মগত চরিত্রের লক্ষণ। স্বভাবগতভাবে ময়ূরের ভেতরে ক্ষত্রিয়ধর্মের গুণ প্রত্যক্ষ করা যায়।
বিদ্যাদেবী সরস্বতী : দেবী সরস্বতী শুভ্রাবসনা, কমলাসনা, হংসবাহিনী, বীণা-পুস্তকধারিণী জ্যোতির্ময়ী প্রতিমা। জ্ঞান ও বিদ্যাবুদ্ধির দেবী সরস্বতী। বেদে সরস্বতী জ্যোতির্ময়ী অধিষ্ঠাত্রী দেবী নামে আখ্যায়িতা। ইনি বাগ্দেবী রূপে বাসন্তী পঞ্চমী তিথিতে বাংলার ঘরে ঘরে পূজিতা হয়ে থাকেন। দেবী সরস্বতী সমুদয় নরনারীর হৃদয়ে জ্যোতিঃ সঞ্চারিত করেন।
সরস্বতী সুবুদ্ধির উদ্বোধনকারিণী ও যজ্ঞের ধারণকর্ত্রী। সরস্বতী মূর্তি সৌন্দর্য ও মাধুর্যের উৎস। শ্বেতবরণে দেবী মনোহরা। শিরে উজ্জ্বল কিরীট, কর্ণে কুন্ডল, গলায় গজমুক্তার হার। মুখে মৃদু-মধুর হাস্য বিকাশ। সর্বাঙ্গে বাসন্তী মাধুরী। চিরযৌবনা, নব লাবণ্যে বিমোহিনী। অজ্ঞাননাশিনী চৈতন্যরূপিনী সরস্বতী দেবীর দুটি হস্তে বীণা ও পুস্তক রক্ষিত।
এই দেবীর বাহন মরাল বা হংস। প্রাণী হিসাবে হংসচরিত্র বিশ্লেষণে হংসবাহিনী সরস্বতী দেবীর মাহাত্ম্য আরো প্রকটিত হয়। যিনি যে মার্গেরই সাধক হোন না কেন, সাধক মাত্রেরই অবস্থা তিনটি। তা হলো-সাধনাবস্থা, সিদ্ধাবস্থা ও মুক্তাবস্থা। প্রাণীজগতে হংসের জীবনচরিত প্রত্যক্ষ করলে দেখা যায় যে, জল ও দুধ মিশ্রণ থেকে হাঁস শুধু দুধটুকু গ্রহণ করে।
অর্থাৎ অসার জলীয় বস্তু পরিহার করে সারভ‚ত দুগ্ধ বেছে নেওয়ার জ্ঞান বিবেক যোগ্যতা আছে। সাধন অবস্থায় অনিত্য বস্তু ত্যাজ্য হয় এবং নিত্য বস্তুর ভজনায় স্বয়ং প্রবৃত্ত হন। হাঁস জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে বিচরণ গতি সম্পন্ন। সিদ্ধাবস্থায় সাধক ও সর্বত্র উদার মানসিকতা নিয়ে চলাচলের ক্ষমতা অর্জন করেন। সিদ্ধসাধকের মন সংকীর্ণ গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ নয়।
হাঁস জল-কাদায় বিচরণ করলেও তার শরীরে ওগুলোর কিছুই লেগে থাকে না। এবং জল কাদায় লিপ্ত নয়। একজন মুক্ত সাধক হাঁসের মতোই লোক কল্যাণার্থে মালিন্যপূর্ণ সংসারে থেকে ভালো-মন্দ, লাভ-অলাভ, জয়-পরাজয়াদির দ্বদ্ব সর্বদা নির্লিপ্ত।
মনসাদেবী-সর্প : দুর্গা কাঠামোতে অসুর নাশিনী মায়ের হাতে সর্প বা সাপ বিদ্যমান। সর্প বিষাক্ত কিন্তু প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সাপের মতো বিপদজনক বিষাক্ত প্রাণীরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শাস্ত্র মতে- সর্প মনসাদেবী রূপে পূজিতা। জ্ঞান শক্তি ভক্তি যোগের সমন্বয় মূর্তি মনসা। সর্পবিষ হরণ করেন তিনি। এ জন্যেই মনসাকে বলা হয় বিষহরি।
অশুভশক্তি মহিষাসুর : মায়ের পদলগ্নে ত্রিশূলবিদ্ধ মহিষাসুর শায়িত। মহিষাসুর অন্যায়-অশুব শক্তির মূর্ত এক প্রতীক। সুরগণের প্রতি অন্যায় অবিচার করায় দেবীদুর্গা অসুরকে সমুচিত সমুচিত শিক্ষা দিচ্ছেন। দুস্কৃতী ব্যক্তি যত ক্ষমতাধর হোক না কেন, এ জগতে তার পরাজয়-পদস অনিবার্য।
