জলের দিকে চোখ। উদাস দৃষ্টি যুবতীর। বিষণ্ণতার ছোঁয়া-জড়ানো মুখ। কুয়াশা মাখা সকালে অস্পষ্ট অবয়ব। দু’পা মুড়ে নিস্পন্দ বসে এক অপরূপা।
চোখ পড়তেই রতন সম্মোহিত। রাস্তার ধারে সাইকেলটা স্ট্যান্ড করে দাঁড়িয়ে পড়ল। নির্জন পরিবেশ। বিদায়ী শীতের সকালে লোক চলাচল কম। দ্রুত ব্যাগ থেকে স্কেচ খাতা বের করে পেনসিলের আঁচর টানল রতন। কয়েকটা রেখায় ফুটে উঠল অবাস্তবের ছোঁয়া মাখা শিল্প সুষমায় বাঙময় এক মূর্তি। ঊর্ধ্বাঙ্গে নারী, কোমর থেকে নিচের অংশে মাছ। চাহনিটা ঠিকঠাক না-এলেও উদ্ভিন্ন যৌবনার সুদূরে নিবদ্ধ দৃষ্টি। যেন নিঃসঙ্গ এক মৎস কন্যা। সমুদ্রের পটভূমিতে বিদেশি গল্পের ছবি, এক বিষণ্ণ মারমেইড।
সমুদ্রের নীল রং ফুটবে পরে। দীর্ঘ সময় ধরে ক্যানভাসে চলবে ব্রাশিং। রং ডুবিয়ে তুলির টানে প্রাণ পাবে মৎস কন্যার লাল ঠোঁট। সূর্যের হাল্কা ছটা লাগবে মুখে। আজ আলো আঁধারির সুষমা মাখা এই ছবিটাই আঁকবে।
ছবি আঁকাটা রতনের সহজাত। অল্প চেষ্টায় নিখুঁত টানটান ব্রাশিং। প্রাণ ফোটায় মানুষ জীবজন্তু গাছ পাখির শরীরে। কিন্তু অনেকদিন ভালো ছবি আঁকতে পারেনি। নোতুন ভাবনা খেলছিল না মাথায়। আইডিয়া গুলো কখন যে জলের গভীর থেকে মাথায় ঘাই মারে, রতন বুঝতে পারে না।
ক’দিন আগে পাড়াতেই পলাশদের বাড়ির প্রাচিরে স্থির বসে থাকা বাচ্চা বাঁদরের ছবি আঁকল। বাঁদরের ঘাড়ের উপর নিজের আমচুর মার্কা মুখের আদলটা সেট করল। মনে মনে তারিফ করল নিজের সৃষ্টির। কিন্তু ছবিটার দিকে তাকিয়ে কলেজের বন্ধুরা, এমন কি শেলিও প্যাঁক দিল। সবাই কি আর পিকাসো রে! বেবুনের ঘাড়ে নিজের মুণ্ডু বসিয়ে তাক লাগাবে!
আজকের আইডিয়াটা ফুটাতে পারলে তাক লাগানো ছবি হবে। মৎস কন্যার উদাসী আবছা অবয়ব। অবশ্য চাহনিটা ঠিকঠাক না-এলে আঁকাটাই মূল্যহীন হয়ে যাবে, ভাবছিল রতন।
আউটডোর ক্লাশে যত্ন করে আঁকবার এটাই হবে থিম। আরেকটা বিষয়, এ মুহূর্তে হাতে সময় নেই একদম। সাতটা বত্রিশের ট্রেনটা ধরতে হবে। নইলে বটব্যাল স্যারের হিস্ট্রি অফ আর্টের থিওরি ক্লাশটা মিস হয়ে যাবে।
ভাবনাটা মাথায় খোঁচা মারতেই চঞ্চল হয়ে উঠল রতন। ততক্ষণে কুয়াশা ফিকে হয়েছে অনেকটা। রাস্তায় লোক চলছে। তার মধ্যেও মানুষজনের নজর এড়িয়ে মৎসকন্যার বঙ্কিম গ্রীবার দিকে আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল রতন। একবার ইচ্ছে করল, দারোয়ানকে ডেকে গেট খুলিয়ে ভিতরে ঢুকবে। কিন্তু একটু দূরেই মোচওয়ালা দারোয়ান। হাতে একনলা বন্দুক। মুখে নিষ্ঠুর ভাব। একবার তাকাতেই বুকটা ঢিব ঢিব করে উঠল।
সাইকেলের প্যাডেল দাবিয়ে স্টেশন মুখো ছুটল রতন। ছুটছে কিন্তু ঘোর কাটছে না প্যাডেলে পা দিয়েও বারবার ঘাড় ঘোরাচ্ছে রায় ভিলার পুকুর পাড়ে। বাড়ি থেকে রায় ভিলা হয়ে স্টেশন কিছুটা ঘুর পথ। ইদানিং ওদিকের রাস্তাটায় পিচ পড়েছে, শুনেছিল রতন। আজ মসৃণ পথে চলবে বলে ঘুর পথেই এল। কিন্তু উঁচু পিচ রাস্তার ধারে রায় ভিলায় গেটের ওপারে মৎস কন্যা বসে থাকবে, কে জানতো!
