জাপানে গর্ভবতী নারীদের সন্তান ভূমিষ্ঠ বিষয়ে প্রচলিত প্রথা

ড. হিয়া মুখার্জি
ড. হিয়া মুখার্জি
12 মিনিটে পড়ুন
ছবি: প্রতীকী ও সংগৃহীত।

ছোটবেলা থেকেই আমার মনের ভিতরে একটা সুপ্ত বাসনা ছিল যে, বড়ো হয়ে বিদেশি ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করবো এবং সেই দেশের সংস্কৃতি ও মানুষকে ভালভাবে জানব। তাই শেষপর্যন্ত বিদেশি ভাষা হিসাবে আমি জাপানি ভাষাকে বেছে নিয়েছি। ভারতবর্ষের দিল্লীর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাপানি ভাষাতে প্রথমে মাস্টার ডিগ্রী ও পরবর্তীকালে ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ডিগ্রী অর্জন করি। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবার সময়ে, পড়াশোনা সূত্রে বারবার আমি জাপানে যাওয়ার সুযোগ পাই। কিন্তু বরাবরই সেই যাত্রাগুলি ছিল অল্প কয়েকদিনের জন্য। অল্প কয়েকদিনের জন্য হলেও সেইসময়ে পূর্ব এশিয়ার এই ছোট্ট দেশ জাপানে গিয়ে ঘুরে ফিরে আমি বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই তখন থেকেই মনে মনে স্বপ্নের মায়াজাল বুনতে শুরু করি যে কোন দিন যদি উচ্চশিক্ষা কিংবা গবেষণা করবার সুযোগ আসে তবে পৃথিবীর অন্য কোন দেশ নয় বরং এই দেশে এসেই আমি আমার গবেষণার কাজ সম্পন্ন করবো। তাই বেশীদিন আর অপেক্ষা করতে হলনা। সুযোগটা চলেই এল। জাপান সরকারের স্কলারশিপ ‘মোনবুকাগাকুশো’ নিয়ে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথমবারের মতন দীর্ঘদিনের জন্য জাপানে গিয়ে থাকা ও সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করবার সুযোগ পাই। এবারে আলোচনা করি, কেন আমি জাপানে গিয়ে গবেষণা করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর জাপানে গিয়ে আমি কী ধরণের গবেষণা করেছিলাম। প্রথমই না বললেই নয়, এই ছোট্ট দেশটার নানান ধরনের সংস্কৃতি, সামাজিক রীতিনীতি ও রেওয়াজ আমাকে বেশ আকর্ষিত করেছিল, তাই সেখানকার মানুষদের রীতি ও রেওয়াজকে আরও ভালভাবে জানবার ইচ্ছা কিংবা কৌতূহল ক্রমশই যেন মনের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

আমার গবেষণার মুল বিষয় সম্বন্ধে যদি বলি, বিশেষকরে জাপানের এখনকার প্রজন্মের গর্ভবতী মহিলারা ও মায়েরা, একটা সন্তান জন্মদানের আগে ও পরে ঠিক কি কি ধরনের রীতি ও রেওয়াজকে আজও পালন করে চলেছেন, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে কিভাবে তারা একটা শিশুকে বড়ো করে তোলেন, পুরাতন কাল থেকে পালিত হয়ে আসা এসব রীতিনীতিগুলিকে কিভাবে পালন করা হয়ে থাকে, তারা সেই রীতিনীতিগুলি সম্বন্ধে কী মত পোষণ করেন ইত্যাদি নানান বিষয়ে জানবার জন্য আমি জাপানে গিয়ে ওখানকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এবারের আলোচনা করা যাক আমি জাপানিদের সন্তান জন্মানোর সময়ে প্রচলিত রীতি ও রেওয়াজ হিসাবে কোন কোন রীতিনীতিকে গবেষণা করাবার জন্য বেছে নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি,  জাপানে যখন একটা সন্তান জন্মগ্রহণ করে তখন তাকে কেন্দ্র করে গর্ভাবস্থার সময় থেকে জন্মানোর পরবর্তী এক বৎসর বয়স