শুধুমাত্র ছবির জন্যই নিশ্চিন্ত মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি অনায়াসে প্রত্যাখ্যান করে যিনি মনপ্রাণ সঁপে দিয়েছেন আঁকায়, ‘গড: এনসিয়েন্ট এলিয়েন অর আ মিথ’ নামে একটি বই লিখে সাড়া ফেলে দিয়েছেন, একের পর এক লিখেছেন চিত্রনাট্য, সেই বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শুভঙ্কর সিংহ দশটি ছবি এবং দীর্ঘ কুড়ি বছর পিডিলাইটে চাকরি করার পরে তিন বছর আগে শুধুমাত্র ছবিকে ভালবেসে যিনি চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি আঁকার জগতে এসেছেন, সেই সুদীপ্ত অধিকারীর ত্রিশটি, মোট চল্লিশটি ছবি নিয়ে আসানসোলের বিদ্যাসাগর আর্ট গ্যালারিতে সম্প্রতি তিন দিন ধরে হয়ে গেল ট্রিপটিচ চিত্রপ্রদর্শনী।
অ্যাবস্ট্রাক এবং ফাইন আর্টসের মিশেলে শুভঙ্কর সিংহের নিবেদনে ছিল মোট দশটি ছবি। উল্লেখযোগ্য ছবিগুলির মধ্যে ছিল, ট্রাপড উইথ ইন ইনফাইনাইট, দ্য ফেমাস ফ্লাইট অফ রিবার্থ, ইম্প্রেশন, ক্রুসিফিকেশন অব ট্রুথ, এ ভ্যাগরেন্ট গডেস-সহ চোখ ধাঁধানো এক একটি ছবি। আর সুদীপ্ত অধিকারীর ছোট ছোট ত্রিশটি ছবিতেই ধরা পড়েছিল মাইথোলজি আর প্রকৃতির সংমিশ্রণ। যার মধ্যে ধরা পড়েছে ঐশ্বরিক শক্তির বিচ্ছুরণ। তাঁর যে ছবিগুলো নজর কেড়েছে সেগুলো হল মেডুসা, দুর্গা, উইশ ট্রি, হ্যামার অব থর-সহ অন্যান্য ছবি।
মূলত ক্যানভাসে অ্যাক্রেলিকে আঁকা ছবিগুলো দেখার জন্য বেলা ২টো থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ছিল উপচে পড়া ভিড়। শিল্পের প্রতি আসানসোলবাসীর এই আগ্রহ দেখে দুই শিল্পীই একেবারে অভিভূত। দু’জনেই জানিয়েছেন, তাঁরা যে এখানকার মানুষজনের এভাবে সাড়া পাবেন তাঁরা তা কল্পনাও করতে পারেননি। শুধু সাধারণ মানুষই নন, এই প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন এলাকার বিশিষ্ট লেখক সুরজিৎ সুলেখাপুত্র, আশিস মুখার্জ্জী, পার্থ সিনহা, চিত্রশিল্পী দেবব্রত ঘোষ, পার্থ নাগ, কোহিনূর কবিরাজ, রঞ্জন মুখোপাধ্যায়, নীলোৎপল ভট্টাচার্য, জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়, অরুণাংশু আলী চৌধুরী, অর্ণব ঘোষ এবং অনুপম দাস-সহ অন্যান্য গুণীজনেরা।
এত দিন শুভঙ্কর সিংহ প্রতিষ্ঠিত আর্টভার্স সংস্থার তরফ থেকে কলকাতার প্রথম সারির গ্যালারিগুলোতে চিত্র, ভাস্কর্য এবং ফোটোগ্রাফি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হত। তাতে অংশ নিতেন তরুণ-তরুণীতর শিল্পীরা। প্রদর্শনীতে টাঙানোর আগে ছবিগুলি ঝাড়াই-বাছাই করত সম্পাদকদের একটি চ্যানেল।
এই প্রদর্শনীতে শুভঙ্কর সিংহ এবং সুদীপ্ত অধিকারী সাধারণ আমজনতার অভাবনীয় সাড়া পাওয়ায় তাঁরা ঠিক করেছেন, এ বার থেকে শুধু এই রাজ্যেই নয়, অন্যান্য রাজ্য, এমনকী গ্রাম-গ্রামান্তরেও তাঁরা ছবি নিয়ে ছুটে যাবেন। অতিমারির নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে পাড়ি জমাবেন বিদেশেও।