মেয়েটা কে, একবার ভাবল রতন। জমিদার বাড়ির ছেলে মেয়েরা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছে। তাদের খবর দু’তিন গাঁয়ের কেউ-ই রাখে না। বড় তরফের জমিদারের নাতি মহিতোষের একটা ফুটবল দল ছিল। ওদের বিরুদ্ধে গ্রামের বাঘাযতিন ক্লাবের হয়ে একবার নক আউট খেলেছে রতন। তখন ক্লাস এইট। বুট পড়ে খেলতে শিখেছে। ভালোই খেলছিল কিন্তু গোলের কাছে তৈরি বলটা বুক দিয়ে রিসিভ করে বাঁ–পায়ে শট নিতে যাবে, তখনই গণ্ডগোল। ডান হাঁটু কেঁপে গেল। শট খাওয়া বল গোল পোস্টের মাথা ছাড়িয়ে বুলেটের মত বেরিয়ে গেল। বাঘাযতিন ক্লাব এক গোলে হেরে যেতে গাঁয়ের ছেলেরা গাল দিয়ে ওকে শুইয়ে দিল। আর বড়রা বলল, ‘অপদার্থ ছেলে। এক্কেরে ভীতুর ডিম।’
এসব গল্প অনেক দিন আগের। আজ হঠাৎ মনে পড়ছে কেন? মহিতোষদা কোথায় কে জানে! প্রাচীরের ওপাড়ে মেয়েটা কে? ওর কথা জানতে ভিতরটায় কেন যে এত উথাল পাথাল!
ঘোর লাগা রতনের মাথায় কেবলি ঘুরে ফিরে আসছে যুবতীর আবছা মুখ। ভিড়ের ট্রেনে উঠেও মেয়েটির ছবি চোখের তারায় নাচছিল। হঠাৎ গা গুলিয়ে উঠল রতনের। পাশের লোকটির দুই লম্বা হাতে, বাহুমূল থেকে কব্জি অবধি, কালো সবুজ ছোপ ছোপ ট্যাটু। দু’টো অজগর সাপ যেন ঝুলছে গলা থেকে। ওদিকে ভয়ার্ত চোখে এক ঝলক তাকিয়ে কামরার ভিড় ঠেলে উল্টো দিকে মুখ ঘোরাল রতন। হৃদয়পুর স্টেশনে কামরার ভিড় অনেকটা হাল্কা হয়ে গেল। অজগর সাপ-লোকটা থেকে অনেক দূরে বসবার সিট খুঁজে নিয়ে কামরার জানলা দিয়ে বাইরে চোখ রাখল রতন।
ফাল্গুনের সকাল, মনোরম হাওয়া। কিন্তু মাথায় কেবলই উড়ে উড়ে আসছে বিরস বদনা মৎসকন্যা। বসে থাকবার গ্ল্যামারাস ভঙ্গি, কিন্তু চাহনিটা না-দেখা।
বটব্যাল স্যারের ক্লাশেও ঘোর কাটছিল না। গুহা চিত্রের ইতিহাস নিয়ে স্যারের লেকচারটা একঘেঁয়ে লাগছিল। পরের দু’টো ক্লাশ পেন্টিং এবং আউট ডোর। স্টেশন, বাজার গাছতলা, ভিখারি, সাধু, চোখের সামনে যা’হক কিছু দেখে ছবি আঁকতে হবে। অ্যাকাডেমি ছাড়িয়ে কিছুটা হেঁটে গাঁজা পার্কে ছবি আঁকতে এল রতন। ফুল ভর্তি রঙ্গন গাছের নিচে একটা বেঞ্চে বসে রং, তুলি, ইজেল বের করল। একটু পরে ইজেলের সামনে দাঁড়িয়ে শুরু করল তুলির আঁচড়।
যে ছবিটা ঘুরে ফিরে মাথায় খেলছে, তাতেই একাগ্র রতন। মনের মধ্যে এক অপরূপা উদাসীন যুবতীর আবছা মূর্তি। শরীরের ঊর্ধ্বাংশ নারী। পিঠ আর পায়ে মাছের পাখনা। হাওয়ায় উড়ছে মাথার ঘন চুল। চকচক করছে পিঠ। কোমর থেকে নিতম্ব, পা। কিন্তু আলো আঁধারিতে অস্পষ্ট চোখ, নাক, ঘাড়।
ছবিটা যে বটব্যাল স্যার পছন্দ করবেন, ভাবতে পারেনি রতন। ক্লাশে ঘর ভর্তি ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘অসাধারন! জাদু বাস্তবতা। যুবতীর অস্পষ্ট মুখ, সুদূরে নিবদ্ধ দৃষ্টি, বড়ই বাস্তব। কিন্তু পিঠে পায়ে পাখনা! অবাস্তব, ম্যাজিক, জাদু। শিল্পী কী বলছেন? অন্য জগৎ থেকে উঠে আসা এক নারীর গল্প। ভিন্নতর হাওয়ার সন্ধানে তার আগমন।’
একটু থেমে আবার বললেন, ‘ছবি মানে তো শুধু ড্রয়িং নয়, মনের কথা বলা। কবি সাহিত্যিক হাজার কথা দিয়ে ছবি আঁকেন, আমরা এক ছবিতেই লক্ষ কথা ফুটিয়ে তুলতে পারি।’
মডেলিং ক্লাশের আগে সহপাঠীদের অনেকে, বিভাস অতনু শেলি ওর পিঠ চাপড়ে বলল, ‘লা জবাব রে ছবিটার! তোর ট্যালেন্ট আছে।’
একটু পরে রমেশ স্যার ঢুকলেন ক্লাশে। মডেল মাসি ঢুকবার আগে ছবিটা দেখলেন অধ্যাপক। ঘন দাড়ি একটু চুলকে নিয়ে বললেন, ‘ছবিটা ভালই, তবে ত্রুটি আছে। চাহনি অস্পষ্ট। আর বাস্তবতার বড় অভাব।’
মডেলের দিকে টানা তাকিয়ে এবার বাস্তব ছবি আঁকতে হবে। টুলের উপর মধ্য বয়স্কা মহিলার স্থির শরীর। পলক পড়ে না চোখে। হাত দু’টো কোলের উপর লম্বা লম্বি ছড়ানো। হাতের শিরা দেখা যাচ্ছে।
মাথার শিরা দপদপ করে উঠল রতনের। সারাদিন ছবি আঁকা আর লেকচার শুনে যাওয়া। আঁকা শেষ করে বেড়িয়ে যাবারও উপায় নেই। রমেশ স্যার ক্লাশে ঠাই বসে থাকেন। ঘরের কোনায় ইজেলের সামনে দাঁড়িয়ে মডেলের দিকে চোখ রেখে ছবি আঁকেন। ক্লাশ দু’ঘন্টা চলবে না তিন ঘণ্টা, কেউ জানে না। ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে মডেল চলে যাবার পর ছাত্রদের আঁকা গুলো দেখতে থাকেন রমেশ স্যার। শেলির আঁকা দেখে বললেন, ‘সঠিক ছবি। শরীরের প্রত্যেকটা ভাঁজ নিখুত।’ রতনের ছবিটায় চোখ রেখে বললেন, ‘ডিসেন্ট কিন্তু বোল্ডনেসের অভাব। সাহস করে পৃথুলা রমণীর নাভিমূল কিম্বা পেটের খাঁজে তাকাতে পারেনি শিল্পী। সাহস না-থাকলে কি শিল্পী হওয়া যায়?’
স্যারের কথায় মাথা নাড়ল রতন। মনে মনে কথা বলল, ঠিকই তো। আমি একটু ভীতু আছি। নিরীহ টাইপের। ছোটবেলায় খেলার মাঠে বন্ধুদের মার খেয়ে বাড়িতে বসে কাঁদতাম। দু’বছরের বড় দাদা বলত, ‘ভীতুর ডিম কোথাকার! তোর দ্বারা কিসসু হবে না।’
বড় হবার পরও একই হাল। পাড়ায় কলেজে নাম জুতে গেল, নিরীহ রতন। বাড়িতেও তেমন ভাবে নিজের অধিকার ফলায় না। কলেজের মাইনে আর ট্রেন ভাড়ার অতিরিক্ত কিছু বাবার কাছে চাইতে সঙ্কোচ হয়। বাবা মুদির দোকানদার, তেমন তো আয় হয় না। মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে মা বলেন, ‘আরে বোকা, না-চাইলে কিছু পাওয়া যায়? নিজের কথা জোর গলায় একটু বল।’
নিজেকে জাহির করতে পারেনা রতন। কলেজের ক্যান্টিন আড্ডার টেবিল, কোথাও না। গতকাল ক্যান্টিনে কাঁধের ব্যাগটা পাশে নামিয়ে শেলি ওর গা ঘেঁষে কানের ঝুমকোলতা দুলিয়ে বলল, ‘সাফ সাফ বলতো, তুই কাউকে ভালোবাসিস?’
‘আমি শেলি নামের এক সাহসী মেয়েকে ভালোবাসি’ কথাটা বলতে গিয়েও রতনের জিভে আটকে গেল। নিঃশব্দে দু’পাশে মাথা নাড়াল রতন। শেলি ওর পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল, ‘তুই একটা হাঁদা গঙ্গারাম।’
এই কথাটাই স্যারের মার্জিত ভাষায়, ‘সাহসের অভাব’। স্যারের বাকি কথা গুলোও কানে বাজল কিছুক্ষণ। ‘আদত কথা সাহস ভিতরে আছে, ওটাকে এমব্রেস করো। ঠিক ঠাক জাপটে ধর।’
সম্মতিতে ঘাড় নেড়ে ক্লাশের পর বেড়িয়ে এল রতন। ধর্মতলা থেকে কলেজ স্ট্রীট গিয়ে বোনের একটা বই কিনবে। ওখান থেকে বাসে শিয়ালদা। তারপর সাতটা পঁচিশের বনগাঁ লোকাল। বাড়ি ফিরতে রাত্রি দশটা।
তখন পড়ন্ত বিকেল। উঁচু বাড়ি আর ফুটপাথের দোকানের নিচ দিয়ে গুটি গুটি এগিয়ে আসছে খণ্ড খণ্ড ছায়া। ঢাকা পড়ে যাচ্ছে ধর্মতলা মোড়। ব্যস্ত মোড়ের মাথায় ভিড় জমছে। পরক্ষণে একটা বাস এলেই ভিড় খালি। ভিড়ের পথে সর্বাঙ্গে ক্ষত নিয়ে গাঁক গাঁক আর্তনাদে বাস ছুটছে। মানুষ উঠছে নামছে। ট্রাম চলছে কম। অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে বহু মানুষ।
পশ্চিম মুখো দাঁড়িয়ে রতন। ট্রামের নম্বরের খোঁজে চোখ ব্যস্ত কিন্তু মাথায় ঘুরছে মৎস কন্যার ঝাপসা মুখ। অস্পষ্টতা ওই ছবির একটা বড় ত্রুটি, রতন ভাবছিল। হঠাৎই এক অদ্ভুত সমাপতন। কাকতালীয় ব্যাপার!
কয়েক হাত দূরে একা এক যুবতী। মহিলা পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে। মাথার চুলে কায়দা করা বব ছাঁট। নীল জিন্সের উপর পিঠ খোলা কালো টপ। আর খোলা পিঠেই আটকে গেল রতনের চোখ। সেখানেই সমাপতন। পিঠের ক্যানভাসে আঁকা অপূর্ব এক মৎসকন্যা। লাল ঠোঁট। উজ্জ্বল মুখে সূর্যের হাল্কা গোলাপি আভা। রঙিন মৎসকন্যা বঙ্কিম লম্বা গ্রীবা ঈষৎ ঝুঁকিয়ে উদাস দৃষ্টি মেলেছে সামনের আকাশে।
মেয়েটিরও লম্বা গ্রীবা। মুখ দেখা যাচ্ছে না। পিঠে ছায়া পড়েছে। ট্যাটু শিল্পীর আঁকা মৎস কন্যার মুখে আলো আঁধারি। ভাবনার সুতো ছাড়ছে রতন। মহিলার লম্বা গ্রীবা, মুখের আদলটাও কি মৎস কন্যার!
মহানগরীর ব্যস্ততম মোড়ে সন্ধার আলো-ছায়ায় কয়েক পা সামনে এগিয়ে গেল রতন। কিন্তু হঠাৎ পা আটকে গেল। নিজের সাথে কথা বলল রতন। একটু আলাপ করলেই রাস্তার আলোয় স্পষ্ট দেখা যাবে যুবতীর মুখ। চোখের চাহনিও। কিন্তু কী বলে আলাপ করবো, একটা ধরতাই তো চাই! আলাপ নাহয় শুরু করলাম কিন্তু ‘আমার বদ মতলব’ ওজুহাত দিয়ে মেয়েটি চেঁচামেচি শুরু করলে? দঙ্গল লোক চিৎকার শুনে যদি থাপ্পড় কশায়!
‘সাহস না থাকলে কি শিল্পী হওয়া যায়?’ হঠাৎ স্যারের কথাটা উড়ে এসে মাথায় ঠক করে মারল। অল্পক্ষণ ভেবে নিয়ে রতন সামনে কয়েকটা সাহসী পদক্ষেপ নিল। মনে মনে কথা গুছিয়ে নিচ্ছে। ভালো করে মুখটা দেখে প্রথম কথাটা বলবো, ‘আপনার পিঠের ট্যাটুটা দারুণ সুন্দর! খুব মানিয়েছে আপনাকে।’
মেয়েটি মুখ তুলবে। মুক্তা ছড়িয়ে হাসবে। তারপর সুরেলা গলায় বলবে, ‘থ্যাংকস, এই ট্যাটুটা করাতে গিয়ে খুব কষ্ট পেয়েছি জানেন! স্কিন ফুটো করে রং ঢোকানো তো! খুব জ্বালা। বাড়িতেও আপত্তি ছিল, জানেন। কিন্তু আমি সাহস করে করিয়েছি।’
কথার ফাঁকে মুখটা আর চোখের চাহনি স্পষ্ট করে দেখে নেবে রতন। ভাবনা মতই কাজ। সাহস করে মেয়েটির একদম পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ওর মুখের উপর রতনের নরম দৃষ্টি। কিন্তু কেমন যেন রাগী মুখ করে রতনের দিকে পলক তাকাল মৎসকন্যা। রতনের মনের মধ্যে ঝড়। বুকে ধরাস ধরাস। মগজের মধ্যে গোছানো কথা গুলো দমকা বাতাসে নিমেষে উড়ে গেল। একটু থেমে এলোমেলো মগজকে আবার কিছুটা গুছিয়ে নিল রতন। অস্ফুটে বলল, ‘হ্যালো…!’
তাকাল মেয়েটি। ওর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বিদ্যুতের মত ঝলসে উঠল। একটা ঢোঁক গিলে রতন কি যেন বলতে চাইল। যুবতীরর সাড়া নেই। চোখ ভিড়ের রাস্তায়। একটু পরেই একটা নীল মারুতি ওখানে এসে থামল।
রাস্তার ভিড় কাটিয়ে মৎসকন্যার মত শরীর বেঁকিয়ে চালকের পাশের আসনে ঝাঁপ দিল সুন্দরী। মুখশ্রী, চোখের চাহনি ঠিক মত দেখতে পেল না রতন। বুক খালি করে একটা শ্বাস বেরিয়ে এল। মনে মনে বলল, আপাতত কুহকেই জাড়ানো থাক মৎসকন্যার মুখ, চোখের ভাষা। ঠিকঠাক রঙের মিশেল দিয়ে একটা ভালো ছবি আঁকা কি চাট্টিখানি কথা!
তখন অন্ধকার নেমেছে শহরের বুকে। ধীর পায়ে ট্রামে উঠে খালি সিটে টান টান বসলো রতন। ভিড়ের পথে সশব্দে এগিয়ে চলছে ধীর গতির ট্রাম। গন্তব্য অনেকটাই দূর।
গল্প: মৎস্যকন্যা
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ড.সৌমিত্র কুমার চৌধুরী, ভূতপূর্ব বিভাগীয় প্রধান ও এমেরিটাস মেডিক্যাল স্যায়েন্টিস্ট, চিত্তরঞ্জন জাতীয় কর্কট রোগ গবেষণা সংস্থাণ, কলকাতা-700 026.
প্রকাশিত গ্রন্থ- বিজ্ঞানের জানা অজানা (কিশোর উপযোগী বিজ্ঞান), আমার বাগান (গল্পগ্রন্থ), এবং বিদেশী সংস্থায় গবেষণা গ্রন্থ: Anticancer Drugs-Nature synthesis and cell (Intech)।
পুরষ্কার সমূহ: ‘যোগমায়া স্মৃতি পুরস্কার’ (২০১৫), জ্ঞান ও বিজ্ঞান পত্রিকায় বছরের শ্রেষ্ঠ রচনার জন্য। ‘চৌরঙ্গী নাথ’ পুরস্কার (২০১৮), শৈব ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাসের জন্য। গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য স্মৃতি পুরষ্কার (2019), পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তি দফতর থেকে), পঁচিশ বছরের অধিক কাল বাংলা ভাষায় জনপ্রিয় বিজ্ঞান রচনার জন্য)।
একটি মন্তব্য করুন
একটি মন্তব্য করুন