পর্যন্ত নানান ধরনের সনাতন রীতি ও রেওয়াজ আজও পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে সমস্ত রীতিনীতিকে নিয়ে বিস্তারিতভাবে গবেষণা করতে পারিনি। তাই আমি আমার গবেষণার বিষয় হিসাবে জাপানে গর্ভাবস্থার সময় থেকে সুস্থভাবে একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করার  ঠিক পরবর্তী মুহূর্ত পর্যন্ত কখন কি কি ধরনের রীতিনীতিকে পালন করা হয়, সেগুলির উপর আলোকপাত করি। আমার রিসার্চের সাথে যুক্ত বিভিন্ন জার্নালের গবেষণাপত্র এবং বইগুলিকে পড়ে আমি জানতে পারি যে, জাপানে একটি সন্তানের ভূমিষ্ঠকে কেন্দ্র করে জায়গাভিত্তিক প্রচলিত রীতি ও রেওয়াজ সম্বন্ধে নানান গবেষণা ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু জাপানের অন্যতম শহর হিসাবে পরিচিত আইচি প্রিফেকচারের নাগোয়া শহরে একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে তখন তাঁকে কেন্দ্র করে কেমন ভাবে কী ধরণের রীতি ও রেওয়াজকে পালন করা হয়ে থাকে সেই বিষয়ে বিন্দুমাত্র বর্ণনা নেই বললেই চলে। এছাড়াও আরেকটি গুরুত্মপূর্ণ বিষয়ের দিকে আমার নজর পড়ে সেটি হল, এই নাগোয়া শহরে অবস্থিত কোন কোন শিন্ত ও বৌদ্ধ মন্দিরগুলিকে পরিদর্শন করে গর্ভবতী মহিলা ও মায়েরা সন্তান জন্মানোর সাথে যুক্ত রীতিনীতিগুলিকে পালন করে থাকেন এবং কেন সেই বিশেষ মন্দিরগুলিতে যাওয়া হয়, সেই মন্দিরগুলির ইতিহাস ও ভূমিকা কি, সেই বিষয়েও খুব একটা জানা যায়না বলে আমি সেটাও আমার গবেষণার মধ্যে তুলে ধরি। তাছাড়াও এর আগে কোন গবেষণাতেই জাপানের গর্ভবতী মহিলা ও মায়েরা পুরাতন কাল থেকে পালিত হয়ে আসা বিভিন্ন রীতিনীতিগুলি সম্বন্ধে কি মত পোষণ করেন সেই বিষয়েও কোন বর্ণনা পাওয়া যায়না। তাই আমি আমার গবেষণার “কেস স্টাডির” জায়গা হিসাবে জাপানের চিউবু রিজিওয়নের “নাগোয়া’ শহরকে বেছে নিয়েছি এবং সেখাকার বিভিন্ন মন্দিরগুলিতে গিয়ে সেখানাকার পুরোহিতদের কাছ থেকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করি। আবার নাগোয়া শহরে বসবাসকারী গর্ভবতী মহিলা ও মায়েদের কাছ থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করবার জন্য প্রশ্নউত্তরের মাধ্যমে তাঁদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম।

এবারে আলোচনা করবো একটা বাচ্চা জন্মানোর আগে কোন কোন রীতিনীতিগুলিকে পালন করা হয়। প্রথমেই যে রীতিটির কথা উল্লেখ না করলেই নয় সেটি হল “আনযানকিগান।” এই রীতিটি সাধারণত গর্ভবস্থার পঞ্চম মাসে কিংবা সপ্তম মাসে পালন করা হয়। জাপানি ভাষাতে “আনযান” শব্দের অর্থ হল সুস্থ ভাবে একটি শিশুকে জন্ম দেওয়া ও “কিগান” শব্দের অর্থ হল প্রার্থনা করা। এই প্রথাটি পালন করার মাধ্যমে একটি গর্ভবতী মহিলা এই কামনা করেন যে তার গর্ভের শিশুটি যেন সুস্থ ভাবে এই পৃথিবীতে জন্ম নিতে পারে। জাপানে আবার এই বিশেষ রীতিটিকে পালন করবার জন্য জাপানি গর্ভবতী মহিলারা বিশেষ বিশেষ মন্দির পরিদর্শন করতে পছন্দ করেন। বিস্তারিতভাবে যদি বলি, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে কেবলমাত্র “আনযানকিগান” প্রার্থনাটি নিবেদন করবার জন্য লোকমুখে