ঈশ্বরচন্দ্র তখন সংস্কৃত কলেজের ছাত্র, কৈশোর পার হননি। তাঁর বিয়ে হল শ্রী শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্যের বালিকা কন্যা দীনময়ী-র সঙ্গে। ছাতনাতলায় মালাবদলের পর বাসর ঘরে ঢুকে বরকে নিজের কনে-কে খুঁজে নিতে হত। অপরিচিতা সদ্য একবার দেখা বালিকাটিকে নতুন বরের পক্ষে একদল বালিকার মধ্যে থেকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব ছিল না। এটি তৎকালীন একটি স্ত্রী-আচার যা বরকে ঠকানোর কাজে লাগানো হত। সদ্য সম্পর্কের আত্মীয়রা বর-কে ধাঁধায় ফেলে মজা উপভোগ করত। ঈশ্বর সে-সুযোগ দি্লেন না। তিনি টুকটুকে ফর্সা একটি মেয়ের হাত ধরে বললেন, ” এই আমার কনে।” অমনি গণ্ডগোল শুরু হল, সব মেয়েরা ভয়ে পালাতে লাগল। ঈশ্বরচন্দ্র যার হাত ধরেছিলেন সে তো ভয়ে চিৎকার শুরু করে দিল। একজন বয়স্কা মহিলা এসে বললেন, ‘এই মেয়ে তোমার কনে নয়।’ ঈশ্বরচন্দ্র বলে উঠলেন, “যা-কে খুঁজে পেয়েছি তাকেই আমার সঙ্গে ঘর করতে হবে!” সেই মেয়েটি তখন ঈশ্বরের হাতে-পায়ে ধরে আসল কনে-কে খুঁজে দেবার প্রতিশ্রুতি দিল। তারপর ছাড়া পেয়েই দীনময়ী-কে খুঁজে এনে দিল। পরিহাসের বদলে পরিহাস দিয়েই সেই কিশোর বয়সেই সমস্যা সমাধানের পথ নিজেই খুঁজে নিয়েছিলেন কৌতুকপ্রিয় বিদ্যাসাগর।
এবার আসি দ্বিতীয় ঘটনায় —
একজন সাবজজ- এর সঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দেখা হল অনেকদিন পর। কথায় কথায় তিনি জানতে পারলেন ওই সাবজজ- এর স্ত্রী মারা যাওয়ার কারণে বুড়োবয়সে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন। বিদ্যাসাগর তাঁকে বলে উঠলেন, “তবে তো তোমার স্বর্গের দোর একেবারেই খোলা হে!” সাবজজ সাহেব বিদ্যাসাগরকে কৌতূহলভরে জিজ্ঞেস করলেন- “সে কী রকম মশায়?” বিদ্যাসাগর বুঝিয়ে বললেন যে স্বর্গের দরজায় মরণের পর লোকের ভিড় বাড়তে থাকে। গেটের দরোয়ান পূণ্য অর্জনকারীদের স্বর্গে ঢুকতে দেয় আর পাপীদের নরকে পাঠায়। একবার একজন দরোয়ানের প্রশ্নের উত্তর ঠিকমতো দিতে না পারায় দরোয়ান তার পাপপূণ্যের পরিমাপ করতে পারছিল না। ঠিক সেই সময় স্বর্গের দরোয়ান তাঁকে প্রশ্ন করে জানতে পারল তিনি বুড়োবয়সে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলেন। দরোয়ান বলে উঠল- তুমি এখনই স্বর্গে ঢুকতে পারো। পৃথিবীতেই তোমার নরকভোগ হয়ে গেছে।”
এমনই কৌতুকপ্রিয় ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
তথ্যসূত্র:
১) বিদ্যাসাগরের জীবনীকার চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা অবলম্বনে।
২) বিহারীলাল সরকারের বিদ্যাসাগর গ্রন্থ।