অ-কবি
প্রিয়তমা, আমি কোন কবি নই।
আমি এক দীনহীন
বিধ্বস্ত হতাশ বিদ্রোহী যুদ্ধযাত্রী,
উত্তাল সমুদ্র আর তার বিশাল জলধারা,
যদিও অবিচ্ছিন্ন বয়ে যাওয়া..
মায়া ,দয়া, ক্ষমা,
তারপরম ছোঁয়ায় আমায় নিয়ে এসেছিল
সমুদ্রের সৈকতে,
তখন আমি শান্ত হয়ে গিয়েছিলাম,
আমি অপদস্ত উঠে এসেছিলাম
প্রবাল ঘেঁষা শৈবালের শরীর ও শেওলা ধরে ,
শান্তি ও লোভের থাবায় নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ..
বিশ্বাস করো প্রিয়তমা আমি কোন কবি নই,
আমি হতেও পারি পৃথিবীর কোন এক
তরু বা লতার কঙ্কাল অথবা শেওলা
যা এখনও শুকিয়ে আছে কোন এক জঞ্জালের আষ্টেপিষ্টে,
কি জানি কার আগমনে!
এখনও সে বেজে ওঠে রুনুঝুনু নুপুর ও সুরে ।
বিশ্বাস করো প্রিয়তমা আমি কোন কবি নই,
আমি কোন এক বিপ্লবী যোদ্ধার
নিক্ষিপ্ত হওয়া অবিস্ফোরিত গ্রেনেড…
রক্ত ও আত্মা
সাদা বরফে আকাশ ঢেকে আছে
রক্তের আত্মীয়ই শুধু কি আত্মীয়?
আত্মার সাথে সম্পর্ক যার আত্মীয় হয়ে ওঠে সেই।
রক্তে বহু বহু ত্রুটির সাথে থাকে
জীবনঘাতী এইডস বা ক্যান্সারের জীবাণুও,
আত্মার আত্মীয় শুদ্ধতা ছাড়া কিছু নয়
দিনের সত্য যথাযথ।
শুকনো ফুলের অগ্নিতে
প্রেমিকা তুমি আজ দাঁড়িপাল্লায়
নিলাম করো নিজেকে
বিক্রি হয়ে যাও দিরহাম মুদ্রায়।
প্রেমিকা তুমি তাকে শ্মশানে পাঠাও,
বাগানের মালির কাছ থেকে বিনামূল্যে
চেয়ে নিও শুকনো ফুল,
শ্মশানের ওপর ছড়িয়ে দিও।
সঞ্চয় হবে তোমার মুদ্রা, অর্থবহ হবে অর্থনৈতিক জীবন,
যদিও অর্থের আসলে মানসম্পন্ন অর্থ নেই, নেই মূল্য,
ধ্বংস ছাড়া, দূরত্ব ছাড়া, অর্থনীতির কোন নীতি নেই।
তোমার ছড়িয়ে দেওয়া শুকনা ফুলে
আরো দাউ দাউ করে জ্বলে উঠুক আমার চিতা,
আমি পুড়ে পুড়ে ছাই হবো তোমার শুকনো ফুলের আগুনে ।
আমার উন্মুক্ত প্রেমে
তুমি ভালোবাসায় কাঁতর হয়েছিলে,
সেই সেব সময়, দিনক্ষণ-
বড়ই সস্তা আজ সে সব!
যেদিন খুলে গেছে প্রেমের সকল বাঁধন
সেদিন থেকে আমার বুকে জ্বলছে তুমুল দাবানল,
তুমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখো,
পুড়ে পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে আমার অস্তিত্ব,
তোমার শুকনো ফুলের অগ্নিতে…
মহামায়া
যেদিন বেজে উঠেছিল যুদ্ধের দামামা,
চারিদিকে ঘেরা ঘাত-প্রতিঘাত আর সংঘাত,
তখনই এই হাত ছেড়ে তুমি চলে গিয়েছিলে-
তুমি ছিলেনা, আজও নেই এই পথে,
তুমি বন্ধু নও, বন্দুক বটে,
যদিও তুমি সঙ্গী ছিলে ক্লান্ত রথে,
যুদ্ধরথে একা রেখেই পালিয়ে গিয়েছিলে।
আদি জন্ম হতে মহামায়া
তোমারই শরীরই পুড়িয়ে দিয়েছিল আমার স্বপ্নরথ,
তোমারই শরীরেই পুড়েছিল আমার অনন্ত যাত্রার পথ।
অনর্থক ক্রোমোজোম
বসে আছি জাহান্নামের চৌরাস্তায় ঠিক মধ্য রেখায়
অভিশপ্ত জীবনের কর্ম দেবতার পায়ে ধরে,
জাহান্নাম আর জান্নাতের দু’রাস্তা মোড়ে,
নিয়ে যাবো এক অশ্বত্থের নিচে আমার নিবাস,
যার প্রতিবেশী কিছু অনর্থক ক্রোমোজোম,
এ যেন অভিশপ্ত নিস্ফল নষ্ট জীবন।
পারলে একটু ঘৃনা করতে পারো
আমি আকাশে উড়ে বেড়াই
চীর্ণ তুলোর মতো,
বিচ্ছিন্ন পাখির পালকের মতো,
জঞ্জালের অগোছালো শুকনো পাতার মতো,
কিংবা বেইলি রোডের
ডাস্টবিনের অবাধ উগ্র গন্ধের মতো,
কিংবা ঢাকার কষ্ট ধুলার মতো।
অথবা আমি সেই সামান্য
ফুটপাতে উড়ে আসা বাতাসে
একাকী শহুরে বিলাস প্রিয় শিশির কণার মতো,
ধুলোয় যার অকালে দেহত্যাগ
পরিণতি অদ্ভুত সুন্দর মৃত্যু।