আইন ও বিচার বিভাগ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জিআইজেড-এর যৌথ প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশন ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃক আয়োজিত মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক দুই দিনব্যাপী অনলাইন প্রশিক্ষণ গত ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষণটি যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে জার্মান ও বৃটিশ সরকার।
২৮ সেপ্টেম্বর অনলাইন এই প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উম্মে কুলসুম, যুগ্ম সচিব (মতামত), আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তাহেরা ইয়াসমিন, অপারেসন্স ডিরেক্টর, রুল অফ ল প্রোগ্রাম, জিআইজেড। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শামিম আহমেদ, সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশন।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য ও প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন ইকবাল মাসুদ, পরিচালক, স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। স্বাগত বক্তব্য তিনি বলেন, দেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি অবহেলিত। বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। জিআইজেড-এর সহযোগিতায় ইতোমধ্যে দেশের ৬৮টি কারাগারের কারা কর্মকর্তা ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কোভিড -১৯ প্রস্তুতি ও চাপ বাবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানের মহতী উদ্যোগ। যার লক্ষ্য মানসিকভাবে সুস্থ ও ভাল থেকে চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করা ও স্বাভাবিক দৈনন্দিন কার্যক্রমে নিজেদেরকে সঠিক ও সুন্দরভাবে মনোনিবেশ করা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উম্মে কুলসুম বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইন ও বিচার বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সারাদেশে মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ বাড়াতে বিচারক নিয়োগ, আইন প্রণয়ন, জনবল কাঠামো বৃদ্ধি, আদালত ভবন নির্মাণসহ বহূমুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার ফলে দেখা দেয় নানাবিধ অসুখ-বিসুখ, কাজে উৎসাহ কমে যায়, সীমিতসংখ্যক বিচারক নিয়ে বিপুল সংখ্যক মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। এই প্রশিক্ষণটি বিচারকদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে তিন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে শামীম আহমেদ বলেন, আমরা ব্যক্তির বাহ্যিক স্বাস্থ্য অর্থাৎ শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য কত কিছুই না করে থাকি, কিন্তু সে অনুপাতে কি আমরা মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেই? মন আর মানসিক স্বাস্থ্য দুটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে আমাদের মনের অভ্যন্তরীণ আচরণ এবং আবেগের সমষ্টি। আয়োজিত মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণটি নারী বিচারকদের জন্য অত্যন্ত সমযোপযোগী। তাই এই ধরনের প্রশিক্ষণ আয়োজন করায় জিআইজেড ও ঢাকা আহছানিয়া মিশনকে তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তাহেরা ইয়াসমিন বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জিআইজেড যৌথভাবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সাথে কাজ করে যাচ্ছে, ফলে ১৯০০ আইনজীবীকে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় দক্ষ করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার ১৮৩ জন জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা ও কর্মচারী ও ৫০ জন বিচারকদের ইতোপূর্বে কোভিড -১৯ প্রস্তুতি ও চাপ বাবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছি।
নারী বিচারকদের জন্য আয়োজিত মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণটির বিভিন্ন সেশন দেশের বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্টগণ পরিচালনা করবেন। উদ্বোধনী ব্যাচে ৫১ জন নারী বিচারক অংশগ্রহণ করছেন। বাংলাদেশ মহিলা জাজেস এসোসিয়েশনের সহযোগিতায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তত্ত্বাবধানে ১০টি ব্যাচের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪টি জেলার ৫১৫ জন নারী বিচারকদের এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।