প্রচলিত যে মন্দিরগুলি আছে সেই গুলিতে তাঁরা যদি পরিদর্শন করেন এবং ভগবানের কাছে পূজা নিবেদন করেন তাহলে তারা অবশ্যই কোনরকম বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই একটি সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন। আবার আরেকটি বিশেষ রীতি হল “হারাওবিইয়াই।” বর্তমানকালে এই রীতিটি মূলত “আনযানকিগানের” সাথে একসঙ্গে পালন করা হয়। কিন্তু পুরাতনকালে “আনযানকিগান” ও “হারাওবিইয়াই’ রীতিটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পালন করবার নিয়ম ছিল। সময়ের সাথে সাথে সেই নিয়মেরও বৈচিত্র ঘটেছে। জাপানি ভাষাতে “হারা” শব্দের অর্থ হল পেট আর “ওবি” শব্দের অর্থ হল বেল্ট এবং “ইয়াই” শব্দের অর্থ হল অনুষ্ঠান। একজন গর্ভবতী মহিলা তার গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে কিংবা সপ্তম মাসে এক ধরনের বেল্টকে পেটে বাঁধেন যাতে তাঁর শিশুটি নিরাপদে ধীরে ধীরে পেটের মধ্যে একটু একটু করে বড়ো হয়ে উঠতে পারে। এই বেল্টটি মূলত শিন্ত মন্দির কিংবা বৌদ্ধ মন্দিরের দেবতার কাছে আগে থেকে নিবেদন করে শুদ্ধিকরন করবার পরই তাঁরা এটা ব্যবহার করে থাকেন। তারা মনে করেন ভগবানের আশীর্বাদ সবসময় সেই বেল্টটির সাথে আছে। এই বেল্টটিকে সাধারণত “ওসারাশি” বলা হয়। এটি মূলত ধবধবে সাদা রঙের লম্বা দৈর্ঘ্যের সুতির কাপড় এবং এর দৈর্ঘ্য মোটামুটি দুই থেকে দশ মিটার। গর্ভাবস্থার সময়ে এই কাপড়টিকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে পেটের নীচে বাঁধা হয় এবং সন্তানের জন্মের পরে কোমরের চারপাশে আবৃত করে রাখা হয়। সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হল এই “ওসারাশি” কাপড়ের শুভ্রতা এবং বিশুদ্ধতার আচারগত গুরুত্ব রয়েছে। জাপানের শিন্ত ধর্মে সাদা রঙকে বিশুদ্ধতার প্রতীক মনে করা হয়। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের জাপানি মহিলারা যখন গর্ভবতী হন তখন তারা এই ধরনের কাপড়কে পেটে বাঁধতে পছন্দ করেননা। কেননা এই কাপড়টিকে পেটে বাঁধার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে যা বর্তমান প্রজন্মের বেশীরভাগ মহিলাদেরই অজানা। এবারে আলোকপাত করতে চাই আরেকটি বিশেষ রীতির উপড়ে। সেটি হল “সাতোগায়েরি শুশসান।” জাপানের গর্ভবতী মহিলারা শিশুকে জন্ম দেওয়ার জন্য নিজের বাপের বাড়িতে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে ফিরে যান এবং নিজের বাবা, মা ও পরিবারের অন্যান্য লোকজনদের সহযোগিতায় সুস্থভাবে একটি শিশুকে জন্ম দেওয়ার পর দীর্ঘদিন তাঁরা সেখানে থাকেন। এই রীতিটি পালন করার মাধ্যমে নিজের মায়ের কাছ থেকে কিভাবে শিশুকে লালন পালন করবেন, কিভাবে সদ্যজাত শিশুটির যত্ন ও দেখভাল করবেন সেই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। এই সমস্ত রীতিনীতিগুলিকে একটা বাচ্চা জন্মানোর আগে পালন করা হয়।

