নাটোরের অবিসংবাদিত নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর ২৬তম প্রয়াণ দিবস পালন করা হয়। দিবসের শুরুতে আজ সোমবার সকাল সাতটার দিকে শহরের নীচাবাজারস্থ প্রয়াত নেতার নিজ বাসভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য সহ শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
পরে সদর উপজেলার ছাতনী মহাশ্মশানে তার বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য ১৯৯৫ সালের এই দিনে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক গভর্নর, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত অবিসংবাদিত নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরী পরলোকগমন করেন।
নাটোরের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, নিষ্ঠাবান পরমত সহিষ্ণু, সর্বজন শ্রদ্ধেয়, প্রগতিশীল, সৎ ও সাহসী রাজনীতিবিদ প্রয়াত বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরী ৪মার্চ, ১৯২৬ খ্রিঃ নাটোরের বিখ্যাত ছাতনী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জমিদার পিতা জ্ঞানদাগোবিন্দ চৌধুরী সেকালের একজন স্বনামধন্য গ্রাজুয়েট ছিলেন।
বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরীর ভাগ্যবতী মাতার নাম মণীন্দ্রবালা দেবী চৌধুরাণী। জ্ঞানদা বাবু ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। গ্রামের পাঠশালায় অধ্যয়ন শেষে বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরী ১৯৪৫ খ্রিঃ অর্ধবঙ্গেশ্বরী মহারাণী ভবানীর জন্মস্থান বগুড়া জেলার আদমদীঘি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর কলিকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াশুনা করেন।
উক্ত কলেজে ১৯৪৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর বি,এস,সি, ক্লাসে ভর্তি হন। উল্লিখিত সালে ভারত বিভাজনের ফলে নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে তাঁর পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে। উল্লেখ্য, ছাত্রাবস্থায় তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেন এবং গান্ধীজির অহিংস পন্থা বেছে নেন।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময়কালে তিনি অনিমা চৌধুরীর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁরা ৪কন্যা সন্তানের জনক-জননী। জ্যেষ্ঠা এবং মেজো কন্যাদ্বয় অকাল প্রয়াত ; সেজো এবং কনিষ্ঠা জীবিতা। জ্যেষ্ঠা কন্যার নাম-মিলি চৌধুরী, স্বামী- বিচারপতি এন.কে.চক্রবর্তী। দ্বিতীয়া কন্যা-লিলি চৌধুরী, স্বামী-মেজর রফিকুল ইসলাম।
তৃতীয়া কন্যা-উমা চৌধুরী (জলি ) রাজনীতিবিদ, তাঁর স্বামী প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ চৌধুরী। বর্তমানে তিনি নাটোর পৌরসভার সুনির্বাচিত সম্মানিতা মেয়র। চতুর্থী কন্যা শেলী চৌধুরী, স্বামী সৌমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, জয়েন্ট সেক্রেটারি, স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
কর্মপ্রিয় এই গুণীজনের কর্মবহুল জীবনের পরিসর বৈচিত্র্য, গৌরব ও সৌরভে অনন্য অসাধারণ। বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরী ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৬০ সালে তিনি নাটোর পৌর সভার কমিশনার নির্বাচিত হন।
১৯৬৬ সালে বাঙালি জাতির জনক ও অবিসংবাদিত মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ ও সাহসী নেতৃত্বে বাঙালির ন্যায্য ৬দফা স্বাধিকার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের অভিযোগে বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরীকে এক বৎসরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়।
১৯৬৯ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করেন। সেই গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল ভয়ঙ্কর দিনগুলোতে তিনি সাহসী, দৃঢ়, আত্মপ্রত্যয়ী ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবস্থান নেন। তিনি ১৯৬৯-১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার নাটোর পৌরসভার সম্মানিত চেয়ারম্যান ছিলেন।
উল্লেখ্য, তৎকালে নাটোর বাংলাদেশের সাতটি পুরাতন পৌরসভার মধ্যে অন্যতম একটি ছিল। ১৯৫৭-১৯৫৯ সালে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শাহাবউদ্দীন আহমদ যখন নাটোরে মহকুমা প্রশাসক (এস,ডি,ও ) ছিলেন,তখন নাটোর সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মহকুমা হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এম,পি,এ) নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের গৌরবময় মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ৭নং সেক্টরে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আবদুল মোনায়েম খান নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজ প্রাসাদকে ১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই ‘গভর্নর হাউস ’ হিসেবে উদ্বোধন করেন।
