ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাঙালি তথা সমগ্র ভারতবাসীর কাছে অন্যতম প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। আজ ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন। আমি এই পূণ্যলগ্নে শুধু তাঁর কৌতূকপ্রিয় মনের কথাই উল্লেখ করছি।
বিদ্যাসাগরের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন এক ব্রাহ্মণ, কিছু সাহায্য চাই তাঁর। তিনি বিদ্যাসাগরকে বলেই ফেললেন, “মশায়, বড়ো দূরবস্থা!” বিদ্যাসাগর বললেন, “আ -কার বদলে এসো!”
ব্রাহ্মণ আসল কথা বুঝতে না-পেরে পরদিন পোশাক বদলে এসে সেই একই কথা বললেন আর বিদ্যাসাগরও একইভাবে আ-কার বদলে আসার কথা বললেন। সেই ব্রাহ্মণ প্রতিবারই পোশাক বদলান অথচ কাজের কাজ আর হয় না। শেষপর্যন্ত ব্রাহ্মণ গেলেন রামসর্বস্ব পণ্ডিতের কাছে, জানালেন তাঁর সমস্যার কথা। তিনি ব্রাহ্মণকে বুঝিয়ে দিলেন যে আ-কার বদলে আসা মানে দূরাবস্থা না-বলে ‘দূরবস্থা’ বলতে হবে। পরদিন যখন ব্রাহ্মণ এসে বিদ্যাসাগরকে বললেন, “মশায় আমার বড়ো দূরবস্থা”, বিদ্যাসাগর অমনি বললেন, “তুমি আ-কার বদলেছ, এবার তোমার কথা শুনব।”
এইবার আসি দ্বিতীয় ঘটনায়–
বিধবাবিবাহ প্রবর্তনের পর একদল তাঁর বিপক্ষে যা — রাস্তায় বের হলেই তাঁকে গালাগাল দেয়, ঠাট্টা-তামাশা করে আবার প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখায় অথচ বিদ্যাসাগর কোনো কিছুতেই বিচলিত হন নি। একবার একজন ধনী ও বেশ নামী ব্যক্তি বিদ্যাসাগরকে রাস্তায় মারধোর করার জন্য গুণ্ডা প্রকৃতির লোক লাগাল।বিদ্যাসাগর সেকথা জানতে পেরে সটান তার বাড়িতে হাজির হলেন। সে-সময় গুণ্ডাদের হাতে বিদ্যাসাগরের কী হাল হয় সেই নিয়েই আলোচনা চলছিল। বিদ্যাসাগরকে নিজের বাড়িতে হাজির হতে দেখে তিনি প্রশ্ন করলেন, ” এখানে কেন?” বিদ্যাসাগর অম্লানবদনে বলে দিলেন– “শুনলাম আমাকে মারার জন্য আপনার ভাড়াটে গুণ্ডাদের আহার-নিদ্রা ত্যাগ করে খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে। তাই ওদের কষ্ট লাঘব করার জন্য নিজেই চলে এলাম।”
কৌতূকপ্রিয়তার সঙ্গে সাহস ও চারিত্রিক দৃঢ়তাও বিদ্যাসাগর চরিত্রের অন্যতম দিক।
তথ্যসূত্র :
১) মনমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের — ‘শ্রুতি – স্মৃতি’ গ্রন্থ।
২) বিহারীলাল সরকারের ‘বিদ্যাসাগর’ গ্রন্থ।