এবারে আসা যাক জনামানর পরপরই কি কি ধরনের রীতিনীতিগুলিকে পালন করা হয়। “ওসিচিয়া” রীতিটির সম্বন্ধে যদি বলি, একটি শিশু সুস্থভাবে জন্মানোর সাতদিনের মাথায় এই রীতিটি পালন করা হয়। এখানে বলে রাখি জাপানি ভাষাতে “সিচি” মানে হল সাত, “য়া” হল রাত্রিকে বোঝায়। আগে জাপানে শিশু মৃত্যুর হার অনেক বেশী ছিল বলে, আগেকার দিনে যখন একটি শিশু জন্মের পর থেকে সফলভাবে সপ্তম দিনে পা রাখত তখন সেই উপলক্ষে ভগবানকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য এবং ভবিষ্যতে শিশুটির সুস্থতা  বৃদ্ধিকে কামনা করে, নিজেদের আশেপাশের লোকজনকে নিমন্ত্রণ করে, “সেকিহান” নামক এক ঐতিহ্যবাহী খাবারকে তৈরি করে, নিমন্ত্রিত সকলের মধ্যে বিতরণ করে “ওসিচিয়া” অনুষ্ঠানটি পালন করা হত। কিন্তু এখন আর এই রীতিটি অতটা পালন করা হয়না বললেই চলে। “সেকিহান” প্রসঙ্গে যদি বলি, আজুকি বলে এক ধরনের লাল রঙের কলাইশুটি আছে সেটিকে বিশেষ পদ্ধতিতে জাপানি ভাতের সাথে সেদ্ধ করে খাওয়া হয়। জাপানে কেবলমাত্র শুভ অনুষ্ঠানে এই ঐতিহ্যবাহী বিশেষ খাবার খাওয়ার রেওয়াজ আছে। আবার এইসময়ে আরেকটি বিশেষ রীতিকে পালন করা হয় সেটি হল “মেইমেইসিকি।” এবারে বলব কী এই “মেইমেইসিকি? জাপানি ভাষাতে “মেইমেই” শব্দের অর্থ হল নামকরণ। “সিকি” শব্দের অর্থ হল সেরিমনি। “মেইমেইসিকি” রীতিটিকে পালন করার মাধ্যমে একটি শিশুকে প্রথমবার নামকরণ করা হয়। এটি সাধারণত “ওসিচিয়া” যেদিন পালন করা হয় সেইদিনই একসাথে অনুষ্ঠিত হয়। একটি সাদা কাগজের উপড়ে কানজিতে শিশুটির নাম লেখা হয় এবং পরিবারের সদস্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুটিকে স্বাগত জানানো হয়। আবার এই বিশেষ দিনের মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখবার জন্য বেশীরভাগ বাবা ও মায়েরা একটি সাদা কাগজের উপড়ে তাদের সদ্যজাত শিশুটির হাতের ছাপ এবং পায়ের ছাপ নিয়ে রাখেন। এখকার প্রজন্মের বাবা মায়েরা নিজেদের পছন্দ মতন সুন্দর সুন্দর নাম ইন্টারনেট থেকে খুঁজে কানজিতে সাদা কাগজের উপড়ে লিখে বাচ্চাটা যেই ঘরে ঘুমোয় সেই ঘরের দেওয়ালে কিংবা বাড়িতে যেখানে ভগবান থাকে সেই ঘরের দেওয়ালে অথবা ভগবানের সিংহাসনের কাছে ওই কাগজটিকে রেখে দেন। জাপানে একটা বাচ্চা জন্মগ্রহণ করার পরে সবথেকে ধূমধাম করে যে রীতিটিকে পালন করা হয় সেটি হল “ওমিয়ামাইরি।” এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাপানি বাবা মায়েরা সদ্যজাত শিশুটিকে নিয়ে নিজেদের বাড়ির কাছাকাছি কোন শিন্ত মন্দির পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় দেবতার কাছে পূজা নিবেদন করেন। ভগবানের কাছ থেকে নতুন শিশুটির সুস্থ বিকাশের জন্য আশীর্বাদ চেয়ে নেন। পুত্র ও কন্যা সন্তান অনুযায়ী বিশেষ দিনে কিংবা বিশেষ রঙের পোশাক পড়িয়ে শিশুটিকে কোলে করে “ওমিয়ামাইরি” প্রার্থনার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এই রীতিটি আগেকার মতন আজও খুবই ঘটা করে পালন করা হয়। এই রীতিটি মূলত শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার এক থেকে দুই মাসের মধ্যে পালন করা হয়। আগেকার দিনের মতন এখন আর কোন নির্দিষ্ট দিনে পালন করার নিয়ম নেই বললেই চলে। আমি যখন জাপানি মায়েদেরকে জিজ্ঞাসা করি কেন তারা আজও এই পুরাতন রীতিনীতিগুলিকে পালন করে চলেছেন? তখন তারা বলেন এই রীতিনীতিগুলি