ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, মোবাইল ফোনে কথা বলা দুই পক্ষের মধ্যে এক পক্ষ, আবার অনেক সময় তৃতীয় পক্ষও ফোনালাপ ফাঁস করতে পারেন। তবে এখানে কোন পক্ষের কি স্বার্থ আছে তা জানি না। তবে ফোনে আড়ি পাতা ঠিক নয়। সেই আড়িপাতা মিডিয়ায় সগৌরবে প্রচার করাটাও উচিত নয়।
ফোনে আড়িপাতা ও ফোনালাপ ফাঁস বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে দায়েরকৃত রিটের শুনানিকালে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।
শুনানির শুরুতে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতে বলেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩০(চ) ধারা অনুযায়ী টেলিযোগাযোগের একান্ততা রক্ষা নিশ্চিত করা বিটিআরসির দায়িত্ব। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে এ ধরনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কমিশন তার দায়িত্ব পালন করছে না।
শিশির মনির আরও বলেন, সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আমি, আপনারা বা অ্যাটর্নি জেনারেল কেউ নিরাপদ নই। কখন কার ফোনালাপ কীভাবে ফাঁস হবে কেউ জানি না। স্বামী-স্ত্রীর ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা প্রতিরোধে বিটিআরসির কোনও ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, যারা রিট আবেদনকারী হিসেবে রয়েছেন তাদের কারও ক্ষেত্রেই ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। ফলে তারা কীভাবে সংক্ষুব্ধ হলেন? যেসব ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা এখানে যুক্ত করা হয়েছে তারা চাইলে বিটিআরসিতে আবেদন করে প্রতিকার চাইতে পারেন। এছাড়া নিম্ন আদালতে দেওয়ানি মামলা করারও সুযোগ আইনে রাখা হয়েছে। অতএব, এই রিট চলতে পারে না। খারিজযোগ্য।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, যখন দুজন ব্যক্তির মধ্যে ফোনালাপ হয় তখন এদের যে কেউ একজন সেটা রেকর্ড করে ফাঁস করতে পারেন। এখানে বিটিআরসির কী করার আছে? সেক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা করতে পারেন। অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ আইনে রয়েছে।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, এই ফোনালাপ ফাঁস প্রতিরোধ করা সম্ভব কিনা? জবাবে শিশির মনির বলেন, সম্ভব। ডিজিটালি সারা বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। আমরা লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু জবাব না পেয়ে রিট করেছি।
আদালত বলেন, ফোনালাপ যখন মিডিয়ায় ফাঁস করা হয় তখন ব্যক্তির গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হয়। সামাজিকভাবে ওই ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে কারা ফোনালাপ ফাঁস করে তা আমরা জানি না। তবে ফোনালাপ ফাঁস করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে সকল পক্ষকে সজাগ থাকা দরকার। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আগামী রবিবার এ রিটের ওপর আদেশের জন্য দিন ধার্য রেখেছেন হাইকোর্ট।
এদিকে রিট আবেদন দায়েরের পূর্বে সরকারি বিভিন্ন দফতরে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে থাকেন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। নোটিসের জবাব না পেয়েই রিট মামলা করে থাকেন আইনজীবীরা। লিগ্যাল নোটিসের এই জবাব না দেওয়া প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছে, আমাদের দেশে ডিমান্ড নোটিসের জবাব দেওয়ার চর্চাটা সেভাবে গড়ে উঠেনি। হয়ত লাখে ২/১টা নোটিসের জবাব পেয়ে থাকতে পারেন কেউ কেউ।
আদালত আরও বলেন, আমরা যতই জনবান্ধব প্রশাসনের কথা বলি না কেন, প্রশাসনের এই দৃষ্টিভঙ্গি বা সংস্কৃতি কবে বদলাবে কে জানে!
এরপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর এ মামলায় আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।