অর্ধবঙ্গেশ্বরী মহারাণী ভবানী

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
3 মিনিটে পড়ুন
স্কেচ : শিবনাথ গোস্বামী পুঠিয়া, রাজশাহী।

কথিত আছে অনুমানিক প্রায় তিনশত পাঁচ বছর আগে নাটোরের রাজা রাম জীবন‘এর দত্তকপুত্র রামকান্ত একদিন নৌবিহারে যায়।বিলের ধারে জবা গাছ থেকে একটি মেয়ে জবা ফুল সংগ্রহ করছিল।

মেয়েটির উচ্চতা থেকে ফুলগুলো ছিল অনেক দূরে। কিন্তু রামকান্ত দেখলেন ফুলের ডাল স্বইচ্ছায় নিচে নেমে এসেছে। মেয়েটি খুব সহজেই ফুলগুলো ছিঁড়ছে। এমন দৃশ্য দেখে রামকান্তের মনে মেয়েটি সম্পের্কে জানার জন্য কৌতুহল জাগে।

পেয়াদাকে মেয়েটির ঠিকুজি বের করার নির্দেশ দেন রামকান্ত। পেয়াদার মাধ্যমে জানতে পারলেন, মেয়েটির নাম ভবানী, পিতা আত্মারাম চৌধুরী এবং মাতা জয়দুর্গা।বর্তমান বগুড়া জেলার তৎকালীন আদমদিঘী থানাধীন ছাতিয়ান নামক গ্রামে ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন ভবানী।

ইতিহাস বলছে, অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে ভবানীর সাথে রাজা রাম জীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের বিয়ে হয়। ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পরে নবাব আলীবর্দী খাঁ রাণী ভবানীর ওপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন।

- বিজ্ঞাপন -

তখনকার দিনে একজন রাজা বা জমিদার হিসেবে মহিলা দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয় একটি বিরল ঘটনা ছিল। কিন্তু রাণী ভবাণী বিশাল জমিদারী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নির্বাহ করেন। দান, ধ্যান, শিক্ষা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চিকিৎসা ও ধর্মীয় কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁর প্রজারা তাঁকে ‘মহারাণী’নামে আখ্যায়িত করেন।

মহারাণী ভবানী জীবিত থাকতেই তাঁর দুই ছেলে মারা যায়।জীবিত ছিলো একমাত্র মেয়ে তারাসুন্দরী। পরবর্তীতে তিনি রামকৃষ্ণকে দত্তক নেন। রামকৃষ্ণ তাঁর দুই সন্তান বিশ্বনাথ বড় তরফ এবং শিবনাথ ছোট তরফ হিসেবে ভূ-সম্পত্তি বন্টন করে দেন। দুই তরফের প্রাসাদ কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

মহারাণী ভবানীর রাজত্বকালে জমিদারী বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর , রংপুর এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম , মালদা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।একজন ইংরেজ লেখক হলওয়েল ধারণা দেন যে জমিদারী এস্টেটের বার্ষিক খাজনা ছিল প্রায় ৭ লক্ষ রুপী এবং বার্ষিক অর্জিত রাজস্ব ছিল প্রায় ১৫ লক্ষ রুপী।

এজন্য তিনি অর্ধবঙ্গেশ্বরী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।প্রজা সাধারণের কল্যাণের জন্য মহারাণী ভবানী সুদীর্ঘ ৫০ বছর দক্ষতার সাথে বিশাল এই জমিদারী পরিচালনা করেন।রাণী ভবানীর অতি সাধারণ ব্যক্তিগত জীবনযাপন, উদারতা এবং সমাজহিতৈষী মনোভাব তাঁকে সাধারণ জনগনের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলে।

তিনি বাংলায় শত শত মন্দির, অতিথিশালা এবং রাস্তা নির্মাণ করেন ।এছাড়াও প্রজাদের পানীয় জলের কষ্ট দূর করার জন্য অনেকগুলি পুকুরও খনন করেন। শিক্ষা বিস্তারে তৎকালীন সময়ে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

- বিজ্ঞাপন -

বগুড়া জেলার শেরপুরে অবস্থিত পীঠস্থান ভবানীপুরের মন্দিরসমূহের উন্নয়নে রাণী ভবাণী অনেক অবদান রেখেছেন। ১৭৫৩ সালে কাশী অর্থাৎ বেনারসে ভবানীশ্বর শিব ও দুর্গাবাড়ী, দুর্গাকুণ্ড, কুরুক্ষেত্রতলা নামক জলাশয় স্থাপন করেন।

তিনি তারাপীঠ মন্দির সংস্কার, হাওড়া থেকে কাশী পর্যন্ত রাস্তা নির্মান করেছিলেন যা রানী ভবানী রোড বা বেনারস রোড নামে খ্যাত। বর্তমানে এটি বোম্বে রোডের অংশ।শুধু তাই নয়। উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বাতায়নে তার ভূমিকা লক্ষনীয় ছিল।অর্ধবঙ্গেশ্বরী মহারাণী ভবানী ১৮০২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ৭৯ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!