সেই লোকটি
দুপুরে অচেনা একজন ফোন করে বলল, আমি ব্যাঙ্ক থেকে বলছি, আপনার নাম কি মালতী?
–হ্যাঁ, আপনি কে বলছেন?
–আমার নাম বীরেন দত্ত, আপনার কি ফিক্সড ডিপোজিট আছে?
–হ্যাঁ আছে। বেশ ভাল টাকা,লাখ পাঁচেক হবে।
–তাহলে তাড়াতাড়ি প্যান, আধার কার্ডের নম্বর বলুন।
— একটু সময় দিন, বার করে বলছি।
–না, না বেশি সময় দেওয়া যাবে না, সব লক হয়ে যাবে।
— আপনার বাড়ির ঠিকানাটা বলুন। আমি গিয়ে বলব। তাছাড়া আপনাকেই তো খুঁজছি। আমি লালবাজার থেকে তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাব।
হ্যালো,হ্যালো…..
শব্দ করে লাইনটা কেটে গেল।
এক ভদ্র মহিলা
বার বছরের মেয়েকে বাবা নিজে আর সৎ মায়ের যোগসাজসে দুর্গাপুরের স্টেশনে সকালে ছেড়ে দিল।হাতে দুটি কুড়ি টাকা।
তিন মাস আগে শ্যামলীর মা মারা গেছে।শ্যামলী শুনেছে দাদুর বাড়ি কলকাতায় যোধপুরে। একটা বাজার আছে ঠিক তার উল্টোদিকে, পাশে গমকল। আর একটু আগে পোস্টঅফিস। একটা কাগজে ঠিকানা লিখে দিয়েছে। হাওড়া স্টেশন থেকে বাসে যেতে হবে।
শ্রাবণ মাস। অঝোরে বৃষ্টি এসে কান্না মুছিয়ে দিচ্ছে। ট্রেনের তলায় শুয়ে পড়লে তো সব চুকে যায়। মা যে কেন মারা গেল!
–এই মেয়ে কী হয়েছে? বছর পঞ্চাশের এক ভদ্র মহিলা কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করল। সব শুনে তিনি নিজের বাড়ি নিয়ে এল অনেক বুঝিয়ে। পরের দিন স্বামীকে দিয়ে দাদুর বাড়ি।
শ্যামলী আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। বিরাট বাগানঘেরা বাড়ি। ছেলে মেয়ে, স্বামী নিয়ে সুখের সংসার। কত ঝড় জীবনে গেছে। দাদু দিদা তো কবেই চলে গেছে। হিসেব করে দেখল চল্লিশ বছরের বেশি।
এরকমই সেই বৃষ্টির দিন। শ্রাবণ মাস। রথের দিন চলে গেছে। মনে পড়ে মায়ের মত সেই মেয়ে মানুষটির কথা। কতবার ইচ্ছে হয়েছে একবার নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে প্রাণ ভরে খাওয়ায়।
কারো ঠিকানা, মোবাইল নম্বর তো নেওয়া হয়নি।
মেহগনি
শিখরপুরের নার্সারির মালিক কমল বলেছিল বিবেক’কে ‘একটি মেহগনি নিন, মেয়ের বিয়ে দিন।’ বলেই এক গাল হেসে একটি মেহগনি, পেয়ারা আর আম্রপালী গাছ দিয়েছিল।
বাড়ির পিছনে অনেক জায়গা। সেখানে যত্ন করে লাগিয়েছিল। পেয়ারা গাছটি আর নেই। আম্রপালী আমের সুন্দর গন্ধ।
আঠেরো বছর পরে সেই মেহগনি বিশাল ডালপালা মেলে চারতলা ছাড়িয়ে। শীতকাল এলে সব পাতা ঝরে যায় ।বসন্তে নতুন পাতায় ভরে যায়।
বিবেকের বড় মেয়ে মা-মনির লাঙসের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে। ঘরে সিলিন্ডার, ছোট-বড় অক্সিজেন মেশিন। নাকে নল চব্বিশ ঘণ্টা। ডাক্তার বলেছে এই বিরল রোগের কোনও ওষুধ নেই। সাপোর্ট সিস্টেমে যতদিন চলে।
মেহগনি গাছের কাছে জানলা। সেখানেই বিছানা। বসে থাকে সারাদিন। ঘুমোতে চায় না, ভয়ে। ওই অবস্থায় কথা বলে, খায়। রাতে চার ঘন্টা ঘুমোয়।
মা-মণি মারা যাবার আগে বলেছে, আর যাই করো, জীবনে মেহগনিকে কেটো না। ও না থাকলে কবেই আমাকে চলে যেতে হত।
উপকারের খেসারত
নয়ন সপ্তাহে একদিন প্রভাতের কাছে সন্ধ্যায় যায় আড্ডা মারতে। কবিতা,গান আর রসের গল্প সাথে মদ আর মাংস টাংস। প্রভাত কাছে দুনিয়ার গল্পের বাজার।
একদিন আসর শেষ করে রাত দশটায় আসবে, তখন প্রভাত বলল, ‘তুমি তোমার গাড়ি নিয়ে মল্লিকাকে একটু এগিয়ে দিয়ো। না বলা যায় না।
একে মহিলা, দেখতে সুন্দরী, একসাথে ছিল গল্পে, মদ্যে মশগুল। সেদিনই আলাপ। নয়ন নামিয়ে দিল সুবিধা মত জায়গায়।
পরের দিন নয়নের বৌ চিৎকার করে নয়নকে’, কাল কোন মেয়ের সঙ্গে কোথায় গিয়েছিলে? এইসব নোংরামি করে বেড়াচ্ছ?