পূর্বপুরুষরা যুগের পর যুগ ধরে পালন করে এসেছেন কেবলমাত্র সদ্যজাত শিশুটির মঙ্গল কামনার জন্য তাই তারাও চান এই ঐতিহ্যবাহী সনাতন রীতিনীতিগুলিকে পালন করার মাধ্যমে নিজেদের সন্তানের মঙ্গল কামনা করতে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, বর্তমান প্রজন্মের বেশীরভাগ জাপানি গর্ভবতী মহিলা ও মায়েরা এটাও মনে করেন যে সময়ের সাথে সাথে পুরাতন রীতিনীতিতে বৈচিত্র দেখা দিলে কিংবা নিয়মের ক্ষেত্রে নতুনত্বের আবির্ভাব ঘটলে সেটাকে যেন কোনরকম দ্বিধা ছাড়াই প্রশস্ত মনে স্বাগতম করবার মনোভাব যেন তাদের সকলেরই থাকে। সন্তানের মঙ্গল কামনা  ছাড়াও ভবিষ্যতে যাতে তারা একটি সুন্দর বিশেষ মুহূর্তের স্মৃতিকে রোমন্থন করতে পারে তার জন্য বর্তমানকালের জাপানি গর্ভবতী মহিলারা প্রসুতিকালে “আনযানকিগান” কিংবা মায়েরা জন্মানোর পরে “ওমিয়ামাইরি” রীতিনীতিগুলিকে প্রচুর উৎসাহের সাথে পালন করে থাকেন।

- বিজ্ঞাপন -

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখকের ছেলেবেলা কেটেছে রবিঠাকুরের শান্তিনিকেতনে। সেই ছেলেবেলা থেকে শান্তিনিকেতনের সাথে লেখকের একটা নিবিড় সম্পর্ক। শান্তিনিকেতনের পাঠভবন ও উত্তরশিক্ষাসদন থেকে স্কুল জীবনের সমস্ত পড়াশোনা শেষ করে তিনি জাপানি ভাষা সাহিত্যে প্রথমে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের “নিপ্পন” ভবন থেকে স্নাতক হন এবং পরবর্তী কালে দিল্লীর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও এমফিলের ডিগ্রী গ্রহণ করেন। যা কিছু অজানা সেই গুলিকে জানতে আগ্রহী। সেইসাথে নানান দেশ বিদেশের সংস্কৃতি ও প্রথাকে জানতে ভীষণ আগ্রহী। লেখক জাপানি ভাষা, জাপানি রীতিনীতি ও জাপানি সংস্কৃতিকে খুব ভালবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন। বিশেষ করে জাপানের পুরাতন রীতিনীতি ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে রিসার্চ ও গবেষণা করতে খুব পছন্দ করেন। তিনি জাপানে ইন্টারন্যাশনাল পিএইচডি স্টুডেন্ট হিসেবে যখন পড়াশোনা করতেন তখন তিনি জাপানের বর্তমান প্রজন্মের গর্ভবতী মহিলারা ও মায়েরা শিশু জন্মানোর আগে ও পরে মূলত কখন কি ধরনের রীতিনীতি গুলোকে তাঁরা পালন করে থাকেন সেই বিষয়ে গবেষণা করেন এবং জাপানের ‘নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে পিএইচডি এর ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি ছোট গল্প লিখতে, বই পড়তে ভালবাসেন এবং নূতন নূতন জায়গাতে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবাদর্শে ভাবিত ও অনুপ্রাণিত। ধর্মের গোঁড়ামিকে কখনোই পছন্দ করেন না বরং তাঁর কাছে রবি ঠাকুরের মতনই মানবধর্ম হল শ্রেষ্ঠ ও মানবতা সবার ঊর্ধ্বে। শিল্প, সাহিত্য, নাটক, গান ও চিত্রকলা তাঁকে ভীষণ রকম আকর্ষণ করে। জাপানে থাকাকালীন সময়ে তিনি জাপানি ভাষাতে বহু গবেষণাপত্র প্রকাশনা করেন। নিজের অবসর সময়ে জাপান ও জাপানিদের সংস্কৃতির সম্বন্ধে নিজের মাতৃভাষা বাংলায় লিখতে এবং সেগুলিকে বাঙালি পাঠকদের কাছে সহজ সরল ভাবে তুলে ধরার কাজটি করে যাচ্ছেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!