অত:পর স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রিয় নাটোরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে দিঘাপতিয়া গভর্নর হাউসকে বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরীর সময়কালে ‘উত্তরা গণভবন’ হিসেবে উদ্বোধন করেন। উভয়ের মধ্যে নিবিড় সখ্য ও হৃদ্যতা ছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরীর আমন্ত্রণে এক শুভেচ্ছা সফরে নাটোরে শুভাগমন করেছিলেন। হরিশপুর ওয়াপদা মাঠে এক বিশাল জনসমাবেশে তিনি দেশ পুনর্গঠনে নাটোরবাসীকে আত্মনিয়োগের আহবান জানিয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন। নাটোরে তাঁর সেই অম্লান স্মৃতি “বঙ্গবন্ধু মঞ্চ” অনেক বছরকাল সংরক্ষিত ছিল এবং অনাগত প্রজন্মের জন্য তা সংরক্ষণে গুরুত্বারোপ করা খুবই জরুরি।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের অগ্রযাত্রা শুরু হয় ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তারিখে। প্রথমে ঢাকার ডি,আই,টি রোডে একটি ভাড়া বাড়িতে “দূরদর্শন ”শিরোনামে। অত:পর তা রামপুরায় নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়। আর এই টেলিভিশন সম্প্রচার তথা বিনোদনকে স্বচ্ছ, নির্বিঘ্ন ও আনন্দময় করার জন্য অদ্যাবধি ১৪/১৫ টি উপকেন্দ্র পর্যায়ক্রমে স্থাপন করা হয়।
যথা নাটোর, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, সাতক্ষীরা, নোয়াখালি, পটুয়াখালি, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঠাকুরগাঁও, রাঙামাটি, উখিয়া (টেকনাফ) ও কক্সবাজার। তবে শেষেরটির সম্প্রচার নাকি বর্তমানে বন্ধ আছে। উল্লেখ্য, এই উপকেন্দ্রগুলির মধ্যে নাটোর উপকেন্দ্রটি সর্বপ্রথম চালু করা হয়।
বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরীর অনুরোধ ও প্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালে তা নাটোরে স্থাপন করা হয়।১৯৭৫ সালে বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) গঠিত হলে শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরী বাকশালে যোগদান করেন।
রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্রিটিশ আমলের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন ও সংস্কার সাধনের লক্ষে ১৯৭৫ সালের ১৯ জুন বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নতুন প্রশাসনিক কাঠামোর আলোকে প্রতিটি জেলায় একজন করে জেলা গভর্নর নিয়োগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭৫ সালের ১৬ জুলাই শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরী নাটোর জেলার গভর্নর (রাজ্যপাল) নিযুক্ত হন।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ঐ সময় সামরিক শাসনের নির্মমতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বড়ই দুঃসময় অতিক্রম করতে হয়। জেল-জুলুম, হত্যা, হুলিয়া, নিপীড়ন, নির্যাতন, ভয়-ভীতি, লোভ-লালসা, প্রলোভন উপেক্ষা করে নাটোরের এই নির্ভীক , জিতেন্দ্রিয় ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরীক্ষিত অকুতোভয় সৈনিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাটোর জেলার নেতা-কর্মীদের বলিষ্ঠ ও সাহসী নেতৃত্ব দান করেন।
তিনি তাঁর যোগ্যতা বলে ১৯৭৫ সাল থেকে আ-মরণ নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মানিত সভাপতি পদে সমাসীন ছিলেন। ১৯৭৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এম,পি, নির্বাচিত হন। তত্বাধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনেও বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নাটোর-২ সংসদীয় আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য বা এম,পি নির্বাচিত হন।
শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরী নাটোরের নানা সঙ্কট ও সম্ভাবনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। নব্বই এর দশকে এরশাদ শাসনামলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় অনন্য ভূমিকা পালনে তিনি সচেষ্ট ছিলেন।
তিনি রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। নাটোর রাণীভবানী সরকারি মহিলা ডিগ্রি কলেজের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নাটোরের বনলতা হাইস্কুল ও বড়গাছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