— কী যাতা বলছ সকাল বেলায়?
— গাড়ি ড্রাইভার ধুতে গিয়ে আমায় বলল, বৌদি সিটে অনেক রক্ত লেগে আছে। এবার কি বলবে, তোমার পিরিয়ডস হয়েছে?
প্রথম প্রেম
সুবীর এখন অনুরাধাকে নিয়ে খুব খুশি। সামনের মাসে বিয়ে। এখন দুজনের একটাই আলোচনা, কি করে ভালভাবে অনুষ্ঠান শেষ করা যায়।
তিন বছর ধরে প্রেম। প্রত্যেকদিন দেখা হয়। সুবীর অফিস শেষে গঙ্গার ধারে,মলে,রেস্টুরেন্টে ঘন্টা দুয়েক কাটিয়ে গাড়ি করে পৌঁছে দেয়।
অনুরাধা একটি স্কুলে পড়ায়। দুই বোন। সুবীর বড়লোকের একমাত্র ছেলে।
অনুরাধার আগে এক প্রেমিক ছিল। স্কুল জীবন থেকেই সম্পর্ক। দিপেশ পাগলের মতো ভালোবেসেছিল অনুরাধাকে। কয়েকবার তারা সহবাস করেছে দিপেশের বাড়িতে। তারপর দিপেশ চাকরি পেয়ে আমেরিকায় চলে যায়। সেখান থেকে জানিয়েছে,সে বিয়ে করেছে।
এসব সুবীর প্রায় সব জানে। সুবীর বিশ্বাস করে অনুরাধা যখন আবার প্রেমে পড়েছে সেটাই আসল। কারণ প্রেমের কখনো দ্বিতীয়, তৃতীয় হয় না। যা হয় সেটা সব সময় প্রথম হয়।
বিয়ে,বৌভাত হল বেশ জাঁক জমক করে।অতিথিরা চলে গেছে। ফুলশয্যার রাত।ফুলের গন্ধে মন মেতেছে দুজনের। কে কাকে কতক্ষনে জড়িয়ে ধরবে। না পাওয়া এই শরীর আজ শুধু দুজনের। রাত বেড়েছে।দুজনের গায়ে এক সময় কিছু নেই। হাল্কা আলো জ্বলছে। ভেসে যাচ্ছে ওরা। চূড়ান্ত সময়ে অনুরাধা অস্ফুটে বলছে, আরো জোরে ….আরো ….দিপেশ…
ভোর হয়ে এল। সুবীর বুঝল, অনুরাধা সুবীরের মধ্যে প্রথম প্রেমিক দিপেশকেই চাইছে।
শিশ্ন কথা
বলকার সঙ্গে অমলের ডিভোর্স হয়ে গেল শান্তিপুর্ণ ভাবে। দুই বাড়ির লোক অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারল না একবছর যেতে না যেতেই এই অঘটন কেন হল!
তারপর সাত বছর কেটেছে। বলাকা তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে দীঘা এসেছে। স্বামী অফিসের কাজে দিল্লী গেছে সাত দিনের জন্য।
বিকেলে সমুদ্রের হওয়ায় বলাকা ছেলেকে নিয়ে বসে আছে। হটাত দেখল অমল একা হেঁটে আসছে উদাস ভাবে।
আরে তুমি এখানে? বলাকা জিজ্ঞেস করে। অমল হাসি মুখে, এই একটু এলাম। এই তোমার ছেলে তো?
— হ্যাঁ, ভালই হল, আপত্তি না থাকলে আমার হোটেলে চলো, রাতটা ভালই কাটবে, বলেই বাঁকা চোখে হাসল।
—-তুমি সেই আগের মতই আছো।
—আপত্তি আছে না কি?
— লাভ নেই, কোন আনন্দ পাবে না।
— এখনও ডাক্তার দেখাও নি? এসব তো আজকাল কিছুই নয়!
—তাই যদি হতো,তুমিও তো বলতে পারতে,তাহলে কি আর আমরা আলাদা হতাম?
বলাকা দেখল, অমল হাওয়ার আকাশে মিলিয়ে গেল।