পরজন্ম
সময় কিছুটা মৌন এখন
অথবা মূক
অন্ধ আগুন সাঁঝের গল্পে মশগুল।
একবুক জলসাঘর, দরবারি কানাড়া
গত শীতে হৈ হৈ করে সমুদ্র দর্শনে গিয়েছিল যারা
তারা বেরোতে পারেনি কুয়ো থেকে।
একটা বিপন্ন ঢেউ সব ওলোটপালোট করে দিল,
নষ্ট সাজঘর
থার্ড বেলের পরেও খালি পড়ে আছে মঞ্চ।
যাওয়া আর আসার মাঝে সার সার যতিচিহ্ন
আমাদের সমস্ত সংলাপ অলীক উদ্দেশ্যে ধাবমান,
শিখার নিচের অন্ধকার পেরিয়ে। সেই আলোআঁধারিতে
রচনাপাত্রে তিনি লিখছেন পরজন্মের জাতককথা।
বিপরীত দৃশ্য
শোক সন্তর্পনে বেজে ওঠে বাঁশি
অ-পূর্ব!
সত্যের কথামুখ জাগে প্রার্থনার পংক্তিমালায়
চিত্রলিপির মতো আঁকা হয় সুর।
মৃত্যু আর ঘুমের মধ্যে কাঁপতে থাকা দূরত্বের মাঝে
পাথুরে চোখের দুয়ার আগলে বসে আছে বিশ্বাস।
ব্যক্তিগণ অন্ধকার প্রবল, ক্রমশঃ
ডুবে এলো স্বর, বিষাদের আরো নীচে
সার নেই, সাড়া নেই…
নকল ডাকের উত্তরে
কাকচক্ষু দর্পণে ঘুমের গোপন ইশারা
মৃত্যু, সে তো দেখার উপহাস।
অনুবাদ
আমাদের গল্পের দেশে রোজ ভুল শব্দেরা
হানা দেয় নরম মাংসের লোভে
খিদে আর ঘুম দুটোই অনুবাদ করতে গিয়ে
ভুলে যাই গল্পের শেষটা।
রোজ ভাবি নেলপালিশের গন্ধের মতো
তোমায় অনুবাদ করি
নাম রাখি পছন্দের নদীর নামে
যৌথ বিছানার নরম গন্ধে ভেসে অনুবাদ করি ভালোবাসা।
পুরনো বইয়ের গন্ধের মতো হলদেটে চাঁদ
নিজের রূপোলি আলোয় মুখ ডুবিয়ে
ভাবে চন্দ্রাহত প্রেমিকের কথা
সেই ভাবনার বিরহে তোমায় অনুবাদ করি।
পাহাড়ি টিলার খাঁজে ডুবে যাচ্ছে গোধূলি
লুকোনো বুকের মৃদু অক্ষরে
পৃথিবী অনুবাদ করছে মানুষের কথা
এইবারে ভালোবাসতে আর
শব্দের কোনো প্রয়োজন পড়বে না।
অনার্য স্বপ্ন
পাট ভাঙা তুঁতে শাড়ির আঁচলে
যতটা ঈর্ষা ছিল, তার থেকে ধারালো
ছিল গোপন অন্বেষণ
হাত বদলে
মুহূর্তটা তখন বধির
কালো ইচ্ছে সকল,
গান্ধারকুমারের পাশার দানের মতো
ঋজু। আরো তেরো বছরের প্রতীক্ষা …
ব্যর্থ অভিসার
সাজিয়ে নিয়েছে মধু-গর্ভ
কে জানত শান্তি পর্বের পরেও
বাকি মুষল পর্ব
মৃত্যু আসলে অশ্বমেধের ঘোড়া
কুমকুম চন্দন বরমাল্য ছিল না
রাশিচক্রে বিশ্বস্ত ক্ষত
আর দানের মাহাত্ম্য ।
অনার্য তাপস আবহমান কাল ধরে
দয়া করেছে নতশির আচার্যকে
এক অনিবার্য কৌতুক
মহাকব্যিক অক্ষরে।
অসুখ না হওয়া জ্বর
অধিক দামে কিনিনি কখনো
একটা নদী
নিজস্ব ঢেউ
নিজেকে গুছিয়ে নেবার
আগে একবার হারাতে চাই
দরিয়ায় আঁচল রেখে পেতে
আসার আগে কেন বললে, ‘যাই’
মঙ্গলকাব্য বাঙালি তোমায় পায়নি
ধূসর পান্ডুলিপিতে খুঁজছে
আন্টারর্টিকায় বরফ পড়লে
শিলং পাহাড়ে ভিড় বাড়ে
মনের ফসল তুলে রাখছি ঘরে
হাতের ওম কপালে রেখো
অসুখ না হওয়া জ্বরে।
অনন্তের গভীরে
নিষেধের রঙ ফিকে হতে হতে মলিন
হাতের কাজ শেষ হলেই এই বাঁকটা
পেরিয়ে যাবো নিশ্চিত।
সামনে ধুলোপথ বিরামচিহ্নহীন বয়ে গেছে
প্রনামের দেশে
মুখোশ জমানো অভ্যাস ছিল
রংও জমিয়েছি নিছক কৌতূহলে
ফুলগুলো এখন স্বেচ্ছা অবসরে, ভুলে
ডালের মায়া, পাখির সোহাগ
ছড়ানো খইয়ের মনস্তাপ জানে অচল আধুলির বিপন্নতা ।
এইখানে রাখি বাজারের থলি
বাবার প্রেশারের ওষুধ
মায়ের হলুদমাখা আঁচলের ছায়া
গিন্নির নরম অনুযোগ
মেয়ের জন্য জমানো প্রভিডেন্ট ফান্ড ।
রোদ পরে আসে নিয়ম মতো
নতুন পুকুরের জলে আঁক কাটে
কিশোরী গোধূলি
দু’একটি ডাহুক ডেকে ওঠে পদাবলী মাধুর্য্য
শুরু করি চলা এক অনন্ত থেকে
অন্য অনন্তের গভীরে।