জীবন কখনো অন্যের দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে না
জীবনের যা কিছু সবটাই আমাদের হৃদয়তাড়িত। আসলে বেশিরভাগ মানুষ বাঁচে অন্যের সিদ্ধান্তের ওপরে, অন্যের সমালোচনার ওপরে, অন্যের দেওয়া সার্টিফিকেটের ওপরে; তাই তো জীবনানন্দকেও এভাবে প্রাণ হারাতে হয়; মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে তাঁকে প্রমাণ করতে হয় তাঁর যা কিছু অবদান, যা কিছু সৃষ্টিকে। এই তো আমাদের জীবন; এই তো আমাদের উচ্চতার জয়গান!
আমার মনে হয় বাহ্যিক এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের ছন্দে চলাই যুক্তিযুক্ত, সৃষ্টির আনন্দে নিজের মতো করে বেঁচে থাকার আনন্দই তো আলাদা, কারো কাছে কোনো দায় স্বীকার নেই। এ জীবনের মজা যে একবার আয়ত্ত করেছেন তাঁর জীবনটাই যে অন্য ধারায় বয়ে চলেছে। জীবনের সবটুকু রস, সবটুকু ছন্দ তখন তাঁর হাতের মুঠোয় ।
এ জীবন আমার আর তার সমস্ত দায়ভারও আমার। আমাকে অন্য একজন নিয়ন্ত্রণ করবে কেন? পৃথিবীর যা কিছু ভাল তাকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করব, যা কিছু আবর্জনা তাকে সযত্নে বর্জন করব।
লোভ বড় সাঙ্ঘাতিক জিনিস, আর মোহ। নিজেকে সংযত করার আসল শক্তিই তো নিজেকে আয়ত্ত করতে হবে। আর এখানেই তো প্রকৃত শিক্ষা। নাম্বারের প্রতিযোগিতায় গিয়ে একটা শিশুকে মানবিক ভাবে নষ্ট করে দিচ্ছেন তাদের অভিভাবকেরা। জোর করে তাকে একটা যন্ত্রে পরিণত করছেন দিনের পর দিন। তার সুন্দর কোমল মনটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে কিছু অভিভাবকের জাঁতাকলে। তাদের বঞ্চিত করছেন কত কিছু থেকে। নীল আকাশের বুকে উড়ে যাওয়া মেঘের খেলার গল্প আর শোনা যায় না, পাখিদের নীড়ে ফেরার আনন্দ তারা অনুভবই করতে পারছে না। বৃষ্টির ঝমঝম মুহূর্ত তাদের উপলব্ধির বাইরে। তারা শুধু ছুটছে কতগুলো নাম্বারের পেছনে, তারা শুধু ছুটছে বিষাক্ত প্রতিযোগিতার পেছনে, তারা ছুটছে গাড়ি, বাড়ি, প্রাচুর্য, সারা পৃথিবীর বৈভবকে নিজের মুষ্টিতে জোর করে আটকে রাখার পেছনে।
কিভাবে একজনকে নিজের ছন্দে এনে, কিভাবে নিজস্ব কৌশলে, কিভাবে রাজনীতির নোংরা পাঁকে নিজেকে সযত্নে গুঁজে দিয়ে নিজের যা কিছু চাওয়া পাওয়া …। মানুষের আজ সব আছে কিন্তু হৃদয় নেই, মানুষ আজ যন্ত্রের সঙ্গে বাস করছে। মানুষের সুন্দর ব্যবহার সে যে মেকি! সে যে কিছু পেতে চায়! সে পাওয়া যে পাওয়াই হোক।
জীবন যদি অন্যের জন্যে বেঁচে থাকা হয়, জীবন যদি মুখোশের আড়ালে নিবদ্ধ হয়, জীবন যদি বিবেকহীন, মনুষ্যত্বহীন হয়, জীবন যদি হিংসায় জর্জরিত হয়, জীবন যদি শুধু আমি কি পেলাম, আমি কি পেলাম না, শুধুই আমি আমি আর আমি হয়, তাহলে এ জীবনের আর কি মূল্য থাকে? তাই আমি নয়, সবাই একসাথে বলি ‘আমরা তোমরা সবাই ভাল থাকব।’
(চলবে)