দশভুজা দুর্গাদেবী : মা দুর্গা প্রকৃতি, বিশ্বের আদি কারণ ও শিবপত্নী। অসুর বিনাশিনী দুর্গা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব ও সম্মিলিত দেবগণের সৃষ্ট এক মহাশক্তি নারী। ত্রিনয়না মাতৃস্বরূপা। দুর্গামাতার দশটি হস্ত তাই তিনি দশভুজা। হস্ত বা হাত কর্মশক্তির প্রতীক। তিনি কোন ব্যক্তি বিশেষের নন; দশেজনের-সকলের। দশজন একত্রিত হলে সমাজে ভালো কিছু করা সম্ভব, এমন ইংগিত প্রদান করা হয়েছে। মা দশহাতে দশদিক প্রতিপালন করেন।
দেবী দুর্গা দশহাতে দশটি অস্ত্র ও উপকরণ ধারণ করে আছেন। দেবী দুর্গার ডানদিকের পাঁচ হাতের অস্ত্রগুলো যথাক্রমে ত্রিশূল খড়গ, চক্র, বান ও শক্তি। বাম দিকের হস্তগুলোতে রয়েছে শঙ্খ, খেটক (ঢোল), ঘন্টা, অঙ্কুশ ও পাশ (সর্প)। দেবী দুর্গা সব রকম দুর্গতি নাশ করে থাকেন, তাই তিনি দুর্গা। এছাড়া দুর্গম নামক এক অসুরকে বধ করার কারণেও তাঁর নাম ‘দুর্গা’ হয়।
পশুরাজ সিংহ দেবীর বাহন। সিংহের বিভিন্ন গুণের জন্যে মহাদেবীর বাহন হিসাবে নির্বাচিত। পশুরাজা সিংহের মধ্যে পালন ও পোষণের রাজকীয় ভাবটি বিদ্যমান। অন্যান্য মাংসাশী প্রাণীর মতো সিংহ কারণে-অকারণে জীব হিংসা করে না। শুধু ক্ষুধার্ত হলেই সে শিকার অন্বেষণে প্রবৃত্ত হয়। সিংহ দেখতে খুব সুন্দর। মস্তকে ও স্কন্ধে গুচ্ছবদ্ধ পাটল কেশর, রাজার মতোই ঐশ্বর্যদৃপ্ত।
প্রাণীতত্তবিদ পন্ডিতেরা বলেন-পশুগণের মধ্যে সিংহের উদ্যোগ আদর্শস্থানীয়। ছোট-বড় সকল কাজেই তার সমান চেষ্টা ও উদ্যম। সিংহ অধ্যবসায়ী কারণ ক্ষুধা পেলে একদিনে মাত্র একবার শিকার করে। এক লাফে শিকার ধরা সম্ভব না হলে দ্বিতীয়বার আর শিকার অন্বেষণে অভিপ্রায়ী নয় সিংহ। সিংহ বছরে মাত্র একবার রতিঃরমণ করে। ঝড়-বৃষ্টি, মেঘ-বজ্র সংকুল দুর্যোগময় তিথি জন্মষ্টমীতে সিংহের বীর্য স্খলন ঘটে।
দেবাদিদেব মহাদেব : মা পার্বতীর পতিরূপে শিব স্থান পেয়েছেন সবার শীর্ষে। ইনি দেবাদিদেব মহাদেব। জগৎ সংসারের কর্তা। ত্রিলোক স্বামী। তিনি যোগীশ্রেষ্ঠ। বিরূপাক্ষ-ত্রিলোচন। সবার চেয়ে বড়-সবার উপরে।দুর্গা প্রতিমা কাঠামোতে বিভিন্ন দেব-দেবীর সংগে যে সকল জীবজন্তু ও গুল্মবৃক্ষ স্থান পেয়েছে, সেগুলো আমাদের চিরচেনা পরিবেশের প্রাকৃতিক উপাদান।
বিভিন্ন দেবদেবী যেমন-গণেশ, সরস্বতী প্রভৃতি দেবীদুর্গা মাতার শক্তি-বৈভবেরই অংশ। এক থেকে বহু। সমষ্টির বিভাগ-বিভাজন। কাঠামো জুড়ে বিদ্যমান দেব-দেবীর পিতা মাতা জাগতিক পিতা মাতার মতো নয়। আমরা দেব-দেবীগণকে আত্মীয়করণ করার জন্যে পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা সম্পর্ক তৈরি করে আনন্দ লাভ করি। মা দুর্গা জগজ্জননী। তিনি মাতৃরূপা-মহাপ্রকৃতি। তাই তাঁর প্রতিমায় পরমা প্রকৃতির চিরন্তন চিত্রই ফুটে উঠেছে।
তথ্যসুত্র – শ্রী শিবশঙ্কর চক্রবর্ত্তী, সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (প্রথম খন্ড), ভবেশ রায়, মূর্তিপূজা কী ও কেন, সুধীর চন্দ্র সরকার, পৌরাণিক অভিধান, স্বামী জগদীশ্বরানন্দ, শ্রী শ্রী চন্ডী। লেখক – বাউল, কবি, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক।