লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের সামনে তিনটি প্রস্তাব রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারী নেতৃবৃন্দের একটি নেটওয়ার্ক গঠনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেছেন, এটি লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির আহ্বানে নারী নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি এসব প্রস্তাব দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে অনুভব করি যে, আমরা নারী নেতাদের একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারি, যা আমাদের শুধু একক বৈঠকের জন্য একত্রিত করবে না বরং লিঙ্গ সমতা অর্জনে বাস্তব পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে একটি শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
বৈঠকে বিশ্বনেতাদের সামনে তিনটি প্রস্তাবও দেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে যেগুলো সঠিকভাবে সমাধান করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম প্রস্তাবে বলেন, ‘আমি লিঙ্গ সমতার বিষয়ে উপদেষ্টা বোর্ড প্রতিষ্ঠার জন্য আপনাদের প্রশংসা করি। এখন এটিকে স্থানীয়করণ করা দরকার। আমাদের প্রত্যেক পর্যায়ে, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে লিঙ্গ চ্যাম্পিয়ন প্রয়োজন এবং আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে নেতৃত্ব দিতে পারি।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, নারী নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলোকে পর্যাপ্ত রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা প্রয়োজন। এ ধরনের প্রচেষ্টায় সহায়তার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
তৃতীয় ও শেষ প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি লিঙ্গ সমতার জন্য আমাদের সাধারণ কর্মসূচিকে জোরদার করতে নেতৃবৃন্দের একটি সম্মেলন ডাকার করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। শুধু আমরা নয়, সকল নেতার এতে যোগদান করা উচিত এবং লিঙ্গ সমতার অগ্রগতির জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতি উপস্থাপন করা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯-এর প্রভাব বিশেষত নারীদের জন্য কঠিন। তিনি আরও বলেন, ‘অবৈতনিক যতœ নেওয়ার কাজ বেড়েছে। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বেড়েছে। ইউনিসেফ এ দশকের শেষের আগে আরও দশ মিলিয়ন বাল্যবিবাহের আশংকা করছে।’
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে ৭ম অবস্থানে আছে। বর্ধিত সংখ্যক নারী কর্মীবাহিনীতে যোগ দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী এবং তারা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে রয়েছে। তৈরি পোশাককর্মীদের ৮০ শতাংশের বেশি নারী। অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে নারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের অনেকে চাকরি ও আয় হারিয়েছে। নারীসহ ২০ লাখ প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছে। আমাদের দেশ কষ্টার্জিত অগ্রগতির চাকা পেছনে ঘোরার ঝুঁকিতে রয়েছে।