কোন নীতি নৈতিকতার বালাই এবং আচরণগত সুশিক্ষার অভাবে নগরী অভিজাত হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে মিলনায়তন ভাড়া করে বরিশাল সরকারী স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা-সমাপন শেষে তারা সমাপনী অনুষ্ঠানের পরিবর্তে তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি ‘র্যাগ ডে’ পালন করছে। আয়োজনস্থল অভিজাত রেস্টুরেস্টগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে লাইসেন্সড ’বার’ও রয়েছে।
করোনা-কালীন দুর্যোগের মধ্যেও সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে এ ধরনের আয়োজন নিয়ে নাগরিক সমাজ উদ্বিগ্ন হলেও দেখার কেউ না-থাকায় একের পর এক এ ধরনের আয়োজন চলছে।
নগরীর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর যে শিক্ষার্থীরা ২০২২সালে এসএসসি দেবে তারা আগামী একুশে সেপ্টেম্বর নগরীর অভিজাত ’হান্ডি কড়াই’ রেস্টুরেন্ট এ ধরনের এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এতে একশ কুড়িজন শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্তত বিশ জন অভিভাবক যোগ দেবেন বলে আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে। এ অনুষ্ঠানের জন্য নগরীর সরকারী মহিলা কলেজে চলছে নাচের রিহার্সেল।
সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাহবুবা হোসেন জানান, ’তারা স্কুলে এ ধরনের অনুষ্ঠান করার অনুমতি চাইতে এসেছিল। কিন্তু আমি করোনাকালীন পরিস্থিতিতে এ ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি দেইনি। আমি তাদের নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা আমাকে ’সুপারসিড’ করে পরে ’হান্ডি কড়াই’তে এর আয়োজন করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এজন্য জনপ্রতি আটশো টাকা করে চাঁদা নিয়ে তারা এটা উদযাপন করছে। এই আয়োজনের পিছনে রয়েছে বিশেষ কয়েকজন অভিভাবকের অতি উৎসাহও দায়ী। শুধু মাত্র এই স্কুল বা ২০২২ সালের শিক্ষার্থীরাই নয়। মহামারীর কারনে যখন স্কুল বন্ধ ছিল তখনও ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যাচ নগরীর আরেকটি হোটেলে এ ধরনের আয়োজন করেছে।
নগরীর সবেচেয়ে প্রাচীন ও অভিজাত স্কুল বরিশাল সরকারী জিলা স্কুলের ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা এই বছরের আঠারো জানুয়ারীতে হোটেল সেডোনাতে এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ ছাড়া হোটেল এরিনাতেও আরজুমনি স্কুল সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘র্যাগ ডে’ অনুষ্ঠিত হয়।
বরিশাল জিলা স্কুল এর প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম এ ব্যাপারে জানান, সবে স্কুল মাত্র খুলেছে। এই বিষয়টি তার জানা ছিল না। তিনি খোঁজ নিচ্ছেন। এই বিষয়ে কেউ উদ্যোগী হলে তাদের নিষেধ করার জন্য তিনি শিক্ষকদের এখনই জানাচ্ছেন।
শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া জেসমিন জানান, আমি নোটিশ দিয়েছি এই ধরনের ‘র্যাগ ডে’ যাতে পালন করা না-হয়। এর মধ্যে অতি উৎসাহী একজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এ জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বরিশাল মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এহতেশামুল হক জানান, স্কুলের বাইরে ওরা কিছু করলে আমরা কি করতে পারি? আমাদের পক্ষে পুলিশের ভূমিকা নেয়া সম্ভব নয়।
শহীদ আরজুমনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবাদুল ইসলাম জানান, তিনি শিক্ষকদের সাথে মিটিং করে এধরনের আয়োজন যাতে শিক্ষার্থীরা না করে, সে ব্যাপারে নির্দেশ দিচ্ছেন।
বরিশালের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, হোটেল ভাড়া করে এ ধরনের আয়োজনের বিষয়টি আমাদের দীর্ঘদিনের শিক্ষার ঐতিহ্যের সাথে খাপ খায় না। আমি বিষয়টি দেখছি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি সোহেল মারুফ জানান আমি বিষয়টি মাত্র শুনালাম, খোঁজখবর নিচ্ছি।
এদিকে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বরিশালের শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেন।
সাবেক জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা পংকজ রায় চৌধুরী বলেন এটা শিশুদের জন্য অত্যন্ত সুদুরপ্রসারী কুফল বয়ে আনবে। শিক্ষার্থীদের যাবতীয় কার্যক্রম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই হওয়া উচিত, কোন হোটেলে ভাড়া করে নয়।
অভিভাবক পঙ্কজ গুপ্ত জানান এক স্কুল অপর স্কুল কে দেখিয়ে এই ধরনের আয়োজনে উৎসাহী হয়ে উঠেছে। এর ফলে বরিশালের সকল স্কুলের ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে হোটেলে স্কুলের অনুষ্ঠান করার। এখন পর্যন্ত তারা সিনেমা হলে যায় নি। এটি বন্ধ না হলে আগামী দিনে শিক্ষা-ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।