তিনি হয়বতপুর এম,এল, হাইস্কুলেরও পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। নাটোরের উপকন্ঠে অবস্থিত হরিশপুর ব্যাপ্টিস্ট মিড মিশন হসপিটাল ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসে ২৮ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আমেরিকান দুই নাগরিক ডা.বারুজ ও ডা.মিসেস বারুজ। প্রশাসক বা পরিচালক হয়ে আসেন মিস্টার পিটারসন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমেরিকান বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মিস্টার ফোর্ট ও মিসেস ফোর্ট উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, এই (নাক,কান ও গলা) বিখ্যাত হসপিটালটি পাবনার ঈশ্বরদীতে হওয়ার কথা থাকলেও নাটোরের কৃতি সন্তান বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরী ও আবদুস সাত্তার খান চৌধুরী (মধুমিয়া) এম, পি‘র যৌথ প্রচেষ্টায় তা নাটোরে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও নাটোরের বহু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল।তাঁর গগনচুম্বী জনপ্রিয়তার কারণে তাঁর পবিত্র জন্মভূমি ছাতনীতে ১৯৭১ সালের ৪জুন পাক সেনাদের দোসর স্থানীয় শান্তি কমিটির সহায়তায় নাটোরের কুখ্যাত রাজাকার হাফেজ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে ঈশ্বরদী, সান্তাহার ও সৈয়দপুর থেকে আসা অবাঙালিদের সাথে নিয়ে পাক সেনারা রাত আড়াইটার দিকে ছাতনীতে অতর্কিতে হামলা চালায়।
তারা রাতভর আশেপাশের শিবপুর, বারোঘড়িয়া, আমহাটি, পন্ডিতগ্রাম, ভাভনি, ভাটপাড়া, হাড়িগাছা, রঘুনাথপুর ও বনবেলঘরিয়া সহ ১০/১২ টি গ্রামের বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষদের ধরে এনে ছাতনী সুইস গেটের কাছে একটি মাঠে জড়ো করে; সকাল ১১টার মধ্যে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে প্রায় ৪৬৭ জনকে নারকীয় ভাবে হত্যা করা হয়।
মানুষের বেঁচে থাকার প্রাণের আর্তনাদ ও আকুতির দুর্বহ স্মৃতি বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরী তা আমৃত্যু ভুলতে পারেন নি। বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরীকে নাটোরের উদার ও সহিষ্ণু এবং আদর্শ রাজনীতির জনক বলা যায়। নানা ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের নিপীড়িত, নির্যাতিত, অসহায় নর-নারী, আবাল বৃদ্ধ বনিতার শেষ আশ্রয়স্থল ছিলেন তিনি।
আর্ত-মানবতার সেবায় শত শত আর্ত পীড়িত রোগীর সেবায় তিনি ব্যাকুল চিত্তে এগিয়ে আসতেন। নাটোর সদর হসপিটালে টেলিফোন করে রোগীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। কখনও কখনও তাঁর নিজস্ব ট্যাক্সিতে বিনা খরচে গরিব রোগীদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হসপিটালে পাঠাতেন।
গরিব মানুষের মেয়ের বিয়েতেও তিনি অকাতরে গোপনে দান করতেন। তাঁর প্রায় কয়েকশত বিঘা জমিতে নিরন্ন, বিপন্ন, অসহায়, দীন-দুঃখী মানুষ নাকি বসবাস করছে। তিনি ছিলেন মেহনতি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু ও দরদী প্রিয় মানুষ এবং পরম আপন জন।
অসাম্প্রদায়িক, উদার মানবতাবাদী, প্রগতিশীল, মানবদরদী, দানশীল, মুক্তিযোদ্ধা, রুচিশীল, সদালাপী ,পরদুঃখকাতর, বিনয়ী, ধীমান, মনস্বী, দৃঢ়চেতা, দেশপ্রেমিক, প্রজ্ঞাবান, সাত্ত্বিক, ধনবান, ন্যায়বান, সত্যপ্রিয় ও আলোকপিয়াসী সফল ব্যক্তিত্ব, নাটোরের গৌরব বাবু শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরী ৬৯ বৎসর বয়সে তাঁর কর্মবহুল জীবনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাঁর অন্তিম ইচ্ছানুসারে স্বীয় জন্মভূমি ছাতনী মহাশ্মশানে তাঁর পবিত্র মরদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। নাটোরে এই প্রাজ্ঞ রাজনীতিকের পবিত্র স্মৃতিকে চিরন্তন ও স্মরণীয় করে রাখার জন্যে তাঁর নামানুসারে “শঙ্করগোবিন্দ চৌধুরী আধুনিক স্টেডিয়াম” নামে একটি সুরক্ষিত মনোরম স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালের ১২ জানুয়ারি।
এই স্টেডিয়ামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন দেশরত্ন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ এই মহান রাজনীতিজ্ঞ, সুশাসক ও সংগঠকের আসন্ন প্রয়াণ দিবসে তাঁর সুকৃতি ও অমলিন স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তাঁর অমর ও বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ভাষায় বলতে হয়-
“সেই ধন্য নরকুলে, লোকে যারে নাহি ভুলে
মনের মন্দিরে সদা সেবে সর্ব্বজন।”
তথ্যসূত্র:
১। “বরেন্দ্র অঞ্চলের কতিপয় রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব”এস এম আবদুল লতিফ।
প্রকাশনায়: রাজশাহী এসোসিয়েশন, রাজশাহী, জুন ২০০৬খ্রিঃ,পৃঃ ১৯৭।
২। “রাজশাহী প্রতিভা” (১ম খঃ), সম্পাদক: ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী ও ড.তসিকুল ইসলাম।
প্রকাশনায়: রাজশাহী এসোসিয়েশন, রাজশাহী, অক্টোবর-২০০০খ্রিঃ এবং পৃঃ২৯৩।
৩। সাক্ষাৎকার: ব্যাপ্টিস্ট মিড মিশন হসপিটাল কর্তৃপক্ষ, হরিশপুর, নাটোর। ১৯/০৫/২০১৫।
৪। জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকা সমূহ।